Body feels uncomfortable after drinking milk, know the reason:দুধ খাওয়ার পর যদি আপনার পেটে গড়গড় শব্দ হয়, হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হয় কিংবা গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে বুঝবেন আপনার শরীরে হয়তো দুধের প্রতি একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এই সমস্যার কারণ হতে পারে ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স। অনেকের ক্ষেত্রে দুধ বা দুধ থেকে তৈরি খাবার হজম করাটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মতো অঞ্চলে এই সমস্যাটি অনেক বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের শরীরে দুধের ল্যাকটোজ হজম করার জন্য বিশেষ ধরনের একটি এনজাইম প্রয়োজন, যার নাম ‘ল্যাক্টেজ’। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের শরীরে এই এনজাইমটির উৎপাদন কমে যায়। ফলে দুধ খাওয়ার পর হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়।বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সের সমস্যায় ভোগেন। দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে এই সমস্যা তুলনামূলক বেশি। তবে উত্তর ইউরোপ এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলির মানুষের মধ্যে এই সমস্যা কম দেখা যায়।পূর্ব মেদিনীপুরের চাউলখোলা গ্রামের বাসিন্দা কুঞ্জমণি দাস বললেন, “আমার ছোটবেলায় দুধ খাওয়ার পর পেট ব্যথা হতো। মা বলতেন, হয়তো ঠান্ডা লেগেছে। কিন্তু বড় হয়ে দেখি, শুধু দুধ খেলেই পেটের সমস্যা বাড়ে। পরে ডাক্তার জানালেন, আমি নাকি ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সে ভুগছি।”চাউলখোলার আরেক বাসিন্দা বীরেন সাউয়ের মতে, “আগে আমাদের গ্রামে দুধই ছিল পুষ্টির মূল উৎস। কিন্তু এখন অনেকেই দুধ খেলেই পেটের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারদের কাছে যান। শুনেছি এই সমস্যার কারণ ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স।”
ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স থাকলে দুধ ও দুধজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে কি? চিকিৎসকদের মতে, সম্পূর্ণ দুধ না খেয়ে ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া দই, পনির বা দুধের ফারমেন্টেড ফর্ম সহজে হজম হয়। তাই এই ধরনের খাবার খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া বাজারে এখন ল্যাক্টেজ এনজাইমের ক্যাপসুল পাওয়া যায়, যা খাওয়ার আগে খেলে দুধ হজমে সমস্যা কম হয়।কলকাতার বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ডা. অনিন্দিতা সেন বলেন, “দুধ খেলে যদি শরীরে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দুধ না খেয়ে ল্যাকটোজ-ফ্রি বিকল্পগুলির দিকে ঝোঁকা ভালো। এছাড়া, দুধ ছাড়া অন্যান্য খাবার থেকেও ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তবে দুধের বিষয়ে কোনও সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”দুধ নিয়ে এই ধরনের হজমের সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হলেও, সচেতনতার অভাবে অনেকেই এই সমস্যার মোকাবিলা ঠিকমতো করতে পারেন না।
তাই ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল-কলেজ এবং পাড়ায় পাড়ায় স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।চাউলখোলা গ্রামে দাস পরিবারের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোয় দুধ দিয়ে বিভিন্ন প্রসাদ তৈরি হয়। তবে ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সের সমস্যার কারণে অনেকেই দুধের প্রসাদ না খেয়ে ফলমূল বা মিষ্টি বেছে নিচ্ছেন। এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও প্রভাব ফেলছে।দুধের প্রতি অ্যালার্জি বা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে এই সমস্যাকে মোকাবিলা করা সম্ভব। দুধ না খেয়ে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়া, সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ল্যাকটোজ-ফ্রি বিকল্প খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। তাই, দুধ নিয়ে সমস্যা থাকলে অবহেলা নয়, সঠিক সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই একমাত্র উপায়।