Chief Minister is coming to Jhargram, preparations are in full swing: আগামী ৬ এবং ৭ আগস্ট, ঝাড়গ্রামের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হতে চলেছে। কারণ, এই প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পা রাখতে চলেছেন ঝাড়গ্রামের পথে পদযাত্রার মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে এই জেলা উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নানা পর্ব পার করে আসছে। একসময় মাওবাদী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে এখন শাসকদলের প্রভাব স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রীর আগমন এই প্রেক্ষিতে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশব্যাপী বাঙালিদের উপর তথাকথিত অত্যাচারের প্রতিবাদ ও বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান— যা দু’দিনব্যাপী সফরকে করে তুলছে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সামাজিকভাবে সংবেদনশীল।৬ আগস্ট ঝাড়গ্রামে পৌঁছাবেন মুখ্যমন্ত্রী। ঐ দিন বিকেলেই পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকা থেকে শুরু হবে একটি দীর্ঘ পদযাত্রা, যা প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে শেষ হবে শহরের প্রাণকেন্দ্র পাঁচমাথা মোড়ে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি মঞ্চ, যেখানে তিনি ভাষণ দেবেন। শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, পাশ্ববর্তী মেদিনীপুর, খড়গপুর, ঘাটাল থেকেও আসবেন হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক। স্থানীয়দের অনুমান, একাধিক বাস ও ট্রেনভর্তি মানুষ এই মিছিলে যোগ দেবেন। এই মিছিল হবে কেন্দ্র সরকারের বাঙালি বিদ্বেষী নীতির বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ।
৭ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবসের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে। এই বছর চারদিন ধরে চলবে এই অনুষ্ঠান, যার সূচনার মূল দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর কাঁধেই। সেই উপলক্ষ্যে স্টেডিয়ামে চলছে স্টেজ নির্মাণ, শোভাযাত্রা প্রস্তুতি ও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মহড়া।রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল ও সভা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, তার জন্য প্রশাসন তৎপর। ঝাড়গ্রাম শহরের প্রতিটি রাস্তায় চলছে রাস্তা মেরামতের কাজ। জঞ্জাল মুক্ত করতে ঝড়ের গতিতে চলছে সাফাই অভিযান। পদযাত্রার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাস্তার দু’পাশ ঘিরে ফেলা হচ্ছে। জেলা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের আধিকারিকেরা বারবার এসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন।ঝাড়গ্রামের বাসিন্দারা মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে স্বাগত জানাচ্ছেন। স্থানীয় দোকানদার থেকে শুরু করে টোটো চালক— সকলেরই মুখে একটাই কথা, “মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে থেকে দেখা যাবে, এটাই তো বড় পাওয়া!” অনেকে বলছেন, “এই প্রথমবার আমাদের এলাকায় এত বড় মিছিল হচ্ছে, তাও মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাঁটবেন— এটা আমাদের জন্য গর্বের।” অন্যদিকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের অনেকে বলছেন, “বিশ্ব আদিবাসী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে অনুষ্ঠান করবেন, এটা আমাদের আত্মমর্যাদার বিষয়।”রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে এই সফরের গুরুত্ব অনেক। লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার তৃণমূল সংগঠনের শক্তি মজবুত করার কৌশল হিসাবে দেখা হচ্ছে এই সফরকে। অন্যদিকে সামাজিক দিক থেকে, মুখ্যমন্ত্রীর আদিবাসী দিবস উদযাপন একাধিক বার্তা দিচ্ছে— রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়া ও জনসংযোগে জোর দেওয়াও এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য।

এই সফরের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একদিকে কর্মীদের উজ্জীবিত করা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশাসনের ভাবমূর্তি তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী যে বার্তা দেবেন, তা রাজ্যের বাইরেও আলোচনার বিষয় হতে পারে। এছাড়া, কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদী অবস্থান আরও দৃঢ় হয়ে উঠতে পারে এই সফরের মাধ্যমে।ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর আগমন শুধুমাত্র এক প্রশাসনিক সফর নয়—এ এক রাজনৈতিক বার্তা, সামাজিক সংহতির উৎসব এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের উদযাপন। এই সফর ঘিরে যেমন প্রস্তুতির বহর, তেমনি সাধারণ মানুষের উৎসাহও চোখে পড়ার মতো। প্রশাসনের চোখেমুখে সতর্কতা, আর মানুষের চোখে মুখে প্রতীক্ষা। ৬ ও ৭ আগস্ট— এই দু’দিন ঝাড়গ্রাম হয়ে উঠবে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।