Coach Mourinho also saw a yellow card for the laptop controversy:জোসে মৌরিনিও বর্তমানে তুরস্কের প্রিমিয়ার ফুটবল ক্লাব ফেরেনবাচের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। কিছুদিন আগেই আন্টালিয়াস্ফোরের বিরুদ্ধে ফেরেনবাচের একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল। ম্যাচটি খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চলছিল, যেখানে মৌরিনিওর দল প্রথমে এগিয়ে যায়। ফেরেনবাচের দ্বিতীয় গোল আসে ম্যাচের ৬৩তম মিনিটে। কিন্তু রেফারি গোলটিকে বাতিল করে দেন অফসাইডের কারণে। এখানে আরও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যখন VAR সিস্টেম দেখে সেই সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মৌরিনিও এবং তৎক্ষণাৎ রেফারির দিকে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
মৌরিনিওর এই প্রতিক্রিয়া কিছুটা হলেও অনভিপ্রেত ছিল, কারণ তাঁর মতো একজন অভিজ্ঞ কোচ সাধারণত এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম। ফুটবল জগতে তাঁর খ্যাতি এমন যে তিনি নিজের কৌশলগত পরিকল্পনা এবং দলের প্রত্যেকটি সদস্যের প্রতি তাঁর সূক্ষ্ম নজরের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে একাধিক বড় ক্লাবের কোচিং করিয়েছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে শুরু করে টটেনহ্যাম হটস্পার্স এবং সম্প্রতি ইতালির রোমা ক্লাবেও কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর আগের ক্লাব রোমাতে বেশিদিন টিকতে পারেননি এবং সেখানে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি যোগ দেন ফেরেনবাচেতে।

রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মৌরিনিওর এই প্রতিবাদ ফুটবল দুনিয়ায় নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করা কোচের দায়িত্বশীলতার পরিপন্থী। আবার অন্যদিকে মৌরিনিওর সমর্থকরা বলছেন, তাঁর প্রতিক্রিয়া সঠিক ছিল, কারণ তিনি বরাবরই বিচারকক্ষের বাইরে থেকেও অন্যায্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পিছপা হননি।
এটি নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটিতেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, তুরস্কের ফুটবল প্রেমীরা ব্যাপক আলোচনা চালাচ্ছেন এই বিষয়ে। অনেকে মনে করেন, VAR সিস্টেমের সিদ্ধান্ত সাধারণত নির্ভুল হলেও, মাঝে মাঝে তা বিতর্কিত হতে পারে, এবং এই ক্ষেত্রে এমনই একটি মুহূর্ত দেখা গেছে। অন্যদিকে, ফেরেনবাচের সমর্থকরা তাঁদের প্রিয় দলের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ অন্যায্য বলে মনে করছেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এই ঘটনার বিশদ ব্যাখ্যা আসছে, যেখানে মৌরিনিওর প্রতিক্রিয়া এবং রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌরিনিওর প্রতিক্রিয়া তাঁর দীর্ঘ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাবের প্রতিফলন। তিনি সব সময় দলকে সামনে রাখতে চান এবং কোনও অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পিছুপা হন না। তবে এ ধরনের আচরণ মাঠে তাঁর ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত দিয়েছেন অনেকে। হলুদ কার্ড পাওয়ার এই ঘটনা তাঁর ভবিষ্যৎ কোচিং ক্যারিয়ারে এক ধরনের অস্বস্তিকর অধ্যায় হয়ে থাকতে পারে।
মৌরিনিওর সমর্থকরা অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে চিন্তিত নন। তাঁদের মতে, মৌরিনিও সব সময়ই এমনই ছিলেন। তাঁর এমন প্রতিক্রিয়া তাঁকে আরও বেশি প্রভাবশালী এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো একজন কোচ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, এই ঘটনাটি মৌরিনিওর জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যেখানে তিনি আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসবেন এবং ফেরেনবাচের জন্য আরও সাফল্য বয়ে আনবেন।
অন্যদিকে, তুরস্কের ফুটবল ফেডারেশন এই বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে। মৌরিনিওর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে কি না, তা নিয়ে আলোচনাও চলছে। ফুটবল ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তার মতে, “আমরা কোনও কোচের দ্বারা এ ধরনের আচরণ মেনে নিতে পারি না, রেফারির সিদ্ধান্ত সর্বদাই চূড়ান্ত এবং তা মেনে চলা সকলের কর্তব্য।”
তবে এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে, মৌরিনিওর বিরুদ্ধে আরও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না। তাঁর দল অবশ্য ওই ম্যাচটি জিতে যায় ২-০ গোলে। কিন্তু ম্যাচ জিতেও বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন কোচ। মাঠে রেফারির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর ঘটনায় তাঁকে নিয়ে সমালোচনা হলেও তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি এবং খেলার প্রতি নিবেদন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি।

মৌরিনিও তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে বহু বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু সব সময়ই তিনি তাঁর নিজস্ব স্টাইল বজায় রেখেছেন। এই ঘটনাও হয়তো তাঁর ক্যারিয়ারের উপর একটি ছাপ রেখে যাবে, কিন্তু তা তাঁকে পরবর্তীতে কোনও বড় ম্যাচ জিততে বা আরও সাফল্য অর্জন করতে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
সমস্ত ঘটনার শেষে এটা বলা যায়, এই ধরনের মুহূর্তগুলো ফুটবলের এক বিশেষ দিক উন্মোচিত করে। যেখানে খেলোয়াড় বা কোচদের মানবিক প্রতিক্রিয়া, তাঁদের আবেগ এবং প্রতিটি মুহূর্তের গুরুত্ব ফুটে ওঠে। মৌরিনিও হয়তো হলুদ কার্ড দেখেছেন, কিন্তু তাঁর ফুটবল মাঠে এবং এর বাইরে ব্যক্তিত্ব আরও একবার জ্বলজ্বল করেছে।