Coal Minister Satish Chandra Dubey in Raniganj, a mining region: রানীগঞ্জ – খনি অঞ্চল হিসেবে একসময় দেশের অন্যতম পরিচিত নাম। কয়লা শিল্পের ইতিহাস, মজুরদের সংগ্রাম, শ্রমজীবী মানুষের জীবনকাহিনি — সবকিছু মিলিয়ে এক অদ্ভুত বাস্তবের কেন্দ্রবিন্দু এই এলাকা। আর সেই রানীগঞ্জের বুকেই ১১ জুন এক বিশেষ দিনে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হল, কারণ এদিন আসানসোল জেলা বিজেপি-র পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় “বিকশিত ভারতের অমৃতকাল – সেবা, সুশাসন ও গরিব কল্যাণের ১১ তম বর্ষ” উপলক্ষে এক বিশাল কর্মসূচি, যার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনি মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র দুবে। অনুষ্ঠানস্থল ছিল রানীগঞ্জের লায়ন্স ক্লাব, যেখানে সকাল থেকেই জমে উঠেছিল ভিড়, বাইক র্যালি আর উত্তেজনার আবহ। রানীগঞ্জের পাঞ্জাবি মোড় থেকে মন্ত্রীকে বাইক র্যালির মাধ্যমে বরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় সভাস্থলে, আর মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় দলীয় স্লোগান, উচ্ছ্বাস আর রাজনৈতিক আবেগের ছড়াছড়ি।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য, রবি কেসরী, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্য কমিটির সদস্য জিতেন্দ্র তিওয়ারি, বিজেপি নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী, সভাপতি সিং, পবন কুমার সিং, এবং কনভেনার ডঃ তুষার কান্তি ব্যানার্জি সহ অন্যান্য বিশিষ্টরা। উপস্থিত সকল অতিথিদের উত্তরীয়, ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন জেলা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিনের সভার মূল বক্তব্যে কয়লা মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র দুবে বলেন, “রানীগঞ্জ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনি অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যেভাবে এই অঞ্চলের অবকাঠামো ও শ্রমিক কল্যাণ উপেক্ষিত থেকেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এখন ‘অমৃতকাল’-এর এই অধ্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি খনি অঞ্চলের সমবিকাশ ঘটানোই আমাদের অঙ্গীকার।” তিনি আরও বলেন, “রানীগঞ্জের খনি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে কেন্দ্র সরকার নানাবিধ প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরিষেবা, আবাসন, পানীয় জল এবং সন্তানদের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দিকেও আমাদের দৃষ্টি রয়েছে।”এই বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি রাজ্য সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “কয়লা উত্তোলন ও শ্রমিক সুরক্ষায় কেন্দ্র যা করতে চাইছে, রাজ্য প্রশাসনের সহযােগিতা প্রায় নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করাটাই এখন জরুরি।” সভায় তিনি আসানসোল শিল্পাঞ্চলের পুরাতন কয়লাখনি এলাকাগুলিতে নতুন করে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুনর্গঠন ও পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনার কথাও বলেন। তিনি জানান, “ইসিএল-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একাধিক খনি পুনরায় চালু করার বিষয়ে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই প্রকল্প গ্রহণ করেছে।”রানীগঞ্জের মতো অঞ্চলে কয়লা শিল্পের সঙ্গে মানুষের জীবন সরাসরি যুক্ত। তাই এদিনের অনুষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেবায় একাদশ বর্ষ’ মানে শুধু একটি স্লোগান নয়, এটা হল প্রতিজ্ঞা, যে আমরা প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছব। রানীগঞ্জের খনি অঞ্চলের যারা প্রায় প্রতিদিন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য বাস্তবিক পরিবর্তনের সময় এখনই।”রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কর্মসূচি শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নয়, আগামী নির্বাচনের রণকৌশলের অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ রানীগঞ্জ-আসানসোল শিল্পাঞ্চল এলাকা বরাবরই বিজেপি এবং তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বিজেপি এখানে নতুন করে জমি তৈরি করতে চাইছে, আর এই অঞ্চলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সরাসরি উপস্থিতি ও প্রতিশ্রুতি সেই পরিকল্পনার দিকেই ইঙ্গিত করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে এক খনি শ্রমিক, রমেশ টুডু বলেন, “আমরা চাই যে আমাদের কাজের পরিবেশ ভালো হোক, সরকারি হসপিটালগুলোতে ওষুধ থাকুক, আর পেনশনের টাকা ঠিকমতো আসুক। আজ যা শুনলাম, তাতে একটু আশার আলো দেখছি।” আবার স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামলী পাল বললেন, “অনেক মন্ত্রী-নেতা আসেন, কথা বলেন, চলে যান। এবার যদি সত্যি কিছু হয়, তাহলে রানীগঞ্জের মতো জায়গায় মানুষ একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারবে।”পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেবা, সুশাসন ও গরিব কল্যাণ’-এর ১১ বছরের বার্তা নিয়ে বিজেপি এখন জোর কদমে ময়দানে। আর রানীগঞ্জকে ঘিরে মাটি তৈরি করার এই প্রচেষ্টা যে শুধু রাজনৈতিক নয়, তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভাষণে স্পষ্ট হয়েছে। কয়লাখনি কেন্দ্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক কাঠামো পুনর্গঠনের যে চিত্রপট কেন্দ্র তুলে ধরতে চাইছে, তা বাস্তবায়ন হলে রানীগঞ্জ আবার এক নতুন সম্ভাবনার দিক খুলে দিতে পারে। তবে সেই বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত হবে, আর রাজনৈতিক ভাষণের বাইরে তা কতটা কার্যকর হবে — সেটাই এখন দেখার।