Bulldozers descend, birds scream, animals, jungle will form IT park! : এই গল্পটা হায়দ্রাবাদের গাছিবাওলির, কিন্তু একই গল্প শোনা যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে — উন্নয়নের নামে কাটা পড়ছে বন, গাছের পর গাছ, আর সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে পশু-পাখিদের ঘরবাড়ি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও চোখে জল এনে দিয়েছে বহু মানুষের। রাতের অন্ধকারে, একের পর এক বুলডোজার ঢুকে পড়ছে জঙ্গলের ভেতরে, গাছ উপড়ে ফেলা হচ্ছে নির্বিচারে, আর তার মধ্যেই শোনা যাচ্ছে ময়ূর, শিয়াল, হরিণসহ বহু বন্যপ্রাণীর আর্তনাদ, যেন তাঁরা চিৎকার করে বলছে – “আমাদের বাঁচাও!” ভিডিওটি হায়দ্রাবাদের অভিজাত এলাকা গাছিবাওলির এক বনাঞ্চলের, যেখানে সরকার পরিকল্পনা করেছে বিশাল এক আইটি পার্ক বানানোর। সেই কাজেই প্রথম ধাপে শুরু হয়েছে বন ধ্বংস। যদিও ‘খবর বাংলা’ এই ভিডিওর সত্যতা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করেনি, তবে দৃশ্যটি যথেষ্ট হৃদয়বিদারক এবং বাস্তবের খুব কাছাকাছি। কারণ এমন ঘটনা দেশের নানা প্রান্তেই ঘটে চলেছে। উন্নয়নের নামে গাছ কাটা যেন আজ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভিডিও ভাইরাল
হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “মানুষ কি শুধুই নিজের স্বার্থ দেখবে? পশু-পাখিদের কি বাঁচার অধিকার নেই?” পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ‘গ্রিন তেলেঙ্গানা’-র সদস্য রমেশ রাও বলেন, “এই জায়গায় বহু প্রজাতির পশু-পাখি বসবাস করে। এগুলো কেটে ফেলা মানে কেবল গাছ নয়, একটা বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস। এর প্রভাব শুধু পশুদের উপর নয়, শেষ পর্যন্ত আমাদের সবার উপরই পড়বে।” আইটি পার্ক তৈরির জন্য যে বনাঞ্চলটি ধ্বংস করা হচ্ছে, সেটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নয়, বরং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানকার গাছগুলো শুধু বাতাস পরিষ্কার করে না, বরং মাটির জলধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বন্যা ও খরার হাত থেকেও রক্ষা করে। সেইসঙ্গে এখানে বসবাসকারী বহু পশুপাখির প্রাকৃতিক আশ্রয়ও এই বনভূমি। পরিবেশবিদ মীনাক্ষী আইয়ার জানান, “বন ধ্বংস করে আইটি পার্ক বানালে হয়তো কিছু মানুষের চাকরি হবে, কিছু অর্থনীতি বাড়বে। কিন্তু এর ফলে যে বন্যপ্রাণ হারাবে, পরিবেশে যে ক্ষতি হবে, সেটার দাম আগামী প্রজন্মকে চোকাতে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দারাও এই নিয়ে উদ্বিগ্ন। এক কলেজ পড়ুয়া, তনয়া সেন বললেন, “আমি রাতে ওই চিৎকারের ভিডিওটা দেখে ঘুমোতে পারিনি। ওরা কথা বলতে পারে না বলেই কি আমরা ওদের কষ্ট বুঝবো না? সরকার কি একবারও ভাবলো না এর প্রভাব কতটা গভীর?” অনেকেই বলছেন, উন্নয়নের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। যেখানে গাছ না কেটে, পরিবেশকে বাঁচিয়ে উন্নয়নের কাজ করা যায়। আজকের দিনে গ্রীন বিল্ডিং, ভার্টিকাল আইটি পার্ক বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি আছে যা বন ধ্বংস না করেও আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারে। এমনকি অনেক দেশের মত ভারতেও রি-লোকেটেবল টেক পার্ক তৈরি করা যায়। অথচ সেখানে কেন এই ঘন জঙ্গল কেটে বিল্ডিং বানাতে হবে? হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরু, পুনে বা কলকাতার মতো শহরগুলিতে যেভাবে ক্রমাগত গাছ কেটে ফ্ল্যাট, অফিস, রাস্তা তৈরি হচ্ছে, তা বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে—আমরা ঠিক কাদের জন্য উন্নয়ন করছি? যখন এই প্রকৃতি থাকবে না, এই পশু-পাখি থাকবে না, তখন এই উন্নয়নের ভবিষ্যৎ কী? এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পশু অধিকার নিয়ে
/wion/media/media_files/2025/04/02/rAPRHUnpM5Wni5lJQcAd.png)
কাজ করা সংস্থা ‘PETA India’ এর তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “বন্যপ্রাণীকে সুরক্ষা না দিলে মানুষও একদিন ধ্বংস হবে। মানুষ ও প্রকৃতি একে অপরের পরিপূরক। কোনো দিকেই ভারসাম্য হারালে তার খেসারত দিতে হবে।” অন্যদিকে সরকার পক্ষের দাবি, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রাজ্যের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি, এবং প্রয়োজনে পরিবেশ রক্ষা করার সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পশুদের জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিকল্প ব্যবস্থা আমরা দেখছি।” তবে এই আশ্বাস কতটা বাস্তব হবে, তা সময়ই বলবে। কারণ এর আগেও বহুবার দেখা গেছে প্রকল্প শুরুর আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও, পরে পরিবেশের কোনও তোয়াক্কা করা হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বন ধ্বংসের ফলে শুধু যে পশু-পাখিরা বিপদে পড়ে তা নয়, বরং শহরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, দূষণ বাড়ে, জলাভাব দেখা দেয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও অনেকটা বেড়ে যায়। এক কথায় বলা যায়, এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি মারাত্মক। মানুষ যতই উন্নয়নের কথা বলুক না কেন, প্রকৃতির থেকে বড় উন্নয়ন কিছুই নয়। আর সেই প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে এখনই সচেতন হতে হবে। আমাদের উচিত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাতে তারা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প গ্রহণ করে, বনভূমি বাঁচিয়ে রাখে এবং পশু-পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ভিডিওর দৃশ্যটি সত্যিই হৃদয়বিদারক, ময়ূরের চিৎকার যেন প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতির আর্তনাদের। এই ঘটনার প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে পরিবেশপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে এই বন ধ্বংস বন্ধ করা হোক এবং আইটি পার্কের জন্য অন্য কোনও খালি জমি ব্যবহার করা হোক। মানুষের এই সচেতনতা ও প্রতিবাদই হয়তো ভবিষ্যতের প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারবে। এই মুহূর্তে আমাদের শপথ নেওয়া উচিত—উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করেই হোক ভবিষ্যতের নির্মাণ।