Sunday, July 27, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসবিদেশথাইল্যান্ডের কাছে যুদ্ধ থামানোর আর্জি কম্বোডিয়ার

থাইল্যান্ডের কাছে যুদ্ধ থামানোর আর্জি কম্বোডিয়ার

Cambodia asks Thailand to stop war :দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা একদিনে তৈরি হয়নি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘এমারেলড ত্রিকোণ’ নামের একটি অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই অঞ্চলটি তিনটি দেশের – কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড এবং লাওসের – সীমান্তে অবস্থিত, যেখানে একাধিক প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরগুলিকে ঘিরে আবেগ, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির এমন এক মিশেল গড়ে উঠেছে, যা শুধুমাত্র জমির মালিকানার প্রশ্ন নয়—এই এলাকা তিন দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সম্মান এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক।

প্রায় পনেরো বছর আগেও এই অঞ্চল নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে। তারপর কিছুদিন শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি থাকলেও ২০২৫ সালের মে মাসে আবারও উসকে ওঠে পুরনো আগুন। সেই উত্তাপ এবার রূপ নেয় ভয়ঙ্কর সংঘর্ষে।

ঘটনার বিবরণ

বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে শুরু হয় তীব্র গোলাগুলি। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সেনারা সরাসরি মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সীমান্ত এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গ্রামগুলি। স্থানীয়রা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে থাকে।

সবচেয়ে আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটে যখন থাইল্যান্ডের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সোজা ঢুকে পড়ে ভিতরে এবং চালায় হামলা। কম্বোডিয়ার একাধিক সেনা ছাউনি এবং গ্রামাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু হয় অন্তত ৩০ জনের। আহত শতাধিক। সীমান্তের দুই প্রান্তেই রক্তের নদী বইছে।

কম্বোডিয়ার শহরগুলি, বিশেষ করে সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলগুলি, বর্তমানে অচল। স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, বাজার—সবকিছু বন্ধ। আতঙ্কে মানুষ নিজেদের বাড়ির মধ্যেও নিরাপদ বোধ করছে না।

sa 105.1753431837

সরকারি প্রতিক্রিয়া

এই অবস্থায় অবশেষে শনিবার রাষ্ট্রসংঘে একটি বিবৃতি পেশ করেন কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত ছেয়া কেও। তাঁর কণ্ঠে ছিল স্পষ্ট ক্লান্তি, কিন্তু একটুও ক্ষোভ নয়—বরং শান্তির প্রত্যাশা। তিনি বলেন,
“থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমরা নিঃশর্তভাবে সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছি। আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই। দুই দেশের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানই আমাদের লক্ষ্য।”

এই বিবৃতি স্পষ্টতই জানিয়ে দেয়, কম্বোডিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় না। বরং তারা কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। অন্যদিকে, শুক্রবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদি সময়মতো সমাধান না হয়, আমরা পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছি।”

এই বিবৃতি সংকটের গভীরতাকে আরও স্পষ্ট করে দেয়।

স্থানীয় মতামত

সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ এখন একেবারে অস্থির। কেউ স্বজন হারিয়েছেন, কেউ ঘর। অনেকেই অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হতে হচ্ছে সাধারণ নাগরিকদের।

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামের এক বাসিন্দা সংবাদমাধ্যমে জানান,
“ভোরে গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙে। চারপাশে শুধু আগুন আর ধোঁয়া। আমরা বাচ্চাদের কোলে নিয়ে পালিয়ে এসেছি, এখন কোথায় যাবো জানি না।”

এদিকে থাইল্যান্ডের সীমান্তবাসীদের একাংশও সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
“আমাদের জীবন তো যুদ্ধ চায় না। আমরা শান্তি চাই, ব্যবসা চাই, বাঁচতে চাই,” — জানান একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী।

বিশ্লেষণ

এই সংঘর্ষের শিকড় বহু গভীরে প্রোথিত। ‘এমারেলড ত্রিকোণ’ শুধু ভূখণ্ড নয়, ইতিহাস, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের জটিল সংমিশ্রণ। এই অঞ্চল ঘিরে বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক উত্তেজনা জমে উঠছিল। দুই দেশই এই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়—এবং তার ফলে বারবারই সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ছায়াও রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন পরাশক্তি সক্রিয়—যার কারণে অঞ্চলটি আরও জটিল হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রসংঘে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

যুদ্ধ থামাতে চাইলেও বাস্তবে তা কতটা সম্ভব হবে, তা সময়ই বলবে। থাইল্যান্ডের আগ্রাসী মনোভাব ও কম্বোডিয়ার শান্তির আহ্বান—এই দুই বিপরীত মেরুর মাঝে চাপা পড়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের চাহিদা। রাষ্ট্রসংঘ এবং আঞ্চলিক কূটনীতিকদের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সবচেয়ে জরুরি হলো সংঘর্ষ থামানো এবং যৌথ আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছনো। যুদ্ধের মাধ্যমে কোনও দেশই জয়ী হয় না—হার হয় শুধুই মানুষের।

উপসংহার

এই সংঘর্ষ শুধু দুই দেশের সেনাবাহিনীর লড়াই নয়—এ এক সত্তার, ইতিহাসের এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন। কম্বোডিয়া যুদ্ধ থামাতে চাইলেও থাইল্যান্ডের মনোভাব এখনো পরিষ্কার নয়। তবে একথা নিশ্চিত—যুদ্ধ চলতে থাকলে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তারা হলো নিরীহ সাধারণ মানুষ। তাই সময় এসেছে, শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার। কূটনীতি, সংলাপ ও সহযোগিতাই পারে এই আগুনকে নিভিয়ে দিতে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments