Bus and auto services suspended in Durgapur due to illegal toto violence : দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল শুধু কারখানার শহরই নয়, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই শহরে আসেন কাজের প্রয়োজনে, পড়াশোনার জন্য কিংবা চিকিৎসা করাতে। ফলে, এখানকার অটো এবং মিনিবাস পরিবহন ব্যবস্থা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই শহরে যাত্রী পরিবহনের চেহারাটা পাল্টে দিয়েছে টোটো—ছোট বৈদ্যুতিক গাড়ি, যেগুলি মূলত স্থানীয় যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হয়।এই টোটোগুলির মধ্যে বেশিরভাগই চলছে কোনও রকম বৈধ পারমিট ছাড়াই। প্রশাসনের নাকের ডগায় বেআইনি ভাবে চলছে এই পরিষেবা, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেইসব পরিবহন মালিক ও চালকেরা, যারা কর প্রদান করে এবং যথাযথ নিয়মে অটো ও মিনিবাস চালাচ্ছেন বহু বছর ধরে।
সোমবার সকাল থেকে দুর্গাপুর শহরে আচমকাই অচলাবস্থা। রাস্তায় দেখা গেল না একটাও মিনিবাস কিংবা অটো। কারণ, টোটো চলাচলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়ে ধর্মঘটে নেমেছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকেরা। তাঁদের দাবি, যেহেতু টোটোচালকরা কোনও পারমিট ছাড়াই যাত্রী তুলছেন এবং শহরের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে যানজট তৈরি করছেন, তাই তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবহন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।এই ধর্মঘটের জেরে সকাল থেকেই দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, বাজার এলাকাগুলিতে দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীরা। কেউ হেঁটে, কেউবা অন্য কোনও উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। বিশেষত, অফিসগামী মানুষ এবং স্কুলপড়ুয়াদের দুর্দশা চরমে ওঠে।

পর্যন্ত প্রশাসনের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা ঘোষণা শোনা যায়নি। তবে দুর্গাপুর নগর নিগম ও স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে বৈধ-অবৈধ যান চলাচল নিয়ে দ্রুত বৈঠক ডাকা হতে পারে।একজন পুলিশ আধিকারিক বলেন, “আমরা বিষয়টি নজরে এনেছি। শহরের ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ ও বৈধ পরিবহন ব্যবসা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আলোচনা করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছি।” বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, টোটো একদিকে সুবিধা দিলেও, এর অবাধ এবং অনিয়ন্ত্রিত চলাচল পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। মহিলাদের জন্য সুলভ পরিবহনের সুবিধা থাকলেও রাস্তার পাশে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়া, ট্র্যাফিক জ্যাম, এবং আইন না মানার প্রবণতা—এসব বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এক স্কুলশিক্ষিকা বলেন, “আমি রোজ অটো করে স্কুলে যাই। আজ হঠাৎ বন্ধ থাকায় অনেকটা হাঁটতে হয়েছে। টোটো নিয়ন্ত্রণে আনলেই তো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।”অন্যদিকে, এক টোটোচালক জানান, “আমরা দরিদ্র মানুষ। আমাদের কাছে পারমিট করানোর মতো অর্থ নেই। যদি সরকার সহায়তা করে, আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করতে রাজি।” ব্যবস্থায় কোনও একটি শ্রেণি যখন নিয়ম মানে না, তখন সেটি অন্য শ্রেণির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই ঘটনাতেও সেই ছবিই স্পষ্ট। বৈধ অটো ও মিনিবাস চালকেরা কর দেন, পারমিট নেন, ট্রাফিক বিধি মানেন—তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে টোটোর অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের জন্য।

শুধু দুর্গাপুর নয়, রাজ্যের আরও বিভিন্ন শহরেও একই ছবি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে টোটোচালকদের সংগঠিত লবির ফলে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না। যার ফলে টোটো নিয়ন্ত্রণের নিয়ম থেকে শুরু করে পারমিট নীতি—সব কিছুই প্রশ্নের মুখে পড়ে। ধর্মঘট প্রমাণ করে দিয়েছে, টোটো-অটো বিরোধ রাজ্যে আর শুধু পরিবহন ব্যবসায় সীমাবদ্ধ নেই, এটা সামাজিক সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। প্রশাসন যদি এখনই কঠোর হাতে বিষয়টি না দেখে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে।দরকার একটি দীর্ঘমেয়াদী নীতি, যেখানে টোটোর সংখ্যা, চলাচলের এলাকা, পারমিট ব্যবস্থা—সব কিছু নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালিত হবে। এবং একমাত্র তখনই শহরের বৈধ পরিবহন ব্যবস্থাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।

দুর্গাপুরের রাস্তায় সোমবারের চিত্র ছিল পরিষ্কার—নিয়ন্ত্রণহীন টোটো চলাচলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে। বৈধ পরিবহন চালক ও মালিকেরা তাঁদের জীবিকা বাঁচাতে ধর্মঘটে নামতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এই সমস্যার শিকড় আরও গভীরে। একদিকে বেআইনি পরিবহন, অন্যদিকে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, আর মাঝখানে পড়ে সাধারণ মানুষ।সমস্যা সমাধানের জন্য এখন দরকার প্রশাসনের সুস্পষ্ট ভূমিকা, আইনি পদক্ষেপ এবং পরিবহন ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ফেরানো। না হলে আগামী দিনে এই টানাপোড়েনই শহরের চলাচল থামিয়ে দিতে পারে।