‘Bombing negotiations’, Trump says about nuclear deal : ‘বোমা মেরে আলোচনা’ — এই শব্দবন্ধটি যেন কাঁপিয়ে দিল গোটা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলকে। ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘাচির মুখে উঠে এলো এক চরম অসন্তোষের ভাষ্য, যা কেবল একটা বিবৃতি নয়, বরং একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক বার্তা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাবকে নাকচ করে আরাঘাচি জানান, “আলোচনার নামে আমেরিকা আমাদের পরমাণু কেন্দ্রে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা ফেলে দিয়েছে, এরপর আর আলোচনার কিছুই বাকি থাকে না।” এই বক্তব্যের পরই ফের উত্তাল হয়ে ওঠে তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্ক। মধ্যপ্রাচ্যে ১২ দিনের সামরিক সংঘর্ষের পরে সাময়িক এক শান্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাচ্ছিল, কিন্তু এই মন্তব্য সেই শান্তির ছায়াতেও কাঁটা হয়ে উঠল। ২০১৫ সালে ওবামা প্রশাসনের আমলে স্বাক্ষরিত হয় ইরান পরমাণু চুক্তি বা ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (JCPOA)’, যার অধীনে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির বদলে শান্তিপূর্ণ পরমাণু গবেষণার অনুমতি পায় এবং তার বদলে উঠে যায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই সেই চুক্তি এক তরফা ভাবে বাতিল করেন ২০১৮ সালে, এবং ফের ইরানের উপর চাপিয়ে দেন কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান যেমন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত, তেমনই আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও ধাক্কা খায়। ইরান দাবি করে, তারা শান্তিপূর্ণ পরমাণু গবেষণা চালালেও, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক হস্তক্ষেপ তাদের নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করছে। আর সেই কারণেই আরাঘাচির মতো কূটনৈতিকও এতটাই কঠোর ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ‘অস্থিতিশীলতা’র জন্য ইরানই দায়ী। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ধরনের হঠাৎ বোমাবর্ষণ বা শক্তির ব্যবহার কূটনৈতিক আলোচনার পথকে একেবারে বন্ধ করে দেয়।” বিশেষত, এমন এক সময়ে যখন পশ্চিম এশিয়া ইতিমধ্যেই সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন সহ নানা সংঘর্ষে জর্জরিত, তখন ইরান-আমেরিকা সম্পর্কের এমন অবনতি নতুন বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা IAEA-র তরফে জানানো হয়েছে, ইরান বর্তমানে চুক্তির নিয়ম ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালাচ্ছে, যা পরমাণু বোমা তৈরির পথ সহজ করে। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া এরই মধ্যে IAEA থেকে বেরিয়ে এসে ইচ্ছামতো পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে। ফলে এই মুহূর্তে প্রশ্ন উঠছে — এবার কি তবে ইরানও সেই পথেই হাঁটবে? আর যদি তাই হয়, তবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাই এক গভীর বিপদের মুখে পড়তে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ইরানের তরুণ প্রজন্ম, যারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, তারা এই রাজনৈতিক চড়া উত্তেজনায় ক্ষুব্ধ ও দিশেহারা। তেহরানের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বলেছে, “রাজনীতিবিদরা যুদ্ধ করেন, কিন্তু ভোগ করি আমরা সাধারণ নাগরিকরা। আমাদের ভবিষ্যৎ আর স্বপ্ন নিয়েই তো খেলা চলছে।
” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই অবস্থায়, কারণ নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানে ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে, শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি থমকে গেছে, হাসপাতালগুলি পড়েছে সংকটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এক ধৈর্যের পরীক্ষা। আমেরিকা যদি সত্যিই আলোচনায় আগ্রহী হয়, তবে আগে আস্থা ফিরিয়ে আনার মতো পরিবেশ তৈরি করা দরকার। ট্রাম্পের ‘বোমা ফেলে আলোচনা’ মন্তব্য শুধুই বিতর্কিত নয়, বরং কূটনৈতিক শিষ্টাচারকেও উপেক্ষা করে বলে মনে করছেন অনেকেই। একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জানান, “কূটনীতির ভাষা সংযত হওয়া উচিত। যুদ্ধের হুমকি দিয়ে কোনও আলোচনার ভিত্তি তৈরি করা যায় না।” এই অবস্থায় ভারত সহ অন্যান্য শান্তিপ্রিয় দেশগুলিরও উচিত হবে এই উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতা করা। কারণ যদি এই উত্তেজনা আরও বাড়ে, তবে তার পরোক্ষ প্রভাব ভারতের তেল আমদানির উপর, বিদেশি বিনিয়োগে, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত লক্ষ লক্ষ ভারতীয় শ্রমিকের জীবনেও পড়তে পারে। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে — ইরান কি উত্তর কোরিয়ার পথ অনুসরণ করে নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র তৈরি করবে, নাকি কোনও কূটনৈতিক অলৌকিকতায় ফের আলোচনার পথ খুলবে? আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই দোলাচলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যেন ভুলে না যায় কোনও দেশ, কোনও নেতাই — এটাই এখন আমাদের কামনা।