Bison rampage, 5 injured:ভোরবেলার শান্ত গ্রাম এক মুহূর্তে রূপ নিল তাণ্ডবমঞ্চে। রবিবার সকালে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের পূর্ব বারঘরিয়া গ্রামে হঠাৎ করেই হানা দেয় দুটি বিশালাকৃতির বাইসন। গ্রামের মানুষ তখন প্রতিদিনের মতো গরু বাঁধার কাজে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়েই গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে বাইসন দুটির। এত বড় প্রাণীকে হঠাৎ চোখের সামনে দেখে আতঙ্কে মানুষ ছুটোছুটি শুরু করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুই ব্যক্তি ওই বাইসনের একেবারে সামনে পড়ে যান এবং গুরুতরভাবে জখম হন। তাঁদের বাঁচাতে ছুটে আসেন স্থানীয় আরও কয়েকজন, এবং তাতেই পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়ে ওঠে।বাইসন দুটি তখন আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠে একের পর এক ব্যক্তিকে শিং দিয়ে আঘাত করতে থাকে। পাঁচজন মানুষ আহত হন এই হঠাৎ আক্রমণে। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আহতদের রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে পরে স্থানান্তরিত করা হয় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত রায় জানান, “সকালবেলা আমরা গরু খোঁটায় বাঁধতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে দেখি বাইসন এসে দাঁড়িয়ে। আমাদের কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর বাঁচাতে গিয়ে আরও তিনজন চোট পান।”
স্থানীয় মানুষজনের দাবি, বাইসন দুটির আগমন নিছকই দুর্ঘটনা নয়, বরং বনদপ্তরের নজরদারির অভাবেই এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে এমন ঘটনা ঘটে। কখনও হাতি, কখনও বাইসন লোকালয়ে ঢুকে পড়ে, আর তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটান। আজকের এই ঘটনায় গোটা এলাকায় একটা ভয় ও আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে। বহু মানুষ এখনও ঘরবন্দি অবস্থায় রয়েছেন, কেউ কেউ গাছের ওপরে উঠে বা ছাদের কোণায় বসে বাইসনদের গতিবিধি নজরে রাখছেন।বনদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, সম্ভবত পাশের গরুমারা বন বা রামসাই এলাকা থেকে পথ ভুল করে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বাইসন দুটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত বনকর্মী প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “আমরা খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছি। আমাদের দল বাইসনগুলিকে ঘিরে রেখেছে যাতে তারা আর কারও ক্ষতি না করতে পারে। যথাসম্ভব শান্তভাবে তাদের জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে লোকজন যদি ভিড় করে, তাহলে প্রাণীগুলি আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বনদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এলাকায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে, কৃষকদের চাষের কাজে যাওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও, প্রাণীদলটিকে শান্ত করতে ট্র্যাংকুলাইজার ব্যবহার করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও বনদপ্তর সূত্রে খবর।প্রাণীপ্রেমী ও পরিবেশবিদদের মতে, বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে তার মূল কারণ হল বনাঞ্চলের ভেতরে থাকা প্রাণীদের বাসস্থানের সংকট। লাগাতার বনভূমি ধ্বংস ও মানববসতির সম্প্রসারণের কারণে বন্যপ্রাণীরা খাবার ও নিরাপত্তার খোঁজে লোকালয়ে চলে আসছে। পরিবেশকর্মী অলোকেশ ঘোষ বলেন, “মানুষের লোভ ও অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন বন ও জীবজন্তুদের বেঁচে থাকার সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।”