Controversial poster in the name of Dilip Ghosh at Ganga Ghat!: বাংলার রাজনীতিতে বিতর্ক আর চমক যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষত বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে কোনও ঘটনাই আর “অস্বাভাবিক” বলে মনে হয় না। একুশে জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসমাবেশে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যোগ দিতে পারেন—এই গুঞ্জন গত এক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক চায়ের আড্ডা, সর্বত্রই এই সম্ভাবনা ঘিরে ছিল প্রবল উত্তেজনা। যদিও শেষ পর্যন্ত দিলীপ ঘোষকে দেখা যায়নি শহীদ সমাবেশের মঞ্চে। বরং তিনি সেদিনই নিজের পুরনো ঘাঁটি খড়গপুরে দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। এই ঘটনায় জল্পনা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছিল, তবে সেই পুরনো বিতর্ককে নতুন করে জাগিয়ে দিল হালিশহরের গঙ্গার ঘাটে পড়া একটি পোস্টার, যা ফের উত্তাল করে তুলেছে রাজনীতির ময়দান।ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে, যেখানে গঙ্গার ঘাটে দেখা যায় একটি বিতর্কিত পোস্টার। সেই পোস্টারে লেখা রয়েছে, “যারা একুশে জুলাই দিলীপ ঘোষকে তৃণমূলে পাঠাচ্ছিল, তাদের এখানে ঝাঁপ দেওয়ার স্থান।” এই পোস্টার ঘিরে গোটা ব্যারাকপুর মহকুমায় রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, পোস্টারটি রাতের অন্ধকারে লাগানো হয়েছিল, যা সকালে স্থানীয়দের নজরে আসে। পোস্টারটি গঙ্গার ঘাটে লাগানো থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহলের পাশাপাশি ভয়ও তৈরি হয়েছে। অনেকেই একে “অত্যন্ত অপমানজনক” বলে অভিহিত করেছেন, কারণ এটি একজন বরিষ্ঠ নেতার প্রতি শুধু কটাক্ষ নয়, বরং রাজনৈতিক হিংসার ভাষায় একপ্রকার হুমকি।এই ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হালিশহর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পোস্টারটি খুলে ফেলে। তবে কে বা কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে, তা নিয়ে এখনও কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, “এটি খুবই স্পর্শকাতর একটি ঘটনা। গঙ্গার ঘাটের মতো জনবহুল এলাকায় এমন পোস্টার লাগানো গুরুতর অপরাধ। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।” তবে এখনও পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করেনি।স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এই ঘটনার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, “রাজনীতির এই নোংরামি আমরা চাই না। দিলীপ ঘোষ হোন বা অন্য কেউ—এই ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ কখনও কাম্য নয়।” আবার কেউ বলছেন, “বিজেপির ভিতরের কোন্দল এখন ঘাট পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। এ তো আর শুধু রাজনৈতিক মঞ্চের বিষয় নয়, এখন সেটা পথে ঘাটেও ফুটে উঠছে।” গঙ্গার ঘাটে নিয়মিত যাতায়াতকারী এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক বলেন, “আগে এই ঘাটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছিল, এখন রাজনীতি এসে সেটাও কেড়ে নিচ্ছে।”
এই পোস্টার বিতর্কের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা নিয়ে দুই শিবিরের অবস্থান একেবারেই বিপরীত। বিজেপির একাংশ এই ঘটনার দায় তৃণমূলের কাঁধে চাপানোর চেষ্টা করছে। তাঁদের বক্তব্য, “তৃণমূল দিলীপ ঘোষের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক ধারকে ভয় পেয়েই এমন নোংরা কৌশল নিচ্ছে।” যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, “এটা বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ। দিলীপ ঘোষের বিরোধী গোষ্ঠী, যারা তাঁর ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন, তারাই এই পোস্টার লাগিয়ে তাঁকে অপমান করার চেষ্টা করছেন।”বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনাটি অনেক বড় রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে গেল। দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কৌশল, বিজেপিতে তাঁর প্রভাব ও জনপ্রিয়তা এবং দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব—সবই যেন এই পোস্টারের ভাষায় উঠে এসেছে। তৃণমূলের শহীদ দিবসের মঞ্চে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন উঠছিল, তখন এই পোস্টার সেই বিতর্কে ঘি ঢেলে দিল বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যারাকপুরের মতো রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে এই ধরনের ঘটনা প্রশাসনিক দিক থেকেও যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
পুলিশ যদি দ্রুত অভিযুক্তদের চিহ্নিত না করতে পারে, তবে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। বিশেষ করে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে থাকে, তখন এমন ঘটনার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব মারাত্মক হতে পারে। এই পোস্টার ইস্যুকে সামনে রেখে বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও নতুন করে আলোড়ন তৈরি হতে পারে। যদি প্রমাণ হয় যে এই পোস্টারের নেপথ্যে বিজেপির কোনও গোষ্ঠী জড়িত, তাহলে দিলীপ ঘোষের অবস্থান আরও জোরালো হতে পারে, আবার একইসঙ্গে তাঁর দলে কিছুটা বিচ্ছিন্নতাও তৈরি হতে পারে।গঙ্গার ঘাটে লাগানো একটি পোস্টার আপাতদৃষ্টিতে ছোট ঘটনা মনে হলেও, এর অভিঘাত বড় এবং বহুমাত্রিক। রাজনীতিতে ব্যক্তিগত আক্রমণের যে প্রবণতা বাংলায় দিন দিন বাড়ছে, এই ঘটনাও তারই এক চূড়ান্ত উদাহরণ। দিলীপ ঘোষ একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক, যাঁকে ঘিরে নানা সময়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, এই ধরনের ঘটনায় রাজনীতির শালীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু পোস্টার তুলে ফেলা নয়, এর পেছনের পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নিজেদের মতভেদ থাকলেও, তাতে জনপরিসর ও জনমন ভীত না হয়, তা নিশ্চিত করা।