Friday, September 5, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসমুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফর ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে

মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফর ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে

Chief Minister’s visit to Birbhum in full swing:-বীরভূম জেলায় যেন এখন শুধু একটাই শব্দ ঘুরে বেড়াচ্ছে—“মুখ্যমন্ত্রী আসছেন”! আর সেই খবরে গোটা জেলার প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক মহলে লেগেছে তীব্র আলোড়ন। একদিকে প্রশাসনিক ব্যস্ততা, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংগঠনের তৎপরতা—সবমিলিয়ে এখন যেন গোটা বীরভূম একজোট হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের জন্য। জানা গেছে, আগামী ২৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী বীরভূম সফরে আসছেন এবং তার আগেই ২৭ জুলাই রয়েছে নানুর শহীদ দিবস—যা প্রতি বছর তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এক ঐতিহাসিক এবং আবেগঘন রাজনৈতিক বার্তা বহন করে। ফলে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই দলের কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ, অর্থাৎ ২৪ জুলাই, বোলপুরে আয়োজিত হচ্ছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির জরুরি বৈঠক। যদিও এই বৈঠক পূর্বনির্ধারিত ছিল ২৬ জুলাই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে তা আগেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিকেল ৪টা থেকে বোলপুরের জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে এই বৈঠক বসতে চলেছে যেখানে উপস্থিত থাকবেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব, সাংসদ অসিত মাল, বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পর্যবেক্ষক সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। কারণ, একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের ভিত শক্ত করতে এবং অন্যদিকে নানুর শহীদ দিবস ঘিরে বিরোধীদের মোকাবিলা করতেই এবার দল আরও সজাগ ও সংগঠিতভাবে মাঠে নামছে। শহীদ দিবস মানেই তৃণমূলের কাছে রাজনৈতিক স্মৃতিচারণার দিন, যেখানে নানুরের ১১ জন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এই দিনটিকে সম্মানের সঙ্গে পালন করা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহীদ দিবসের পরের দিন মুখ্যমন্ত্রীর সফর হওয়ায় একদিকে যেমন কর্মীদের মনোবল বাড়বে, অন্যদিকে শাসকদলের শক্তি প্রদর্শনের একটি বড় মঞ্চে পরিণত হবে এই সফর। তবে শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, প্রশাসনিক দিক থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী এদিন জেলার একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখবেন, নতুন কিছু প্রকল্পের ঘোষণা হতে পারে এবং বিশেষ করে বীরভূমের মহাকুমাগুলোর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে সূত্রের খবর।

118538 lvagmntbgt 1556505602

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোলপুর, সিউড়ি, লাভপুর ও রামপুরহাট মহকুমা থেকে ইতিমধ্যেই দলে দলে কর্মী-সমর্থকরা যোগ দিতে শুরু করেছেন বোলপুরের এই কোর কমিটির বৈঠকে। রাস্তাঘাট, হোটেল, স্থানীয় পরিষেবা সব জায়গাতেই প্রস্তুতি চোখে পড়ার মতো। বোলপুর শহরজুড়ে বড় বড় পোস্টার, ব্যানার, হোর্ডিংয়ে ছেয়ে গেছে “দিদি আসছেন” বার্তায়। স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী সঞ্জয় হাজরা জানান, “নানুর শহীদ দিবস তো আমাদের কাছে আবেগের বিষয়। তারপরে আবার দিদির সফর। এবার এই সফর থেকেই আসন্ন পঞ্চায়েত ও বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে দল কী বার্তা দিতে চায়, তা অনেকটাই স্পষ্ট হবে।” অন্যদিকে, বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে প্রতিটি দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।জানা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানুর শহীদ দিবসের স্মরণসভায় উপস্থিত না থাকলেও সফরের পরদিন নানুরের কয়েকজন শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন। পাশাপাশি শহরের কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং কিছু স্থায়ী উন্নয়নমূলক কাজের শুভারম্ভ করার কথাও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সফরে। জেলা স্বাস্থ্য ভবনের আধুনিকীকরণ, নতুন টেক্সটাইল হাব সংক্রান্ত ঘোষণা এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্য বিশেষ ভর্তুকিযুক্ত যন্ত্রপাতি বিতরণের কথাও উঠে এসেছে প্রশাসনিক মহলের থেকে।

যদিও বিজেপি এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এই সফরকে রাজনৈতিক প্রচার হিসেবে চিহ্নিত করে সমালোচনার পথ বেছে নিয়েছে। বিজেপির জেলা নেতা বিবেকানন্দ পাল বলেন, “প্রশাসনিক সফরের নামে আসলে এটা একপ্রকার দলীয় সভাই। তৃণমূল রাজনীতিকে প্রশাসনের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে।” তবে তৃণমূলের পালটা বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নমূলক কাজ করতে চান। মানুষের সুবিধার জন্যই তাঁর এই সফর। এটা রাজনীতি নয়, এটা জনসেবা।”রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই তৃণমূল রাজ্য জুড়ে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সফর বাড়াতে চাইছে। বিশেষ করে বীরভূমের মতো জেলায় যেখানে প্রশাসনিক পরিকাঠামোর পাশাপাশি রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছেই, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সফর গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Kajal sheikh

এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যেও উৎসাহের অন্ত নেই। একাধিক সাধারণ মানুষ বলছেন, “দিদি এলেই এলাকার উন্নয়নের কাজগুলো গতি পায়। তাই আমরা মুখিয়ে রয়েছি তাঁর অপেক্ষায়।” বীরভূমেরই এক স্কুলশিক্ষক দেবাশীষ সাহা বলেন, “পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে স্কুল, হাসপাতাল, গ্রামীণ সড়ক—সব কিছুরই অবস্থা বদলাচ্ছে দিদির সরকারের সময়ে। ওঁর সফর মানেই নতুন কিছু উন্নয়নের বার্তা।”সব মিলিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বীরভূম সফর শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক পরিদর্শন নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক বার্তা, সংগঠনের কৌশল নির্ধারণ এবং জেলার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখন দেখার বিষয়, এই সফরের পর জেলা তথা রাজ্য রাজনীতির ময়দানে কতটা নতুন গতিপথ তৈরি হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments