Friday, April 11, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যআসানসোলে ডিআই অফিসে তালা মেরে বিক্ষোভ বিজেপির

আসানসোলে ডিআই অফিসে তালা মেরে বিক্ষোভ বিজেপির

BJP protests by locking DI office in Asansol: আসানসোল শহরের শান্ত পরিবেশ হঠাৎই ভেঙে পড়ল রাজনৈতিক উত্তেজনায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের আশ্রম মোড় চত্বরে জমায়েত হতে শুরু করলেন শতাধিক বিজেপি কর্মী-সমর্থক, তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন আর স্লোগানের ধ্বনি। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবার সরাসরি ডিআই অফিসের (জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক) দপ্তরে তালা মেরে বিক্ষোভে নামলেন আসানসোল জেলা বিজেপির নেতা-কর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, এই সরকার শুধু দুর্নীতির আশ্রয়ই নিচ্ছে না, বরং শিক্ষাক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ পুরো ধ্বংস করছে। ডিআই অফিস অভিযানে নেতৃত্ব দেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল নিজে। তিনি বলেন, “যেখানে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার কথা, সেখানে এই রাজ্য সরকার কেবলই কমিশন আর চুক্তির খেলা খেলছে। আমরা এই অনাচার আর সহ্য করব না।” বিজেপির পক্ষ থেকে প্রথমে আশ্রম মোড় থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি ঘুরে ডিআই অফিসের সামনে এসে থামে। মিছিলের শেষে উত্তেজনা ছড়ায় যখন বিজেপি কর্মীরা ডিআই অফিসের গেটের নিচে তালা লাগিয়ে দেয়। কিছু কর্মী আবার পাঁচিল টপকে অফিস চত্বরে প্রবেশ করেন এবং সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন। এই সময় অফিসে কর্মরত কর্মচারীরা আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং পরে আলোচনার মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের সরানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “শিক্ষা নয়, দুর্নীতি চাই – এই কি সরকারের নীতি?”, “শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা ফেরাও”, “তালাবন্দি দুর্নীতিগ্রস্ত ডিআই অফিস চাই”। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, “আমার ভাই তিন বছর আগে পরীক্ষায় পাশ করেছে, এখনও চাকরি পায়নি। অথচ টাকা দিলেই চাকরি হচ্ছে – এ কেমন বিচার?” অন্য এক বিক্ষোভকারী মহিলা বলেন, “আমার মেয়ে স্নাতক, বিএড করেছে, কিন্তু টাকার জোরে পিছনের ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে। এর প্রতিবাদ না করলে কীভাবে চলবে?” এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন যথেষ্ট চাপে পড়ে যায়। তবে ডিআই অফিসের আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি, তাঁরা বলেন বিষয়টি রাজনৈতিক এবং প্রশাসনের উচ্চস্তরে জানানো হয়েছে। বিজেপির দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পদ্ধতিতে করতে হবে, এবং সেইসব প্রার্থী যারা প্রকৃত মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার উপযুক্ত, তাঁদের অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে। অগ্নিমিত্রা পাল জানান, “আসানসোলের শিক্ষিত যুব সমাজ চরম হতাশার মধ্যে আছে। চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যারা পরিশ্রম করছে, তাদের চোখে শুধু অন্ধকার। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এবার জনগণের স্বার্থে আমাদের পথে নামতেই হল।

BJP protests at Chunchura power station

” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জমে আছে, সেই ক্ষোভকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। তবে তাঁদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচি আইনত সঠিক ছিল কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গেটের তালা ভাঙা কিংবা অফিস চত্বরে জোরপূর্বক প্রবেশ করাটা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্থানীয় এক প্রাক্তন শিক্ষক জানান, “রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা শুধু স্বপ্ন দেখেই আটকে যায়। যদি মেধার বিচারই না হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মকে কী শেখানো হবে?” ডিআই অফিসের কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা এমন আচরণে আতঙ্কিত। এক কর্মী বলেন, “আমরা তো সাধারণ চাকুরে, রাজনৈতিক লড়াইয়ের বলি কেন হব?” তবে বিজেপির বক্তব্য স্পষ্ট – এই প্রতিবাদ ছিল মানুষের রোষের প্রতিফলন, আর কিছু নয়। তাঁরা আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি সরকার ও প্রশাসন কোনও সদুত্তর না দেয়, তাহলে আগামী দিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে তারা। শিক্ষাক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ফেরানো এবং দুর্নীতির অবসান ঘটানো ছাড়া তাঁদের পিছু হটার কোনও প্রশ্ন নেই। এই আন্দোলনের প্রভাব শুধু আসানসোলে নয়, রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও পড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি এই ধরনের আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে জারি থাকে, তবে সরকারকেও হয়তো শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। আগামী দিনে এই ইস্যু রাজনৈতিক নির্বাচনের ময়দানে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলেও মনে করছেন অনেকে। শেষমেশ প্রশ্ন একটাই – শিক্ষার মন্দির কি রাজনীতির খেলাঘর হয়ে উঠছে? যদি তাই হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুধু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments