Bronze at World School Games : আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামঞ্চে আরও একবার উজ্জ্বল হল ভারতের নাম, আর সেই সোনালি মুহূর্তের নেপথ্যে রয়েছে এক ছোট্ট মেয়ের বড় স্বপ্ন আর অদম্য পরিশ্রম—বর্ধমানের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ঈধা চক্রবর্তী। রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছিল “ওয়ার্ল্ড স্কুল গেমস”, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে স্কুল স্তরের খুদে ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়েছিল। সেই কঠিন প্রতিযোগিতার ময়দানে ক্যারাটে বিভাগে ভারতীয় দলের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছিল ঈধা। আর একে একে দেশ বিদেশের শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে টপকে শেষমেশ সে জিতে নিয়েছে ব্রোঞ্জ পদক। যা শুধু তার নিজের নয়, বরং গোটা পশ্চিমবঙ্গের, গোটা ভারতের গর্ব।
ঈধার এই অভূতপূর্ব সাফল্যে বর্ধমানের মানুষ যেমন আনন্দিত, তেমনই বিস্মিতও—কীভাবে এত কম বয়সে এতটা আত্মবিশ্বাস আর দৃঢ়তা নিয়ে একটি মেয়ে আন্তর্জাতিক আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিজের দেশকে গর্বিত করতে পারে! সাইবেরিয়ার কঠিন আবহাওয়া, অচেনা পরিবেশ, বিদেশি সংস্কৃতি—সবকিছুকে পিছনে ফেলে ঈধা যখন মঞ্চে নিজের পা রাখে, তখন তার মুখে ছিল একটিই লক্ষ্য, ‘আমি ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করছি, হারার কোনও জায়গা নেই।’ তার কোচ সন্দীপ ঘোষ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “ঈধা খুবই একাগ্র ও কঠোর পরিশ্রমী মেয়ে। ছোট থেকেই ওর চোখে ছিল একরকম দীপ্তি, একটা লক্ষ্য স্পষ্ট—আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের নাম উজ্জ্বল করা।” শুধু কোচ নয়, ঈধার পরিবারও তার এই সাফল্যে অভিভূত। তার মা জানান, “ঈধা ছোট থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায় খুবই উৎসাহী ছিল। আমরা কখনোই চাপ দিইনি, বরং ওকে স্বাধীনভাবে নিজের পছন্দের দিকে এগোতে দিয়েছি। আজ ওর এই অর্জন আমাদের চোখে জল এনে দিয়েছে গর্বে।” ঈধার সাফল্য যে কেবল একটা পদক জেতার গল্প নয়, বরং একটা বার্তা, সেটা বুঝে ফেলেছেন তার স্কুল, তার বন্ধুরা, এবং গোটা শহরের মানুষ। আজ যখন অনেক শিশুই মোবাইল-ট্যাব-ভিডিও গেমে ব্যস্ত, তখন ঈধা প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যারাটে অনুশীলন করেছে, পড়াশোনাও চালিয়ে গেছে সমানভাবে। সে নিজে জানায়, “সকালে স্কুল, তারপর হোমওয়ার্ক, তারপরে প্র্যাকটিস।
কখনও ক্লান্ত লাগত, কিন্তু যখন মনে পড়ত আমি দেশের হয়ে লড়ছি, তখন সব ক্লান্তি উধাও হয়ে যেত।” ঈধার এই অভাবনীয় কীর্তি স্রেফ তার একার না, এটা একটি পরিবারের, একটি স্কুলের, একটি জেলার এবং একটি দেশের সম্মিলিত অর্জন। এই ঘটনায় শুধু বর্ধমান নয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং গোটা ভারতই এখন চর্চা করছে ঈধা চক্রবর্তীকে নিয়ে। স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই ঈধাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি, তার সাফল্যের পর আরও অনেক ছোট ছোট মেয়ে ও ছেলে ক্যারাটের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতে আমাদের দেশে ক্রীড়ার মান আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে, মেয়েদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি উৎসাহ বাড়ানোয় ঈধার অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। অনেক শিক্ষাবিদই মনে করছেন, এই ধরণের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এক অভিভাবক বলেন, “ঈধা দেখিয়ে দিল যে শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়, খেলাধুলাতেও ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বমানের সাফল্য অর্জন করতে পারে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্যের পর ঈধা যদি সঠিক প্রশিক্ষণ, পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাপোর্ট পায়, তাহলে সে একদিন অলিম্পিকেও ভারতের পতাকা ওড়াতে পারে। এই কারণে সরকারের তরফ থেকে, ক্রীড়া মন্ত্রকের তরফ থেকেও ঈধার প্রশিক্ষণ ও ভবিষ্যতের পথচলার জন্য সহযোগিতা আশা করা হচ্ছে। আজ ঈধার ব্রোঞ্জ পদক শুধু একটি ধাতব পদক নয়, এটি আসলে একটি অনুপ্রেরণার প্রতীক।
একটি ছোট শহর থেকে উঠে আসা এক মেয়ের সাহস, জেদ আর স্বপ্নের নাম—ঈধা চক্রবর্তী। সে বুঝিয়ে দিয়েছে, মঞ্চ যত বড়ই হোক না কেন, যদি মনোবল থাকে, লক্ষ্য স্পষ্ট থাকে আর পাশে থাকে সঠিক দিশা, তাহলে যে কোনও ভারতীয় ছাত্রছাত্রী আন্তর্জাতিক মঞ্চে চমক দিতে পারে। ঈধা আজ একটা উদাহরণ, একটা দৃষ্টান্ত, একটা গল্প, যা আরও অনেক ইধার জন্ম দেবে আগামী দিনে। শেষ কথায় বলি, ঈধার এই বিজয় কেবলমাত্র ব্যক্তিগত নয়, এটি একটি জাতির সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। আমরা “খবর বাংলা”-র পক্ষ থেকে ঈধাকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন, এবং আশা রাখি, ভবিষ্যতে সে আরও অনেক বড় অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে।