Tuesday, August 5, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যত্রাণ নিতে গিয়েছিল শিশুটি, চোখে গুলি ছুড়ল ইসরায়েলি সেনারা

ত্রাণ নিতে গিয়েছিল শিশুটি, চোখে গুলি ছুড়ল ইসরায়েলি সেনারা

Child shot in the eye by Israeli soldiers while going to get relief:একটানা সংঘর্ষ, ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর ছায়া যেখানে প্রতিদিনের বাস্তবতা। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের উপর বিশেষ করে শিশুদের জীবনে রেখে চলেছে ভয়ানক দাগ। যুদ্ধক্ষেত্রের প্রান্তে যারা, তাদের মধ্যে সবচেয়ে অসহায় হল শিশুরা—না আছে প্রতিরক্ষা, না আছে আশ্রয়। এই যুদ্ধকালীন দুর্দশার মাঝেই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা, যা মানবতার সমস্ত সীমা পেরিয়ে গেছে।১৫ বছর বয়সী এক কিশোর—আবদুল রহমান আবু জাজার, তার পরিবারকে খাবার জোগাড় করার তাগিদে রাতের আঁধারে ত্রাণের খোঁজে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু ত্রাণ নয়, ফিরে এল রক্তাক্ত দেহে, গুলিবিদ্ধ চোখে। গাজার ভগ্নস্তূপের ভিতরে এই এক একটি গল্প যেন মানবসভ্যতার বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।আবদুল রহমান আবু জাজারের কাহিনী শুরু হয় এক ব্যাকুল সন্ধ্যায়। গাজার একটা অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে, যেখানে দিনের পর দিন ত্রাণ পৌঁছায় না, পরিবারে ছিল না একটুও খাবার। সেই অনাহারের যন্ত্রণায় ভাইবোনদের দিকে তাকিয়ে আর চুপ করে থাকতে পারেনি সে। রাত প্রায় ২টা নাগাদ বাইরে বেরিয়ে পড়ে কিছু খাবারের খোঁজে। তখন গাজার কোনও একটি এলাকা দিয়ে রুটিন টহলে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।আবদুল জানায়, “আমি শুধুই খাবারের জন্য গিয়েছিলাম। ঘরে একটুও কিছু ছিল না।আমি, আমার ভাই-বোনদের কিছু এনে দিতে চেয়েছিলাম।” সেই ছোট্ট কিশোর কি জানত, তার সেই সাহসী পদক্ষেপ তাকে চিরজীবনের অন্ধকারে ডুবিয়ে দেবে?সে জানায়, একটি গুদামের কাছাকাছি পৌঁছতেই ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে। প্রথম গুলিটি তার বাঁ চোখে লাগে। কিন্তু এখানেই থামেনি।

আহত অবস্থাতেই সে পড়ে যায়, অথচ গুলি চালানো থেমে থাকেনি। একাধিক গুলি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়, যার অনেকগুলি তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।এই পুরো ঘটনা ঘটে একেবারে অরক্ষিত অবস্থায়, কোনো অস্ত্র হাতে ছিল না আবদুলের, এমনকি কোনো প্রতিরোধও করেনি সে। কেবলমাত্র বেঁচে থাকার সংগ্রামে বেরোনো একজন কিশোরকে এমনভাবে নিশানা করা যে কোনও যুদ্ধনৈতিকতা এবং মানবাধিকারের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও সরাসরি বিবৃতি এখনও দেওয়া হয়নি। অতীতে যেভাবে সেনা অভিযানে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ‘দুঃখজনক কিন্তু আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা’ বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হত, এবারের ক্ষেত্রেও হয়ত তাই হবে—কিন্তু এই যুক্তি কি একজন কিশোরের চোখে গুলি ছোড়ার জন্য যথেষ্ট?জাতিসংঘের শিশু অধিকার সংক্রান্ত সংস্থা ইউনিসেফের পক্ষ থেকে এমন ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়েছে। ইউনিসেফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যুদ্ধক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার, আহত করা বা হত্যা করা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের শামিল।”গাজার স্থানীয়রা বলছেন, এমন ঘটনা এখন নতুন কিছু নয়। খাবারের জন্য বেরিয়ে পড়লেই প্রাণ হাতে করে ফিরতে হয়। আবদুলের পরিবার জানান, তাঁরা এখন চিকিৎসার খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন। তার বাবা বলেন, “আমার ছেলে তো কোনও অপরাধ করেনি। সে শুধু একটু খাবার আনতে গিয়েছিল।

ezgif 5c54fa518822db 5cfaf6b6d8c1f4b76b6601e0a7b12418

এখন সে এক চোখে কিছুই দেখতে পায় না। এটা কি ন্যায়বিচার?”একজন প্রতিবেশী বলেন, “এই ঘটনাই প্রমাণ করে আমাদের জীবন কতটা অমূল্যহীন হয়ে উঠেছে। শিশুরাও এখন শত্রু বলে বিবেচিত হচ্ছে।”এই ঘটনায় আবারও উঠে আসে গাজার শিশুরা কী ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বেঁচে আছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজায় নিহত বা আহত শিশুদের সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, শিশুদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। অথচ বাস্তবে ঘটছে ঠিক উল্টো।আবদুলের চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়া শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক অমানবিকতার প্রতীক, যা বিশ্ববিবেককে প্রশ্ন করে—এই যুদ্ধ কী আদৌ ন্যায্য? আর কত শিশু এভাবে রক্তাক্ত হবে?আবদুল এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা বলছেন, তার বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসা ও মানসিক ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হবে। তার মতো আরও অনেক শিশু বর্তমানে একই পরিস্থিতির শিকার, যাদের কোনও সুরক্ষা নেই, কোনও ভবিষ্যৎ নেই।আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উচিত, যুদ্ধরত অঞ্চলগুলোতে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। এমনকি সরাসরি তদারকি এবং রিপোর্টিং ব্যবস্থাও চালু করা প্রয়োজন যাতে এই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত ও প্রতিরোধ করা যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments