Bus services suspended in Barakar to protest attack on bus driver : সোমবারের ভোর। আসানসোলের কুলটি থানার অন্তর্গত বরাকর বাস স্ট্যান্ড। চারিদিক সবে আলো ফুটতে শুরু করেছে। আর সেই সময়েই ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ঝাড়খণ্ডগামী একটি বাস বরাকর এলাকায় পৌঁছনোর পর আচমকাই ঘটে গেল মারাত্মক হামলা। অভিযোগ, বাস চালকের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে দুই ব্যক্তি। এরপর কথা কাটাকাটি থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। একপর্যায়ে সেই দুই ব্যক্তি মিলে বাস চালককে প্রথমে গালিগালাজ ও পরে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে।চালকের নাক ফেটে যায়। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মুখ। চারপাশের মানুষ ছুটে এসে চালককে উদ্ধার করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেনি দুষ্কৃতীরা। বাসে চালায় ভাঙচুর। চালকের আসনের পাশে থাকা কাঁচের জানালা ভেঙে চুরমার করে দেয়। এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বরাকর ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পুলিশ দেখে অভিযুক্তরা পালানোর চেষ্টা করে। তবে বাস কর্মীরা অভিযুক্ত দু’জনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে মারধর, সম্পত্তি ধ্বংস ও গালিগালাজের অভিযোগ।
বাস চালক এবং স্থানীয় বাস কর্মীদের দাবি, ওই দুই ব্যক্তি বাসের ভাড়া নিয়ে চালকের সঙ্গে প্রথমে বচসায় জড়িয়ে পড়ে। কথার আদানপ্রদান থেকে শুরু হয় হাতাহাতি। এরপরই ঘটে মারধর এবং ভাঙচুর। আহত বাস চালককে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মানসিকভাবে তিনি ভীষণ ভেঙে পড়েছেন।ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকেই বরাকর এলাকায় বাস পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনে নামেন বাস চালক ও কর্মীরা। তাদের দাবি, “দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। নইলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” বরাকর বাস ইউনিয়নের সভাপতি সঞ্জয় মণ্ডল বলেন, “প্রতিদিনই আমাদের চালকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। কখনও যাত্রী, কখনও দুষ্কৃতী—সবাই চালকদের নিশানা বানাচ্ছে। এবার আর চুপ থাকব না। পুলিশের কাছে দাবি, অবিলম্বে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
এই ঘটনায় বরাকরসহ কুলটি, আসানসোল ও ঝাড়খণ্ডগামী রুটে বাস পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকে। বহু অফিসযাত্রী, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইলেন। রিকশা, অটো এবং ছোট গাড়িতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হল যাত্রীদের। যাত্রী মহিমা সেনগুপ্ত জানান, “আমি সকালবেলায় আসানসোলে একটা জরুরি কাজে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু বাস না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। পুলিশ কি একদিনের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করতে পারল না?”বরাকর ফাঁড়ির ইনচার্জ রাকেশ সরকার জানিয়েছেন, “আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি। দু’জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও তদন্ত চলছে। বাস কর্মীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তবে বাস চালকরা এ কথায় আশ্বস্ত হননি। তাদের বক্তব্য, “প্রতিদিনই আমরা পথে বেরোই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আমাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। পুলিশ শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করে না।
এই ঘটনার পরপরই বরাকর এলাকার রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূল নেতা সুজন বসু বলেন, “এই ধরনের হামলা কখনই বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।”অন্যদিকে, বিজেপি নেতা রাহুল সিংহ তৃণমূল সরকারকে নিশানা করে বলেন, “রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি চরমে পৌঁছেছে। চালকরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পারছে না। এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার সম্পূর্ণ দায়ী।”এই হামলার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বরাকর এলাকার এক বাসিন্দা রামেশ্বর দাস বলেন, “এখানে প্রায়ই গুণ্ডামি হয়। কিছু দুষ্কৃতী রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিনতাই, মারধর করে। পুলিশ সব জেনেও চুপ। আজ বাস চালকের উপর হামলা হয়েছে, কাল অন্য কারও উপরও হতে পারে।
বাস কর্মীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যদি অবিলম্বে সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা হয় এবং চালকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। বরাকর বাস ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রবি পাল বলেন, “এই হামলার ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতিদিনই আমরা কোনও না কোনও চালকের উপর হামলার খবর পাই। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এবার আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।”বরাকর ও কুলটি এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলিতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। রাস্তায় নজরদারিতে রয়েছে বিশেষ টহল গাড়ি। তবে বাস চালকদের দাবি, এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদী হওয়া উচিত।
এই ঘটনায় বরাকর ও কুলটি অঞ্চলে বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বাস চালকরা যদি তাদের আন্দোলন আরও জোরদার করে, তবে আসানসোল ও ঝাড়খণ্ড রুটের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হতে পারে। অপরদিকে, চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এলাকায় আরও বড় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।