Businessman killed in shootout in Birbhum:-শনিবারের সকালের রোদ তখন একটু একটু করে চড়তে শুরু করেছে, নিরষা গ্রামের পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শ্রমিকদের মজুরি দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুদীপ বাস্কি, পাথর ব্যবসার পরিচিত মুখ তিনি রামপুরহাট অঞ্চলে, এলাকার মানুষ জানতেন তার সরলতা আর পরিশ্রমের কথা, কিন্তু কারো কল্পনাতেও ছিল না, এমন এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু অপেক্ষা করে আছে তার জন্য, হঠাৎ পাঁচটি মোটরসাইকেলে চেপে ৮-১০ জন দুষ্কৃতী এসে হাজির হয়, হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, আর কোনরকম কথা না বাড়িয়ে একের পর এক গুলি চালাতে শুরু করে তারা, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “প্রথম গুলির শব্দ শুনে আমরা ভেবেছিলাম কেউ পটকা ফাটাচ্ছে, কিন্তু মুহূর্তেই বুঝতে পারি এটা বড় কিছু ঘটনা,”

দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন সুদীপ বাস্কি, তার বুক আর মাথায় গুলি লাগে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আতঙ্কে সবাই দিকবিদিক ছুটতে থাকে, আর দুষ্কৃতীরা সুদীপের সঙ্গে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে চম্পট দেয়, কেউ কিছু বোঝার আগেই সব শেষ, কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, খবর পেয়ে দ্রুত আসে রামপুরহাট থানার পুলিশ, দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়, গোটা এলাকা ঘিরে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি, কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এতো বড়ো একটা ঘটনা ঘটলো, অথচ পুলিশ আগে থেকে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিল না, সপ্তাহান্তে যখন ব্যবসায়ীরা টাকা নিয়ে বের হন, তখন তো অতিরিক্ত নজরদারি থাকা উচিত,”
পাথর শিল্প বীরভূমের অন্যতম চালিকা শক্তি, আর এই খাতের সঙ্গে বহু মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত, তাই সুদীপ বাস্কির এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড রীতিমতো সিঁদুরে মেঘ দেখাচ্ছে গোটা অঞ্চলে, ব্যবসায়ীরা এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রবল উদ্বেগে রয়েছেন, স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য জানান, “আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি, না হলে ব্যবসা চালানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে,” পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পরিকল্পিতভাবে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই সুদীপ বাস্কিকে হত্যা করা হয়েছে, কারণ দুষ্কৃতীরা শুধু টাকা নিয়ে পালিয়েছে, কিন্তু একইসঙ্গে পুলিশ অন্য কোনো ব্যবসায়িক শত্রুতার দিকেও তদন্ত চালাচ্ছে, ঘটনার পরে গোটা নিরষা গ্রামে নেমে আসে স্তব্ধতা, বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়, আতঙ্কের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেও, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এই ঘটনাকে ‘আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন, অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীরা কেউ ছাড় পাবে না, আমরা সবদিক খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি,

” তবে এই ঘটনাটি যে বীরভূমের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড়ো প্রশ্ন তুলে দিল, তা বলাই বাহুল্য, সাধারণ মানুষ, বিশেষত ব্যবসায়ী মহল এখন প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে, সুদীপ বাস্কির মৃত্যু কেবল একজন ব্যবসায়ীর প্রাণনাশ নয়, এটা গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম ভাঙনের ইঙ্গিত, আগামী দিনে যদি দ্রুত কড়া পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে, লোকজনের মধ্যে ভয় ঢুকবে, আর উন্নয়নের গতিও থমকে যাবে, আজ যখন গোটা দেশ অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে তাকিয়ে, তখন একের পর এক এমন ঘটনা কেবল বীরভূম নয়, গোটা বাংলার ভাবমূর্তিতেও কালিমা ছড়াবে, তাই প্রশাসনের এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা, পাশাপাশি বীরভূমের মত শিল্পপ্রধান জেলায় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, না হলে যে বিপদ আরও গভীর হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।