Car drives into nursery at reckless speed in Durgapur:শুক্রবারের ভোররাত, ঠিক যখন শহর দুর্গাপুর ধীরে ধীরে ঘুম থেকে জেগে উঠছে, তখনই আচমকা এক বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে হোস্টেল এভিনিউ এলাকার বাসিন্দারা। লালা লাজপত রায় রোড ধরে আসা একটি চারচাকা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুলের নার্সারির ভেতরে ঢুকে পড়ে। গাড়িটির গতি এতটাই বেশি ছিল যে রোটারির বাঁক নিতে না পেরে সোজা নার্সারির লোহার ঘেরা ভেঙে একেবারে ভিতরে ঢুকে পড়ে এবং ঘটনাস্থলেই উল্টে যায়। সৌভাগ্যের বিষয়, ওই সময় নার্সারির ভিতরে কেউ উপস্থিত ছিলেন না, ফলে বড়সড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়, আর গাড়ির চালক সামান্য আহত অবস্থায় উদ্ধার হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির চালক বেনাচিতির বাসিন্দা এবং তিনি একাই গাড়িতে ছিলেন। এই ঘটনার পরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ এবং ক্রেনের সাহায্যে উল্টে যাওয়া গাড়িটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভোর প্রায় ৪টা নাগাদ, যখন রাস্তা ফাঁকা থাকে এবং সেই সুযোগেই গাড়িটির গতি ছিল প্রবল। এলাকার এক বাসিন্দা, মিসেস ঝর্ণা ঘোষ জানিয়েছেন, “ভোররাতে এমন একটা শব্দ শুনে আমরা ভয় পেয়ে ছুটে যাই বাইরে, দেখে হতবাক হয়ে যাই, একটা গাড়ি সোজা ঢুকে পড়েছে নার্সারির ভিতর, সামনে যদি কেউ থাকত তাহলে কী হতো, ভাবতেই শিউরে উঠছি।” দুর্গাপুর থানার এক পুলিশ অফিসার জানান, “গাড়িটির গতি অত্যন্ত বেশি ছিল, সম্ভবত চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বা নেশাগ্রস্ত ছিলেন, তদন্তের জন্য তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।” দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সকাল হতেই এলাকায় জমে যায় উৎসাহী মানুষের ভিড়, সবাই দেখতে আসে নার্সারির ভিতরে উল্টে পড়া গাড়িটি, যেটি ফুলের টবে, নার্সারির গাছপালাকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে।
নার্সারির মালিক মদন মণ্ডল বলেন, “আমার বহু বছরের কষ্টের ফল এই নার্সারি, কত দামি গাছ ছিল, এক রাতেই সব শেষ, এখন ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাচ্ছে না, তবে অন্তত প্রাণহানি হয়নি এটাই সান্ত্বনা।” এই দুর্ঘটনার ফলে আবারও প্রশ্ন উঠছে দুর্গাপুর শহরের রাস্তার উপর নজরদারির ঘাটতি নিয়ে। লালা লাজপত রায় রোড এমনিতেই গাড়ির গতির জন্য কুখ্যাত, সেখানে কোনও স্পিড ব্রেকার নেই, রাতে পুলিশের টহলও অনেক কম থাকে বলে অভিযোগ বহুদিনের। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় কাউন্সিলর শ্রীমতি সুজাতা সেন বলেন, “এই রাস্তায় প্রায়ই বেপরোয়া গাড়ি চলাচল করে, বহুবার পুলিশকে জানানো হয়েছে, এবার পুরসভা ও প্রশাসন একসঙ্গে বসে ব্যবস্থা নেবে, এই ঘটনাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কতোটা জরুরি ট্র্যাফিক কন্ট্রোল।” স্থানীয় অনেকেই মনে করছেন, শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় আরও ক্যামেরা বসানো দরকার, যাতে বেপরোয়া গাড়ি চালকদের বিরুদ্ধে প্রমাণ-সহ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি ঠিক কী কারণে নিয়ন্ত্রণ হারাল তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। চালকের বিরুদ্ধে ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের মামলা দায়ের হয়েছে এবং তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নার্সারির মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।

দুর্গাপুরের মতো একটি ব্যস্ত শিল্প শহরে এই ধরণের ঘটনা যদি নিয়মিত ঘটতে থাকে, তাহলে শহরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে পড়বে বলেই মনে করছেন অনেকে। দুর্ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিও, যা দেখে অনেকেই হতবাক, কেউ কেউ পোস্টে লিখছেন, “গাড়ি না ঘোড়া, এত জোরে গাড়ি চালানো কি আদৌ ঠিক?” আবার অনেকে পুলিশের ভূমিকাও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন— “ঘটনার সময় যদি একটা ট্রাফিক চেকপোস্ট থাকত তাহলে হয়তো এমন ঘটনা এড়ানো যেত।” দুর্গাপুর থানার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এই রাস্তায় স্পিড মনিটরিং বাড়ানো হবে এবং বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে আরও কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শহরবাসীর দাবি, শুধু দুর্ঘটনার পরে নয়, আগে থেকে সচেতনতা, রাস্তায় নিয়মিত পুলিশি টহল, স্পিড ক্যামেরা ও স্পিড ব্রেকার স্থাপন— এই পদক্ষেপগুলো এখনই নেওয়া উচিত। দুর্গাপুর শহর ইতিমধ্যেই বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে, তাই প্রশাসনের এখন থেকে আরও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা ছাড়া উপায় নেই। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন— কবে শেষ হবে এই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর দৌরাত্ম্য?