Sunday, April 13, 2025
Google search engine
Homeরাজনীতিঅন্যানো রাজনীতিপুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে কুলটিতে কংগ্রেসের বিক্ষোভ

পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে কুলটিতে কংগ্রেসের বিক্ষোভ

Congress protests in Kulti against police lathicharge:রবিবার সকাল থেকে কুলটি থানার নিয়ামতপুর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার পরিবেশ ছিল অন্যরকম, কারণ একদিকে যেমন ছিল গরমের দাপট, অন্যদিকে তেমনি ছিল মানুষের ক্ষোভ, যেটা ধীরে ধীরে বিক্ষোভে পরিণত হয়। কংগ্রেসের ডাকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি শুধুমাত্র স্থানীয় পর্যায়েই নয়, বরং রাজ্যজুড়ে এক বিশাল প্রতিধ্বনি তুলেছে, কারণ এর পেছনে যে কারণটা আছে সেটা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বরং হাজার হাজার শিক্ষকের জীবন, তাঁদের ভবিষ্যৎ, তাঁদের পরিবারের রুটি-রুজি জড়িয়ে আছে এতে। আসলে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি হঠাৎ বাতিল হয়ে যাওয়াটা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এক বড় ধাক্কা, এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর যে ধরনের লাঠিচার্জ করা হয়েছে তাতে যেন আরও ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কংগ্রেস সহ বহু সাধারণ মানুষ।

dc Cover trmgc6enmr9dsteqavkmpb2hg0 20231031204748.Medi

কুলটি ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সুকান্ত দাস নেতৃত্ব দেন এই বিক্ষোভে, যেটা শুরু হয় নিয়ামতপুরের বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে এবং শেষে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসে থামে। স্লোগান ওঠে—“শিক্ষক নিপীড়নের জবাব চাই,” “পুলিশি অত্যাচার চলবে না,” “চাকরি ফিরিয়ে দাও।” বিক্ষোভস্থলে দাঁড়িয়ে সুকান্ত দাস বলেন, “যেখানে শিক্ষক সমাজকে সম্মান দেওয়া উচিত, সেখানে সরকার তাঁদেরকে রাস্তায় নামিয়ে পুলিশের লাঠির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নেব না। রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নির্দেশেই আজকের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি।” এদিন বিক্ষোভের মধ্যেই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়, যেখানে তাঁরা পরিষ্কার জানান, শিক্ষক ছাঁটাই ও পুলিশি দমননীতি বন্ধ না করলে আগামী দিনে আন্দোলন আরও জোরালো হবে।

এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক শিক্ষক, যিনি নিজেও চাকরি হারিয়েছেন, জানান, “আমরা অনেকেই অনেক স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম। হঠাৎ করে চাকরি চলে যাওয়াটা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। তার উপর আবার আন্দোলনে নামলে পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে! এটা কোন গণতন্ত্র?” স্থানীয় বাসিন্দারাও এদিনের প্রতিবাদকে সমর্থন জানান। একজন দোকানদার বলেন, “এরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াত, এখন নিজেরাই পথে বসেছে। সরকারের উচিত এর দ্রুত সমাধান করা।” তবে পুলিশ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কুলটির এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল এবং কোনও গোলমালের খবর নেই। কিন্তু অতীতের যেসব বিক্ষোভে পুলিশি লাঠিচার্জ হয়েছে, তার ভিডিও ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যার ফলে সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। কংগ্রেস ছাড়াও বামপন্থী সংগঠনগুলিও এই শিক্ষক ছাঁটাই ইস্যুতে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা একদিকে যেমন শিক্ষাব্যবস্থার সংকট তুলে ধরছে, তেমনি সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ শ্রী অরিন্দম রায় বলেন, “যে কোনও সরকারের কাছে শিক্ষক সমাজ সম্মানের জায়গায় থাকেন। আর সেই সমাজ যদি লাঠির মুখে পড়ে, তাহলে সেটা সরকারের ব্যর্থতা। কংগ্রেস এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে ফের একটা রাজনৈতিক জমি তৈরির চেষ্টা করছে।” আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী? সেটা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার উপর। যদি সরকার দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে এই আন্দোলন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে, এবং আগামী দিনে আরও বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে।

WhatsApp Image 2022 04

বিশেষ করে যেহেতু এই ইস্যু শুধুই বেতন বা চাকরি সংক্রান্ত নয়, এটা সম্মান ও সামাজিক নিরাপত্তার ইস্যু, তাই তা জনমনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। অনেকেই বলছেন, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এত বড় সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে নেওয়া কি ন্যায্য ছিল? এবং যদি সত্যি কোনও অনিয়ম থেকেও থাকে, তবে দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যেত, সব চাকরি বাতিল করাটা কি সমাধান? এক শিক্ষক নেত্রী, মীনাক্ষী সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা চাই সরকার দ্রুত পুনর্বিবেচনা করুক, আর আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি মানবিক হোন। ছাত্ররা যেন পড়াশোনায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এবং শিক্ষকরাও যেন ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় না থাকেন।” সবমিলিয়ে, কুলটির এই বিক্ষোভ যেন একটা ছোট ছবি, যার পেছনে আছে বৃহত্তর এক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট। আগামী দিনে এই আন্দোলনের পথ কোন দিকে যাবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে এটা নিশ্চিত যে এই ইস্যু রাজ্যের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। ‘খবর বাংলা’ সবসময় এইরকম গুরুত্বপূর্ণ খবর নিয়ে পাশে থাকবে আপনাদের, এবং সত্য তথ্য তুলে ধরবে নিরপেক্ষভাবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments