...
Tuesday, May 6, 2025
Google search engine
Homeপশ্চিমবঙ্গআচমকায় প্রতিমা তৈরীর কারখানায় মুখ্যমন্ত্রী

আচমকায় প্রতিমা তৈরীর কারখানায় মুখ্যমন্ত্রী

Chief Minister candidate to suddenly build a statue:সোমবার দুপুরটা যেন একেবারে অন্যরকম হয়ে উঠল বাঁকুড়ার সার্কিট হাউস সংলগ্ন এলাকার প্রতিমা শিল্পী শ্রীদাম পালের কাছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতিদিনকার ব্যস্ত রাজনৈতিক সফরসূচি থেকে একেবারে আচমকাই সময় বের করে ঢুকে পড়লেন একটি মাটির প্রতিমা তৈরির ছোট্ট কারখানায়। কোনও প্রোটোকল ছাড়াই, কোনও বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রীর এই হঠাৎ আগমনে হতবাক শিল্পী, তাঁর পরিবার এবং পাশের এলাকা। সবাই যেন চোখের সামনে স্বপ্ন দেখছে— রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক হাতের দূরত্বে দাঁড়িয়ে তাঁদের কাজকর্ম দেখছেন, কথা বলছেন, খোঁজ নিচ্ছেন আয়-রোজগারের, জীবনের।

মুখ্যমন্ত্রী ওই কারখানায় ঢুকেই প্রথমে এক ঝলকে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা অর্ধসমাপ্ত প্রতিমাগুলি দেখেন। তারপর এগিয়ে যান একটি শিবমূর্তির দিকে। নিজের হাতে তুলে নেন এক মালা এবং সেই শিবমূর্তিকে মালা পরিয়ে দেন একাগ্র ভঙ্গিতে। উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ কেউ সেই মুহূর্তকে ‘অপার্থিব ও মাতৃসুলভ’ বলে বর্ণনা করেন। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী মুখোমুখি হন প্রতিমা শিল্পী শ্রীদাম পাল এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে। প্রশ্ন করেন— “এই কাজ কতদিন ধরে করছেন?”, “রোজগার মাসে কতটা হয়?”, “সরকার থেকে কোনও সাহায্য পান কি না?”, “পরিবারে আর কে কে এই কাজে যুক্ত আছেন?”— এমন মানবিক কৌতূহল মাখানো একাধিক প্রশ্ন।

শ্রীদাম পাল খোলাখুলি বলেন, “দিদি আমাদের অনেকবার এলাকা সফরে এসেছেন, কিন্তু এমনভাবে কারখানায় ঢোকেননি কোনওদিন। আজ যে এসে সোজা ঢুকে পড়লেন, এটা আমাদের কাছে আশীর্বাদের মতো। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে আমাদের জীবিকার খোঁজখবর নেবেন, ভাবতেই পারিনি।” পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর স্ত্রী বলেন, “দিদি আমাদের অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, সরকারিভাবে কীভাবে সাহায্য করা যায়, দেখা হবে। এতো আপনভাবে কথা বললেন যে মনে হচ্ছিল, যেন আমাদের পরিবারের কেউ এসেছেন।”

এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে আশেপাশের এলাকাবাসী, পথচলতি মানুষজন দলে দলে ছুটে আসেন কারখানার সামনে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সাথেও কথা বলেন, কারো মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন, কারো বাচ্চার গালে আদরের চুমু আঁকেন। এমন ঘরোয়া পরিবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। এক স্থানীয় যুবক বললেন, “এত বড় একজন নেতা, অথচ এত সাধারণ মানুষের মতো ব্যবহার! দিদি আমাদের জন্য একজন মা, তাঁর মতো আর কেউ নেই।”

এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও অনেকে চর্চা শুরু করেছেন। ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর এই সরাসরি মাটির মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের বার্তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রবীর ঘোষ বলছেন, “দিদি জানেন, কীভাবে মানুষের মন জয় করতে হয়। প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তিনি যেমন তাঁদের সমস্যাগুলি বুঝতে পারছেন, তেমনি এক মানবিক নেত্রীর প্রতিচ্ছবি আরও একবার তুলে ধরছেন।”

তবে এখানেই শেষ নয়। মুখ্যমন্ত্রী ওই শিল্পীদের জন্য একটি তহবিল গঠনের কথা ভাবছেন বলেও সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানালেন, “অন্যান্য কারিগর, হস্তশিল্পীদের মতো প্রতিমা নির্মাতা শিল্পীদের জন্যও স্বল্প সুদের ঋণ এবং সরাসরি বিপণন সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই বিষয়টি নিয়ে খুব শীঘ্রই একটি প্রকল্প রূপায়িত হতে চলেছে।”

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই প্রতিমা কারিগররাই মূলত দুর্গা পুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, বিশ্বকর্মা পুজোর প্রাণভোমরা। অথচ বছরের বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা নানা অভাবে কাটান। রাজ্য সরকার এই খাতকে যদি ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প’-এর মর্যাদায় তুলে ধরে উপযুক্ত সহযোগিতা করে, তবে হাজার হাজার পরিবারের জীবনযাত্রায় বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন শিল্পী মহল।

এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিমা কারখানায় ঢোকার ভিডিও ও ছবি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিসরে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তৈরি হয় এক ভিন্ন আবেগ। মুখ্যমন্ত্রী যেন একবারে ছুঁয়ে গেলেন মাটির গন্ধ, শ্রমিকের ঘাম, শিল্পীর আত্মার কথা।

শেষমেশ, বলা যায়, শুধু একটি কারখানা পরিদর্শন নয়, এ এক হৃদয়ের যোগাযোগ। রাজনীতির বাইরেও যখন এক মুখ্যমন্ত্রী মাটির মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান, সেটাই হয়ে ওঠে খবর— সাহস, সম্মান এবং সম্প্রীতির খবর।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.