CISF personnel killed in gunfight with miscreants: সালানপুর থানার রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত ডোমদোহা উপরডাঙা এলাকা, যেখানে সাধারণত গ্রাম্য পরিবেশে মানুষজন দিনের শেষে একটু শান্তিতে দিন কাটাতে চান, সেই জায়গাটাই হঠাৎ করে কেঁপে উঠল গুলির শব্দে। মাথা ফাটিয়ে দিল দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলি, আর সেই গুলির নিশানায় পড়লেন একজন সাহসী সিআইএসএফ কর্মী—সুনীল পাসওয়ান, বয়স মাত্র ৪৫ বছর। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের মেহিজাম এলাকার বাড়ুই পাড়ায়। পরিবারে স্ত্রী, দুই সন্তান—সব স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেল মাত্র এক মুহূর্তে। জানা গেছে, তিনি তাঁর নিজের কেনা জমির খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন ওই সীমান্তবর্তী এলাকায়, আর সেখানেই অপেক্ষা করছিল দুর্বৃত্তদের গুলি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কে বা কারা আগে থেকেই ওঁত পেতে ছিল। সুনীলবাবু জমির অবস্থান দেখতে গিয়ে আচমকা গুলিবিদ্ধ হন, মাথায় গুলি লাগার কারণে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুলির শব্দ শুনে ছুটে আসেন, খবর যায় পুলিশে। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা হাসপাতালে, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের সূত্রে খবর, ঘটনাস্থল থেকে একটি বাইক উদ্ধার হয়েছে, সঙ্গে কিছু ভাঙা মদের বোতল। যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের পিছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা কিংবা জমি সংক্রান্ত কোনও পুরনো বিবাদ জড়িত থাকতে পারে। রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, ফরেনসিক টিমও ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করেছে। এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এই অঞ্চলটা সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানে প্রায়ই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তবে সিআইএসএফ কর্মীর মৃত্যু পুরো বিষয়টিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হরিনাথ মাহাতো বলেন, “আমরা জানতাম উনি একজন সিআইএসএফ-এর মানুষ। খুব ভালো ব্যবহার ছিল, মাটির মানুষ বলতে যা বোঝায় তাই। জমির জন্য এসেছিলেন, কে জানত এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে!” ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছে গোটা এলাকা। মানুষজন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘরে ঢুকে পড়ছেন। এলাকার এক গৃহবধূ জানালেন, “এখানে এমন খুনখারাপি আগে কখনও দেখিনি, এখন তো বাচ্চাকাচ্চা নিয়েও ভয় হচ্ছে বেরোতে।” পুলিশ এখন বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত চালাচ্ছে—সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, মৃতের ফোনকলের রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, এবং তাঁর জমি সংক্রান্ত নথিপত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি, যার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সিআইএসএফ-এর পক্ষ থেকেও এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “আমরা আমাদের একজন সাহসী সহকর্মীকে হারালাম। যারা এই নির্মম ঘটনার পেছনে রয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” রাজ্য সরকারের তরফ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তবে পরিবার এখন শুধুই বিচার চায়। সুনীলবাবুর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ও তো ছুটিতে বাড়ি এসেছিল, ভাবতেও পারিনি ও আর ফিরবে না। আমাদের কী হবে এখন?” ঘটনা আরও গভীর হয় যখন শোনা যায়, এই জমির জন্য বহুদিন ধরেই অনেকে নজর রেখেছিল, এবং সুনীলবাবু জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অনেকের রাগের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। তবে এভাবে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা, তাও একজন সরকারি কর্মীকে—এটা শুধু একটি খুন নয়, বরং আইনশৃঙ্খলার উপর একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন। বিশেষ করে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অপরাধ প্রবণতা আগেও আলোচনায় এসেছে, কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নজরদারির অভাবে অপরাধীরা দিনের পর দিন সাহসী হয়ে উঠেছে।

এই ঘটনার পর রাজ্য প্রশাসনের তরফে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সালানপুর থানার ওসি জানান, “আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। তদন্ত দ্রুত এগোচ্ছে। খুব শীঘ্রই দোষীরা ধরা পড়বে।” আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে হলে শুধু পুলিশের অভিযান নয়, প্রয়োজন সমাজেরও সচেতনতা এবং সরকারের আরও কড়া মনোভাব। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার যে ভরসা ক্ষয়ে চলেছে, তা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতেই হবে। কারণ, একজন সাধারণ মানুষ যদি নিজের জমি দেখতে গিয়ে প্রাণ হারান, তবে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা শুধু যুক্তিসঙ্গতই নয়, বরং প্রকট বাস্তব। খবর বাংলার পক্ষ থেকে শহিদ সুনীল পাসওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে এবং তাঁর পরিবার ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানানো হচ্ছে। তাঁর এই মৃত্যু যেন শুধু সংখ্যায় আরেকটি ঘটনা না হয়ে থেকে যায়, বরং প্রশাসনের কাছে এটি হয়ে উঠুক এক কঠিন চেতাবনি।