CITU march in Sanktoria during Bangla Bachao Yatra: কোচবিহার থেকে কামারহাটি পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা বাংলা বাঁচাও যাত্রা ইতিমধ্যেই রাজ্যের নানা প্রান্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গণতান্ত্রিক অধিকার, শিল্প পুনরুজ্জীবন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের প্রশ্নে এই যাত্রা মানুষের মধ্যে নতুন বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বৃহস্পতিবার আসানসোল মহকুমার কুলটির সাঁকতোড়িয়ায় সিটুর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক বিশাল পদযাত্রা। সকালে সুভাষ মোড় থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রা এলাকাজুড়ে তৈরি করে উচ্ছ্বাস, উত্তেজনা এবং দাবির সুর।বৃহস্পতিবার সকালেই সাঁকতোড়িয়ার সুভাষ মোড় লাল পতাকা, ব্যানার আর স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে।
শ্রমিক, ছাত্র, যুব এবং সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছিল পদযাত্রা ঘিরে। সিটুর নেতৃত্বে আয়োজিত এই কর্মসূচি শুরু হতেই রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে “বাংলা বাঁচাও”, “শিল্প বাঁচাও”, “অধিকার বাঁচাও” স্লোগানের জোয়ার।পদযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র কাতর বার্তা বহন করা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগসূত্রকে আরও দৃঢ় করা। সাঁকতোড়িয়া থেকে শুরু হয়ে এটি অগ্রসর হবে চিত্তরঞ্জনের দিকেই। পথ চলতে চলতেই কর্মীরা স্থানীয় মানুষ, শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে শুনবেন তাঁদের সমস্যা, উদ্বেগ এবং প্রত্যাশা—এই ছিল সংগঠনের ঘোষিত লক্ষ্য।এই কর্মসূচি নিয়ে সরকার পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, স্থানীয় প্রশাসন শান্তিপূর্ণভাবে যাত্রা সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি রেখেছিল।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের এই পদযাত্রা গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে নতুন মাত্রা দেবে, এবং মানুষের কণ্ঠকে পৌঁছে দেবে সরাসরি শাসনব্যবস্থার কাছেও।স্থানীয় মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, এলাকায় শিল্প ও কর্মসংস্থানের অভাব দীর্ঘদিনের সমস্যা। চিত্তরঞ্জন শিল্পাঞ্চলের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে তাঁরা আশাবাদী। একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “এইসব যাত্রা-আন্দোলন যদি সত্যিই আমাদের সমস্যার কথা বলে সরকারের কাছে পৌঁছাতে পারে, তবেই লাভ।”
একজন শ্রমিকের কথায়, “কাজের অভাব, নিরাপত্তাহীন পরিবেশ — বহুদিন ধরেই আমরা লড়ছি। আজকের এই পদযাত্রা সেই লড়াইয়ের শক্তি বাড়ায়।”সাঁকতোড়িয়ার এই পদযাত্রা শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়—এটি রাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের সামাজিক উদ্বেগের প্রতিচ্ছবি। শিল্প পুনরুজ্জীবন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং শ্রমিক অধিকারের প্রশ্ন রাজ্যের বহু পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
সিটুর দাবি যে এই যাত্রা এইসব সমস্যাকে সামনে আনে, তা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে নড়াচড়া দেবে।
পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।আয়োজকদের পরিকল্পনা—মাঠ পর্যায়ে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়ানো। পথ চলার প্রতিটি ধাপে স্থানীয় মানুষের মত, অভিযোগ এবং দাবি সংগ্রহ করে তা বৃহত্তর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। চিত্তরঞ্জনে পৌঁছনোর পর এই তথ্যসমূহ নিয়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সামনে নির্বাচন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সময়সীমা এলে এই পদযাত্রার গুরুত্ব আরও বাড়তে পারে।সাঁকতোড়িয়ার এই পদযাত্রা মানুষের দাবিকে নতুন উচ্চতায় তুলেছে। লাল পতাকার সমুদ্র, স্লোগানের ঢেউ এবং মানুষের ভিড়—সব মিলিয়ে দিনটি হয়ে উঠেছে আন্দোলনের শক্তির প্রতীক। কোচবিহার থেকে কামারহাটি পর্যন্ত চলা ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’ এবার আরও জোরালোভাবে পৌঁছে গেল শ্রমিকাঞ্চল সাঁকতোড়িয়ার রাস্তায়।
মানুষের অধিকার, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের দাবিতে এই পদযাত্রা যে নতুন বার্তা দিল, তা আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলেই অনুমান।



