Continuous Rain:কালিম্পং পাহাড়ে সম্প্রতি অতি বৃষ্টির ফলে ডুয়ার্স অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মালবাজার ব্লকের লিস নদী ভাঙনের কারণে চান্দা কোম্পানি গ্রামসহ ওয়াসাবাড়ি চা বাগানের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রচুর বাড়ি এবং যানবাহন এখন জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসী নিজেরাই উদ্ধার কাজে নেমে পড়লেও জলের গতি এতই প্রবল যে তৎক্ষণাৎ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ব্লক লেভেল আধিকারিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন এবং যারা জলমগ্ন অবস্থায় ছিলেন তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করেছেন। এখনো পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাপ জানা যায়নি কারণ জল তীব্র গতিতে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এখনো অনেক মানুষ নিরাপদ স্থানে ঠাঁই নিতে পারেনি।
জলপাইগুড়ি: স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার বলেন, “জলের গতি এত বেশি যে আমরা কিছুই করতে পারছি না, শুধুমাত্র দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আমার বাড়ি সম্পূর্ণ জলের তলায় এবং আমাদের গাড়িগুলিও ভেসে গেছে।” চা বাগানের কর্মী মীনাক্ষী দাস জানান, “আমরা এত বড়ো দুর্যোগ আগে কখনো দেখিনি। আমাদের বসতবাড়ি এবং চা বাগানের অনেক অংশ জলের তলায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কি করবো তা বুঝতে পারছি না।”
এই বন্যা পরিস্থিতি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবাগুলির ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। বন্যার কারণে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং অনেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে জল ঢুকে গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এলাকার প্রশাসন দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণকার্যের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা সমীরণ বর্মন জানান, “আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি এবং প্রতিনিয়ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে।” স্থানীয় প্রশাসন বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে। তারা ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাহায্য’ এর সদস্য রূপম দত্ত জানান, “আমরা নিজেদের উদ্যোগে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য খাদ্য, পোশাক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করছি এবং বিতরণ করছি।”
এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে ডুয়ার্স অঞ্চলের অর্থনীতি বিশাল আকারে প্রভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চা বাগানগুলির ব্যাপক ক্ষতির কারণে এই অঞ্চলের শ্রমিকরা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দৈনিক আয়ের উপর এই বন্যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান, পাহাড়ি অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ফলে নিম্নাঞ্চলে বন্যার প্রবণতা বাড়ছে। এই ধরনের বন্যা পরিস্থিতি শুধু যে বর্তমানের সমস্যা সৃষ্টি করছে তা নয়, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, “পরিবেশের উপর মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বাড়ছে।”
সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুসারে, স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি একযোগে কাজ করে বন্যা দুর্গতদের সাহায্য করার চেষ্টা করছে। তবে, এই পরিস্থিতির সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন। পরিবেশের উপর মানুষের সদাচরণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই ধরনের বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।
ফের জলমগ্ন ডুয়ার্স। পাহাড়ে বর্ষার টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হল সমতলে। পাহাড় থেকে নেমে আসা জলে ভাসছে ডুয়ার্স। চরম দুর্ভোগের মুখে জলপাইগুড়ির মানুষ।