Bomb scare at Varanasi airport, Canadian citizen arrested:শনিবার রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বারাণসীর বাবতপুর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, যখন বেঙ্গালুরুগামী একটি বিমানে থাকা এক যাত্রী চিৎকার করে জানিয়ে দেন যে তার ব্যাগে বোমা রয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে বিমানবন্দরের শান্ত পরিবেশে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বিমানের পাইলট তৎক্ষণাৎ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে সতর্ক করেন এবং বিমানটিকে পুনরায় অ্যাপ্রনে ফিরিয়ে আনেন। বিমানটি নিরাপদ জায়গায় রাখা হয় এবং সমস্ত যাত্রীকে দ্রুত নামিয়ে এনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পুরো বিমানবন্দর চত্বর ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী, শুরু হয় চুলচেরা তল্লাশি। সন্দেহভাজন ব্যাগ পরীক্ষা করা হয়, স্ক্যানিং মেশিন, স্নিফার ডগ, বম্ব স্কোয়াড – সব কিছু নামানো হয় ঘটনাস্থলে। দীর্ঘ তল্লাশি ও তদন্তের পর জানা যায়, আসলে কোনও বোমা ছিল না, পুরো ঘটনাটি ছিল ভুয়ো আতঙ্ক ছড়ানোর ফল। তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় সামনে আসে — কানাডার নাগরিক ইয়োহানাথন, যার উদ্দেশ্য বা মানসিক অবস্থার বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। ফুলপুর থানার পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। রাতভর আতঙ্কে ও অনিশ্চয়তার মধ্যে যাত্রীদের টার্মিনাল বিল্ডিংয়ে আটকে রাখা হয়। ক্ষুধা, ক্লান্তি আর অজানা আশঙ্কার মধ্যে রাত কাটান যাত্রীরা। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান, কীভাবে রাতভর উদ্বেগের মধ্যে কাটাতে হয়েছে এবং কীভাবে বার বার নিরাপত্তা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অবশেষে, সমস্ত কিছু স্বাভাবিক ঘোষণা করা হয় এবং রবিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ অভিযুক্ত কানাডার
নাগরিককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বারাণসী পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, “আমরা পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছি। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কঠিন শাস্তির যোগ্য।” অন্যদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, “আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি, ফলে বড় কোনও বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।” এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানো হয়। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে বড় সংকটের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্রের কাছে অবস্থিত বিমানবন্দরগুলির জন্য এটি বড় সতর্কবার্তা। এই ঘটনাকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য কঠিনতম শাস্তি হওয়া উচিত”, আবার কেউ বলছেন, “ভাগ্যিস দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, নাহলে কী ভয়ানক পরিণতি হতে পারত কে জানে!” বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তা কর্মী বলেন, “আমরা প্রতিটি যাত্রীর ব্যাগ ভাল করে পরীক্ষা করি, কিন্তু আচমকা যদি কেউ এমন দাবি করে, তখন প্রক্রিয়া অনুযায়ী পুরো এয়ারপোর্ট লকডাউন করতে হয়। এতে অনেক সময় ও শ্রম নষ্ট হয়, সঙ্গে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে।” এক যাত্রী, যিনি ওই বিমানে ছিলেন, বলেন, “জীবনে প্রথমবার এমন আতঙ্ক অনুভব করলাম। ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে রাত কাটাতে হল অনিশ্চয়তার মধ্যে। ভবিষ্যতে যদি নিরাপত্তা আরও কড়া হয়, তাহলে আমাদেরই ভাল হবে।” পুরো ঘটনার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, অভিযুক্ত ইয়োহানাথনের উদ্দেশ্য কী ছিল? সে কি শুধুই মজা করতে গিয়ে এই কাজ করেছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল? পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত মানসিকভাবে স্থিতিশীল কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হচ্ছে। আগামী দিনে এই ঘটনার তদন্ত আরও গভীরে গিয়ে দেখবে সিআইডি ও সন্ত্রাসবাদ দমন শাখা। অপরদিকে, কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (CISF) জানিয়েছে, “বিমানবন্দরে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক যাত্রীদের যাচাই প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হবে যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যায়।”
সবমিলিয়ে, বারাণসীর এই বোমাতঙ্কের ঘটনা একদিকে যেমন মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল, অন্যদিকে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের ফলে বড় কোনও অঘটন ঘটেনি – এই বিষয়টিও স্বস্তি দিয়েছে। তবে সতর্কবার্তা রয়ে গেল – নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের ঠাট্টা বা ভুলভাল মন্তব্যের জায়গা নেই, আর আইনও সেই অনুযায়ী কঠোর।