Saturday, July 26, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসনিতুড়িয়ায় সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুম উদ্বোধন

নিতুড়িয়ায় সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুম উদ্বোধন

CCTV camera control room inaugurated in Nituria: পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্ত অঞ্চল বরাবরই নানা রকম অপরাধমূলক কাজকর্মের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে আন্তঃরাজ্য ও আন্তঃজেলা সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলে অপরাধ করে পালানোর পথ খোলা থাকে অপরাধীদের সামনে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী থানা এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো বরাবরই ছিল জেলা পুলিশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। পুরুলিয়া জেলার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত নিতুড়িয়া থানার আওতাধীন অঞ্চলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রস-পয়েন্ট, যেখানে ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সংযোগস্থল অবস্থিত। ফলে অপরাধের পর সহজে সীমান্ত পার হওয়া এবং পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি এখানে তুলনামূলকভাবে বেশি। এই প্রেক্ষাপটে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।এই প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর প্রথম ধাপ হিসেবে শনিবার পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া থানায় একটি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধন করেন জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও রোহেদ শেখ সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকেরা। নতুনভাবে তৈরি এই সারভেলেন্স রুমে ইতিমধ্যেই বসানো হয়েছে আধুনিক মানের সিসি ক্যামেরা মনিটরিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে নিতুড়িয়া থানার আওতাধীন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা যাবে। বিশেষভাবে ঝাড়খণ্ড সীমান্ত এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার সীমানা ঘেঁষা অংশগুলিতে বসানো হয়েছে এই নতুন সিসি ক্যামেরাগুলি।

শুধু নতুন ক্যামেরা নয়, থানা এলাকায় আগে থেকেই যেসব সিসি ক্যামেরা ছিল, সেগুলিরও ফুটেজ এখন থেকে সরাসরি এই কন্ট্রোল রুমে মনিটর করা যাবে। একই সঙ্গে এই সমস্ত লাইভ ফুটেজ পৌঁছে যাবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের মূল কন্ট্রোল রুমেও।জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানান, “এই সিসি ক্যামেরাগুলি শুধু নজরদারির জন্যই নয়, অপরাধীদের ব্যবহৃত গাড়ির নম্বর, ধরন, এমনকি গতিপথ বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা রাখে। ফলে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, অনেক ক্ষেত্রে আগাম সঙ্কেত পেয়েও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের প্রযুক্তি এখন অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নজরদারির ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী হবে।”পুলিশ প্রশাসনের তরফে এই পদক্ষেপকে ‘স্মার্ট নজরদারি’-র দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার ছাড়াও এই প্রকল্পে পুরুলিয়া সদর থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের মতে, ভবিষ্যতে জেলার আরও থানা এলাকায় এমন সারভেলেন্স সিস্টেম চালু করা হবে। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র নজরদারির পরিধি বাড়াবে না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার বোধও তৈরি করবে।”নিতুড়িয়া থানা এলাকার সাধারণ মানুষদের মধ্যে এই উদ্যোগকে ঘিরে স্বস্তি ও আশার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এক স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, “অনেক সময় বাইরের লোক এসে দোকানে সমস্যা করে চলে যায়। এখন অন্তত ক্যামেরায় সব ধরা পড়বে, আমরা পুলিশকে জানানোর আগেই ওরা দেখে ফেলবে।

images?q=tbn:ANd9GcT ghjD0aWvq20x3burqFkaIdnPlJuwnq SpD9N fXu8kUm T4t5e iQ SNy2Pa2msE2So&usqp=CAU

সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অপরাধ প্রতিরোধে নজরদারি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বিগত কিছু ঘটনার বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়। তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে পুরুলিয়া জেলার সীমান্তঘেঁষা এলাকায় মোট ৩২টি বড়সড় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১৯টির ক্ষেত্রে অপরাধীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল পার্শ্ববর্তী রাজ্যে অথবা জেলায়। পুলিশ তাদের সন্ধান করতে গিয়ে একাধিকবার সমস্যায় পড়েছে প্রমাণ জোগাড়ে। এই নতুন সারভেলেন্স সিস্টেম শুধু সেই চ্যালেঞ্জকেই হালকা করবে না, বরং গোটা অপরাধচক্রকেই প্রযুক্তির জালে বেঁধে ফেলবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাধীরা অনেক সময় গাড়ি বদল করে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু যদি আধুনিক সিসি ক্যামেরা তাদের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রঙ, গন্তব্য ইত্যাদি তথ্য ক্যাপচার করতে পারে, তাহলে এমন পালানোর পথও কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে। অপরাধ দমনের পাশাপাশি এই প্রযুক্তি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেও বিরাট ভূমিকা নিতে চলেছে।পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিতুড়িয়ার পর একই ধরনের সারভেলেন্স রুম তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বাঘমুন্ডি, বলরামপুর, হুড়া ও ঝালদা থানার অধীনে থাকা সীমান্ত এলাকাগুলিতে। ভবিষ্যতে ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত সফটওয়্যারের মাধ্যমে সন্দেহজনক গতিবিধি চিহ্নিত করার মতো ব্যবস্থাও আনা হতে পারে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে মুখ চেনার প্রযুক্তি (face recognition) ব্যবহারের পরিকল্পনাও চলেছে। অর্থাৎ পুরুলিয়ার পুলিশ প্রশাসন ধীরে ধীরে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করে তোলার পথে এগোচ্ছে।নিতুড়িয়া থানা এলাকার নতুন সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ যে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে অপরাধ প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এমন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন আগামী দিনে বড় ভূমিকা নেবে বলেই মনে করছেন সবাই। প্রযুক্তির সহায়তায় যদি অপরাধীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে সেটাই হবে পুলিশের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই উদ্যোগ শুধু আইন রক্ষায় নয়, সাধারণ মানুষের মনে বিশ্বাস ও নিরাপত্তার বোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বলেই আশা করা যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments