Black leopard spotted in Odisha:-ওড়িশার নয়াগড়ের ঘন জঙ্গলে দেখা মিলেছে বিরল কালো চিতার, যা প্রাকৃতিক জগতের এক অভূতপূর্ব ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবিতে স্পষ্ট দেখা গেছে, একটি কালো চিতা তার শাবককে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের গভীরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কালো চিতা, যাকে সাধারণত “মেলানিস্টিক লেপার্ড” বলা হয়, সহজে দেখা মেলে না এবং এরা অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। ফলে এদের ছবি ধরা পড়া যেমন বিরল, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ।
এই চমকপ্রদ আবিষ্কারে উচ্ছ্বসিত ওড়িশার বন দফতর। প্রধান মুখ্য বনপাল প্রেম কুমার ঝা নিজেই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন এবং লিখেছেন, ‘‘বিরল কালো চিতার দেখা মিলেছে নয়াগড়ের জঙ্গলে। আমরা এর গতিবিধির উপর নজর রাখছি।’’ তিনি জানান, এই চিতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যেই বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে এবং তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।কালো চিতার বৈজ্ঞানিক নাম Panthera pardus, তবে এরা সাধারণ লেপার্ডের একটি মেলানিস্টিক ভ্যারিয়েন্ট। এর চামড়ায় থাকা অতিরিক্ত মেলানিনের কারণে এদের গায়ের রং গভীর কালো দেখায়। পৃথিবীতে খুবই অল্পসংখ্যক কালো চিতা রয়েছে, এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এদের দেখা পাওয়া অত্যন্ত বিরল।২০১৮ সালে প্রথম ওড়িশার হেমগিরি অরণ্যে একটি কালো চিতা ধরা পড়ে ট্র্যাপ ক্যামেরায়। এরপর ২০২৩ সালের বাঘশুমারির সময় দু’টি ভিন্ন জঙ্গলে কালো চিতার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
সাম্প্রতিক বন দফতরের সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, রাজ্যে বর্তমানে ৬৯৬টি চিতাবাঘ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কালো চিতার দেখা মেলায় গবেষক এবং প্রকৃতিপ্রেমীদের মধ্যে উৎসাহ বেড়েছে।নয়াগড়ের স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে একদিকে যেমন উত্তেজনা, অন্যদিকে আতঙ্কও কাজ করছে। গ্রামের মানুষজন জানিয়েছেন, চিতাবাঘ সাধারণত মানুষের বসতির দিকে আসে না। তবে এদের চলাচল ঘন জঙ্গলের আশপাশে থাকলে গবাদি পশু ক্ষতির শিকার হতে পারে। স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “আমরা এমন চিতা কখনো দেখিনি। এটি প্রকৃতির এক বিস্ময়। তবে, আমরা চাই এটি নিরাপদে থাকুক।”ওড়িশার বন দফতর ইতিমধ্যেই এই কালো চিতার সুরক্ষার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখতে আরও ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে এবং এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। অল ওড়িশা লেপার্ড এস্টিমেশন ২০২৪ অনুযায়ী, রাজ্যের তিনটি প্রধান জঙ্গলে এ ধরনের চিতার উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে।
কালো চিতার উপস্থিতি প্রমাণ করে যে ওড়িশার বনাঞ্চল এখনও যথেষ্ট জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সুরক্ষিত। এটি বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের গুরুত্বকেও নতুন মাত্রায় তুলে ধরেছে। প্রকৃতিপ্রেমী এবং বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি শুধুমাত্র ওড়িশার নয়, সারা দেশের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ উদ্যোগকে অনুপ্রাণিত করবে।বন দফতরের মুখ্য কর্মকর্তা প্রেম কুমার ঝা বলেন, “কালো চিতার দেখা পাওয়া অত্যন্ত গর্বের বিষয়, তবে এটি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা চাই এই প্রাণীগুলি নিরাপদে বাঁচুক এবং তাদের পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকুক।” তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। বেড়ে চলা বনাঞ্চল ধ্বংস এবং অবৈধ শিকার বন্যপ্রাণীদের জন্য প্রধান হুমকি।এই ঘটনাটি আমাদের শেখায় যে প্রকৃতির সংরক্ষণ কতটা জরুরি। স্থানীয় বাসিন্দাদের এবং শিশুদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে বন দফতর বিশেষ কর্মশালা চালু করার কথা ভাবছে। এই ধরনের বিরল প্রাণী সংরক্ষণ শুধুমাত্র পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।