Chief Minister to visit Jhargram: ঝাড়গ্রাম শহরে এখন গরম রাজনীতি, টানটান উত্তেজনা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলছে সাজ সাজ রব, পোস্টার-ব্যানার টাঙানোর তোড়জোড়, দলীয় কর্মীরা ব্যস্ত প্রস্তুতিতে, আর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল কৌতূহল—কারণ, এবারের ঝাড়গ্রাম সফরে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা ভাষা নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রেক্ষাপটে তাঁর এই সফর শুধু একটি প্রশাসনিক কর্মসূচি নয়, বরং এক গভীর রাজনৈতিক বার্তা, এক প্রকার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও বটে। আগামী ৬ ও ৭ আগস্ট, দু’দিনের এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল এলাকায় ভাষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব তুলে ধরবেন বলে খবর। সূত্র অনুযায়ী, বীরভূমের পর এবার জঙ্গলমহলের মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি বিজেপির “বাংলা বিরোধী” মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করতে চলেছেন। বিশেষ করে রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে বাংলা ভাষার প্রাধান্য নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তারই প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঝাড়গ্রাম সফরকে শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, এক ধরনের “ভাষা আন্দোলনের নবপ্রকাশ” হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে ঝাড়গ্রামের প্রশাসনও এখন চরম ব্যস্ততায়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জনসভা মঞ্চ নির্মাণ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সব কিছুর ওপর রাখা হয়েছে বিশেষ নজর। জঙ্গলমহলের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আসবেন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে, তাঁর কথা শুনতে। তাই নিরাপত্তার পাশাপাশি, ভিড় সামলানোর ব্যবস্থাও তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, ৬ আগস্ট দুপুরে তিনি
ঝাড়গ্রাম শহরে পৌঁছবেন এবং স্থানীয় প্রশাসনিক ভবনে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করবেন জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের সঙ্গে। আলোচনার মূল বিষয় হতে চলেছে—জঙ্গলমহলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আদিবাসী উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন, রাস্তা-ঘাট ও পানীয় জলের সমস্যা। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, জেলাশাসক, এসপি সহ একাধিক আধিকারিক। এরপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থেকে স্থানীয় শিল্পীদের কাজকে সম্মানিত করবেন। ৭ আগস্ট সকালে তিনি ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলার তৃণমূল নেতৃত্বকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের আগেই এই বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। আর সেদিন বিকেলে ঝাড়গ্রামের রাজ কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষা-রক্ষার মিছিল ও জনসভা। ভাষার সম্মান নিয়ে যে লড়াই, তা যেন সোজা মাটিতে পৌঁছে যায়—এই উদ্দেশ্যেই মমতা এই জনসভায় ভাষা নিয়ে তাঁর বার্তা স্পষ্ট করতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিজেপির পক্ষ থেকে বাংলার প্রশাসনিক ব্যবস্থায় হিন্দি ও ইংরেজির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব ঘিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন, “বাংলা ভাষার অসম্মান আমরা কখনও বরদাস্ত করব না। বাংলার মানুষ, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার ভাষাই আমাদের গর্ব।” এই বক্তব্যই তিনি আরও জোরালোভাবে তুলে ধরবেন ঝাড়গ্রামের জনসভায়। ঝাড়গ্রামের সাধারণ মানুষও মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে উৎসাহে ভরপুর। স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা বীথিকা মাহাতো বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় আমাদের পাশে থেকেছেন। আমরা আশাবাদী, এবারও আমাদের সমস্যার কথা শুনবেন। ভাষা নিয়েও যেটা হচ্ছে, সেটা খুব কষ্টের, কারণ আমরা বাংলার মানুষ, বাংলা ভাষাই আমাদের আত্মা।” ঝাড়গ্রাম শহরের ব্যবসায়ী রমেশ সেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে আমাদের বক্তব্য শুনবেন—এটাই তো বড় পাওয়া। ভাষার কথা বলছেন উনি, এটা দরকার ছিল। আজকাল তো অনেকে বাংলা বলতেও লজ্জা পায়।” জঙ্গলমহল রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। একসময় মাওবাদী অধ্যুষিত এই অঞ্চল এখন উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে—বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল, গ্রামীণ রাস্তা—এইসব নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বহু মানুষ তাঁদের অভাব অভিযোগ জানাতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর সেই অভাব-অভিযোগ শোনার এবং সমাধান খোঁজারই একটি সুযোগ। এছাড়া, তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রামে শক্ত জমি গড়ে তোলার লক্ষ্যেও এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সামনেই পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন, তার আগে সংগঠনকে ঝালিয়ে নেওয়া, কর্মীদের মনোবল বাড়ানো ও বিরোধী দলগুলিকে বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই সফর বড় ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন দলের একাধিক নেতা। মমতার সফর মানেই সর্বস্তরে আলোড়ন। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাষার আবেগ। ফলে জঙ্গলমহল আবারও মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে শুনবে বাংলা ভাষার মর্যাদার কথা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব আর রাজনৈতিক প্রতিরোধের শক্তি। এই সফর শুধু প্রশাসনিক কিংবা রাজনৈতিক নয়, বাংলার মাটিতে, বাংলার ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার এক প্রতীকী বার্তা—এইভাবেই তা মনে রাখবে আগামী দিন।Chief Minister to visit Jhargram