Brick-pelting, bombing, tear gas, baton-charge targeted police in Barasat : উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের টালিখোলা এলাকায় বুধবার রাতে ঘটে গেল এক ভয়ানক অশান্তির ঘটনা, যা গোটা শহরের শান্ত পরিবেশে এক আতঙ্কের ছায়া ফেলে দিল। গোটা ঘটনাটি শুরু হয় একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে। অভিযোগ, এলাকার এক যুবক নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে পাকিস্তানের সমর্থনে একটি পোস্ট করে বসে। ওই পোস্টে শুধু পাকিস্তানপ্রীতির ইঙ্গিতই ছিল না, বরং তা ছিল ভারতবিরোধী ও উসকানিমূলক স্বভাবের। সেই পোস্ট নজরে আসতেই প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে খবর, “পাকিস্তান সমর্থন করে পোস্ট করেছে টালিখোলার যুবক!” ফলে এলাকায় উত্তেজনার পারদ চড়ে যায় দ্রুত গতিতে।
খবর পেয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বুধবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান বারাসাত থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, বারাসাতের এসডিপিও সহ বারাসাত জেলা পুলিশের একটি বিশাল বাহিনী। কিন্তু ঠিক তখনই পাল্টে যায় চিত্র। পুলিশের গাড়ি ঢুকতেই একদল উন্মত্ত জনতা আচমকা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলতে থাকে একের পর এক বোমা। বিক্ষোভকারীদের এমন আক্রমণে মুহূর্তেই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভয়ানক ইটবৃষ্টি, বোমার আওয়াজে আতঙ্কে ভেঙে পড়েন এলাকার সাধারন মানুষ। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে পুলিশের এক সদস্য গুরুতর আহত হন ইটবৃষ্টিতে। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসাত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বাধ্য হয়ে শুরু করে লাঠিচার্জ। ছোড়া হয় টিয়ার গ্যাস শেল। এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে টান টান উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বহু বছর পর এই ধরনের তাণ্ডব দেখলেন তাঁরা। এক মহিলার কথায়, “আমরা ভেবেছিলাম গন্ডগোল হবে না। কিন্তু পুলিশের ওপর যেভাবে হামলা হল, মনে হচ্ছিল যেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে।”
ঘটনায় আতঙ্কে পড়ে যান শিশু, বৃদ্ধ, মহিলারা। অনেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। এক দম্পতির কথায়, “বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ টিয়ারগ্যাসের গন্ধে জেগে উঠে কাঁদতে থাকে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি।”
পুলিশ এই ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে। রাত প্রায় একটা ত্রিশ নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বারাসাতের এসডিপিও জানান, “এই ধরনের ঘটনা আমরা বরদাস্ত করব না। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাকিস্তানপ্রীতি দেখিয়ে কেউ যদি আইন নিজের হাতে তোলে, বা কাউকে রক্ষা করতে চায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের এক পুলিশকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন, তিনি এখন চিকিৎসাধীন। দোষীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এই ঘটনার পর গোটা বারাসাত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরেও নজরদারি শুরু করেছে সাইবার সেল। অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৫৩এ (ধর্ম বা জাতিভেদে শত্রুতা সৃষ্টি), ১২৪এ (রাষ্ট্রদ্রোহিতা), ২৯৫এ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত) সহ আরও কিছু ধারাও।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলেও ঘটনার নিন্দা হয়েছে। এক কাউন্সিলরের মন্তব্য, “এলাকার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার জন্য কিছু দুষ্কৃতী ইচ্ছাকৃতভাবে এসব করেছে। পুলিশ ঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় দুর্ঘটনা হতে পারত।” অন্যদিকে, বিরোধীদের বক্তব্য, “এটাই প্রমাণ করে প্রশাসনের গোয়েন্দা নজরদারির কী অবস্থা।”
এক সমাজকর্মী বলেন, “আজ বারাসাতের মানুষ দেখল কীভাবে একটা ফেসবুক পোস্ট কীভাবে অশান্তির আগুন জ্বালাতে পারে। এটা আমাদের শিক্ষা, সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যবহারের সময় এসেছে।”
এই ঘটনার প্রভাব আগামী দিনেও অনুভূত হতে পারে। প্রথমত, রাজ্য পুলিশের ওপর এই হামলার ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এর ফলে বারাসাত সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হতে পারে। দ্বিতীয়ত, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ঘিরে হিংসার প্রবণতা প্রশাসনকে আরও কঠোর করে তুলতে বাধ্য করবে।

অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের মনে এই ঘটনায় একটা অদৃশ্য ভয়ের ছায়া রয়ে গেল। প্রশ্ন উঠেছে, “কোনো এলাকায় কেউ যদি পাকিস্তানকে সমর্থন করে, তার জন্য পুলিশের ওপর হামলা কি মানা যায়?”
এখন অপেক্ষা তদন্তের ফলাফলের। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসতে পারে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—আসলে এটা ছিল তাৎক্ষণিক উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ, না কি এর পেছনে কোনও বৃহত্তর চক্রান্ত? তদন্তের অগ্রগতি আগামী দিনে এই উত্তেজনার সত্যিকারের উৎস খুঁজে দেবে।
এই ঘটনার পেছনে থাকা মূল অভিযুক্তের সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট করে আসছিল। এলাকায় তার বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিক মৌখিক অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু প্রশাসনের নজরে সে ধরা পড়েনি। এবার আর রেহাই নয়, বলছে পুলিশ।
সার্বিকভাবে, এই ঘটনা ফের একবার প্রমাণ করে দিল, সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার, উসকানি ও গুজব কীভাবে পুরো একটা শহরের শান্তি কেড়ে নিতে পারে। প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপেই এখন ফিরতে পারে স্বাভাবিক ছন্দ।