Chief Minister in Birbhum today, Sajo Sajo Rob : আজই বীরভূমে পা রাখতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আর সেই উপলক্ষে বোলপুর শহরে এখন যেন উৎসবের আবহ। শহরের অলিগলি জুড়ে শুধু একটাই গুঞ্জন—”দিদি আসছেন!” সকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রস্তুতির তোড়জোড়, আর বিকেল গড়াতেই যেন শহর জুড়ে নেমেছে এক আলাদা উত্তেজনার ঢেউ। তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শহর জুড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জায়। রাস্তাঘাট ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে করে তোলা হচ্ছে, শহরের প্রধান মোড়গুলিতে লাগানো হচ্ছে নতুন তৃণমূলের ফ্লেক্স, ব্যানার, আর পোস্টার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ছাপা সেই পোস্টার গুলোর নিচে লেখা— “দিদিকে দেখতে আসুন”, “দিদির কথা শুনুন”, “নবজোয়ারে দিদি”, ইত্যাদি। মূলত প্রশাসনিক বৈঠকের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর হলেও, রাজনৈতিক দিক থেকেও এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। সূত্র অনুযায়ী, রাত আটটার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছে যাবেন বোলপুরে, আর তার আগেই শহরকে নতুন রূপে সাজাতে চায় জেলা প্রশাসন ও তৃণমূল নেতৃত্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বোলপুরের কাকুজোড় গেস্ট হাউসে রাত্রীবাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী, আর আগামীকাল সকাল থেকেই শুরু হবে তাঁর প্রশাসনিক কর্মসূচি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সফর শুধু প্রশাসনিক নয়, এর মধ্য দিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই আসছেন ‘দিদি’। এই উপলক্ষ্যে আজ সকাল থেকেই বোলপুরে থানা-পুলিশ, প্রশাসনিক আধিকারিক, ব্লক অফিস থেকে শুরু করে জেলা সদরের সমস্ত দফতরে নজিরবিহীন প্রস্তুতি চলছে। বোলপুর স্টেশন থেকে গেস্ট হাউস পর্যন্ত পুরো রুটে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ও সিভিল ডিফেন্স কর্মী।
তৃণমূলের বোলপুর শহর সভাপতি দিলীপ গড়াই জানালেন, “দিদির আগমনে আমরা সকলেই খুব উচ্ছ্বসিত। আমরা চাই যে শহরের প্রতিটি মানুষ তাঁকে দেখে যেন গর্ববোধ করেন। বোলপুর তো কবিগুরুর শহর, তাই এখানে দিদির আগমনে যেন একটা নতুন জোয়ার এসেছে।” স্থানীয় এক দোকানদার অরূপ পাল বললেন, “দিদিকে সামনে থেকে একবার দেখব, এটাই জীবনের এক স্মরণীয় মুহূর্ত হতে চলেছে। শহরটা এখন একেবারে অন্যরকম লাগছে, যেন উৎসব চলছে।” শুধু শহর নয়, আশেপাশের গ্রাম থেকেও বহু মানুষ ইতিমধ্যে বোলপুরে এসে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে এক ঝলক দেখার আশায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত কৌশলগত। সম্প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপোড়েন, আর্থিক টানাটানি, এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত জটিলতার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী একাধিক জেলায় সফর করে প্রশাসনিক বৈঠক করছেন। এর মাধ্যমে তিনি সরাসরি খতিয়ে দেখছেন মাঠ পর্যায়ের কাজকর্ম এবং একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের সংহত করার চেষ্টাও করছেন। বীরভূম জেলার ক্ষেত্রে এই সফরের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় কারণ এখানে তৃণমূল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে শক্ত ঘাঁটি তৈরি করে রেখেছে। অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে জেলার রাজনৈতিক ভারসাম্য সামলানোর দায়িত্ব এখন অনেকটাই নবীন নেতৃত্বের হাতে, তাই দিদির সরাসরি উপস্থিতি দলকে উজ্জীবিত করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী মহলেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বোলপুরের হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, এমনকি পানের দোকানগুলিতেও আজ বিকেল থেকে ভিড় লেগে গেছে। ট্যুরিস্ট গাইড ও টোটো চালকেরা জানাচ্ছেন, “দিদি আসার খবরে শহরে যেমন মানুষ বেড়েছে, তেমনি আমাদের রোজগারও বেড়েছে। আমরা খুশি।” তবে কিছু সাধারণ নাগরিক মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরে স্থানীয় সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের দাবি তুলেছেন। বোলপুরের এক কলেজছাত্র অভিজিৎ সানা জানালেন, “আমাদের এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুব খারাপ, বৃষ্টিতে জল জমে যায়। আশা করছি দিদি নিজে এসে দেখবেন এবং কিছু একটা ব্যবস্থা করবেন।”
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও উত্তেজনার পারদ চড়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (প্রাক্তন টুইটার) জুড়ে চলছে #দিদি_আসছেন, #বোলপুরে_মমতা, #মমতার_সফর এর মতো ট্রেন্ড। খুদে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিক—সবাই এই সফর নিয়ে বেশ উৎসাহিত। বহু পরিবার তাদের ছেলেমেয়েকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে দিদিকে সামনে থেকে দেখার আশায়।
তবে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই সফরের সময় জনতার জমায়েতের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখা হবে যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে। ট্রাফিক ব্যবস্থাও নতুনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে বিশেষ মেডিকেল টিম মোতায়েন করা হয়েছে জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে।
সব মিলিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে বোলপুর এখন একেবারে উৎসবমুখর। শহরের মানুষের মুখে হাসি, চোখে আশা, আর মন জুড়ে একটাই অপেক্ষা—“দিদি কখন আসবেন?” আজ রাতটা হয়তো বোলপুরবাসীর কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। এবং এই সফরের প্রভাব আগামী দিনে জেলার রাজনৈতিক মানচিত্রে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে, এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পে গভীর ছাপ ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।