BSF lathicharges civilians, allegation : রবিবার রাত তখন বেশ গড়িয়ে গেছে, ঘরবন্দি মিঠিপুর ষষ্ঠীতলা, দিনের শেষে একটু শান্তি যেন ফিরছিল এলাকাজুড়ে, কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাকে হঠাৎ করেই ছিঁড়ে ফাটিয়ে দেয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (BSF) লাঠির ঝড়—যার নিশানায় পড়ে যান একের পর এক নিরীহ গ্রামবাসী। স্থানীয়রা জানালেন, কোনও ঝামেলা, গন্ডগোল, এমনকি সন্দেহজনক কিছু না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ রাতের অন্ধকারে এলাকায় টহলদারি চালাতে থাকা বিএসএফ জওয়ানদের একদল ছুটে আসে সাধারণ মানুষের উপর, শুরু হয় বেপরোয়া লাঠিচার্জ—এমন আঘাতে চমকে যান সবাই, বহুজন আহত হন, ছোট থেকে বয়স্ক কেউই রেহাই পাননি। এই ঘটনায় চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা, রাত পোহানোর আগেই রাস্তায় বিক্ষোভে নামেন বহু মানুষ, দোষীদের শাস্তির দাবিতে তীব্র প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
এক স্থানীয় বাসিন্দা, পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমুদ্দিন শেখ বললেন, “আমরা তো শুধু বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, হঠাৎ ওরা এসে লাঠি চালাতে শুরু করল, কিছুই বুঝতে পারলাম না, মাথা ফেটে গেছে আমার জামাইয়ের।” আতঙ্কের এমন রূপ বহুদিন পর দেখল রঘুনাথগঞ্জ, যেখানে মানুষ নিজের পাড়াতেই নিরাপদ নয়—এই ভাবনা ঘিরে ধরে সকলকে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী এসে পড়ে রঘুনাথগঞ্জ থানার, কোনওক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, যদিও এলাকায় এখনও রয়ে গেছে তীব্র আতঙ্ক ও চাপা উত্তেজনা।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গোটা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে এই ঘটনার পরও বিএসএফের তরফে এখনো কোনও সরকারিভাবে মন্তব্য আসেনি, যা আরও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে—বিশেষ করে এই এলাকায় যেখানে আগে থেকেও এমন অভিযোগ উঠেছে বহুবার। স্থানীয়দের মতে, সীমান্তবর্তী এই গ্রামগুলি প্রায়শই বিএসএফের “অবাঞ্ছিত দমননীতির” শিকার হয়, এবং আজকের ঘটনা যেন সেই চলমান নিপীড়নেরই এক জ্বলন্ত প্রমাণ। এই ঘটনার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক ও রাজ্যের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান, তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে আহতদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং বর্বরতা।
সাধারণ মানুষকে এভাবে মারা যায় না। আমরা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে জানাচ্ছি এবং দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তবে গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন অনেকেই ভয়ে এখনও বাইরে বেরোচ্ছেন না, এমনকি দোকানপাটও অনেকখানি বন্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন যুবক এবং প্রবীণ ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন রাস্তায়, পাশে আতঙ্কে কাঁদছে তাদের পরিবার।
রঘুনাথগঞ্জের মতো শান্তিপ্রিয় এলাকায় এমন নির্মম ঘটনা যে ভবিষ্যতে প্রশাসনের ওপর মানুষের আস্থা কমাবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য ও কেন্দ্রের সংঘাতও বাড়তে পারে, বিশেষত যেখানে একদিকে কেন্দ্রীয় আধিপত্যশীল বাহিনী, আর অন্যদিকে রাজ্যের সাধারণ জনগণের মৌলিক অধিকার—তাদের জীবন ও নিরাপত্তা। এমন ঘটনায় একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা প্রশ্নের মুখে পড়ে, তেমনি আরও গভীরে দেখা যায় সাধারণ মানুষের ওপর এক ধরণের অব্যক্ত ভয় কাজ করতে শুরু করে—যা গণতান্ত্রিক সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক। এদিকে, রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন ইতিমধ্যেই প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে বলে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি।
গ্রামবাসীরা একে অপরের হাত ধরে বলছেন, “আমরা চুপ থাকলে ওরা আরও মারবে। এবার কথা বলতেই হবে।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় কোনও আন্দোলন দানা বাঁধছে কি না, তা সময়ই বলবে, তবে আজকের রাত যে ইতিহাসে থাকবে ‘লজ্জার রাত’ হিসেবে, তা বলাই যায়। এমন অন্ধকারে শুধু লাঠি নয়, মানুষ হারিয়েছে বিশ্বাস—যা পুনরুদ্ধার করতে প্রশাসন ও সমাজ দুই পক্ষকেই ভাবতে হবে, দ্রুত ও কার্যকরভাবে।