Big win for Virat Kohli with a night’s worth of goals : ইডেন গার্ডেন্স। ২২ মার্চ, ২০২৫। কলকাতার আকাশে বৃষ্টির পূর্বাভাস, মাঠে উত্তেজনার ঝড়, আর গ্যালারিতে হাজার হাজার সমর্থকের গর্জন— সব মিলিয়ে এক জমজমাট আইপিএল মরশুমের শুরু। কেকেআর বনাম আরসিবি ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ তখন সপ্তমে। কিন্তু এই ম্যাচটা যে ইতিহাস গড়ে ফেলবে, সেটা হয়তো কেউ ভাবেনি। কেকেআর-কে সাত উইকেটে হারিয়ে আরসিবি সেই বহু দিনের অপেক্ষা, অপমান আর ব্যর্থতার ইতিহাসে নতুন পৃষ্ঠা লিখল। বিরাটদের এই জয় শুধু একটা ম্যাচ জেতা নয়, যেন গত ১৫ বছরের সমস্ত ক্ষোভ, হতাশা আর আইপিএল ট্রফি না জেতার দুঃখের প্রতিশোধ।
২০০৮ সালের প্রথম আইপিএল ম্যাচের কথা মনে আছে? সেদিন ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝোড়ো সেঞ্চুরির সামনে আরসিবি গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৮২ রানে। আবার ২০১৭-র সেই দিন, যখন কেকেআর-এর স্পিন জাদুতে ৪৯ রানে অলআউট হয়েছিল আরসিবি। এসব ঘটনার স্মৃতি যেন এখনও তাড়া করে বেড়ায় আরসিবি সমর্থকদের। কিন্তু ২০২৫-এর এই উদ্বোধনী ম্যাচে, সেই সব পুরনো অপমানের জবাব দিল বিরাট বাহিনী। ১৭৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ফিল সল্টের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং আর বিরাট কোহলির রাজকীয় ইনিংসে কেকেআর-এর স্বপ্ন একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
কেকেআর-এর ব্যাটিং: শুরু ভালো, শেষটা হতাশাজনক
টসে জিতে আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। মাথায় তখন বৃষ্টির সম্ভাবনা। কিন্তু প্রথম ১০ ওভারেই মনে হচ্ছিল, এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যেতে পারে। সুনীল নারিন আর অজিঙ্কা রাহানে মিলে এমন আক্রমণাত্মক শুরু করলেন যে, আরসিবি বোলারদের একের পর এক বল মাঠের বাইরে চলে যাচ্ছিল। নারিনের ব্যাট থেকে ২৬ বলে ৪৪ রান, আর রাহানের ঝোড়ো ৩১ বলে ৫৬। মনে হচ্ছিল, কেকেআর নির্ধারিত ২০ ওভারে ২০০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে।
কিন্তু এখানেই গল্প ঘুরে যায়। রাহানে আউট হতেই যেন কেকেআর-এর ব্যাটিং ছন্দ হারিয়ে ফেলে। মিডল অর্ডারে রাসেল, রিংকু সিং, নীতিশ রানা— সবাই ধারাবাহিক ব্যর্থ। আরসিবি বোলার যশ হেজেলউড দুর্দান্ত বল করেন, আর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন। শেষমেশ কেকেআর ১৭৪ রানেই থেমে যায়।
আরসিবি-এর রান তাড়া: কোহলি-সল্ট জুটির আগুন ঝরানো ব্যাটিং
১৭৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা গেল ফিল সল্ট আর বিরাট কোহলিকে। সল্ট শুরু থেকেই কেকেআর-এর বোলারদের ওপর চড়াও হলেন। মাত্র ৩১ বলে ৫৬ রান করলেন তিনি। অন্যদিকে, বিরাট কোহলি তার স্বাভাবিক রাজকীয় ব্যাটিং স্টাইলে রান তুলতে থাকলেন। প্রথম ১০ ওভারেই আরসিবি ৯৫ রানে পৌঁছে গেল। ম্যাচের রাশ তখন পুরোপুরি বিরাটদের হাতে।
সল্ট যখন আউট হলেন, তখন কাজের বেশিরভাগটাই হয়ে গেছে। এরপর রজত পাতিদার ১৬ বলে ৩৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে ম্যাচটা একেবারে কেকেআর-এর হাত থেকে ছিনিয়ে নিল আরসিবি। বিরাট কোহলি ৫৯ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করলেন।
কোথায় গেল কেকেআর-এর স্পিন জাদু?
কেকেআর বরাবরই স্পিনারদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই ম্যাচে বরুণ চক্রবর্তী, সুনীল নারিনদের স্পিন কিছুতেই কাজ করল না। আরসিবি-র ব্যাটসম্যানরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তারা সহজেই স্পিনারদের বল মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিল। রাসেলের অলরাউন্ডার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বল হাতে কিংবা ব্যাট হাতে, কোনও দিকেই তিনি বিশেষ কিছু করতে পারলেন না।
ম্যাচের নায়করা: কোহলি, সল্ট আর হেজেলউড
এই ম্যাচের তিন নায়ক— বিরাট কোহলি, ফিল সল্ট আর যশ হেজেলউড। কোহলির ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। তার ৫৯ রানের ইনিংস যেন দেখিয়ে দিল, কেন তিনি ‘কিং কোহলি’। অন্যদিকে, ফিল সল্টের ৩১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটি সত্যিই অসাধারণ। কেকেআর দল এই ম্যাচের আগে সল্টকে দলে নেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছিল, কিন্তু শেষমেশ তাকে না নিয়ে বড় ভুল করল। আর যশ হেজেলউডের কথা না বললেই নয়। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে কেকেআর-এর ব্যাটিং লাইনআপকে চাপে ফেলেছিলেন।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়া জয়
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। নেটিজেনরা মজা করে বলছেন, ‘‘২০০৮-এর অপমানের বদলা সুদে-আসলে নিয়ে নিল আরসিবি।’’ কেউ লিখেছেন, ‘‘বিরাট কোহলি মানেই ক্লাস।’’ আবার কেউ রাসেল আর বরুণ চক্রবর্তীর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ক্রিকেট বিশ্লেষক অরিন্দম ঘোষ জানালেন, ‘‘এই ম্যাচটি দেখিয়ে দিল, আরসিবি এখন আর সেই পুরনো আরসিবি নেই। তারা দলগতভাবে খেলছে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে এবং সল্ট, পাতিদারের মতো তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে এই বছর আরসিবি আইপিএল ট্রফি জেতার বড় দাবিদার হতে পারে।’’
উপসংহার: আরসিবি-এর স্বপ্ন কি এবার পূরণ হবে?
প্রথম ম্যাচেই আরসিবি যে পারফরম্যান্স দেখাল, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই জয়ে শুধু একটা ম্যাচ নয়, দীর্ঘদিনের হতাশা আর অপমানের জবাব দিল আরসিবি। এবার কি বিরাটদের হাতে ধরা দেবে সেই বহু প্রতীক্ষিত আইপিএল ট্রফি? সেই উত্তর হয়তো সময়ই দেবে। তবে প্রথম ম্যাচের এই পারফরম্যান্স দেখার পর আরসিবি সমর্থকদের মনে আশা জাগাটা একেবারেই স্বাভাবিক।