মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহর এবার আলোচনার কেন্দ্রে। ইন্দোর প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শহরে কোনও ভিক্ষুককে অর্থ সাহায্য করলেই দায়ের হবে এফআইআর। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য? ইন্দোরকে একটি ভিক্ষুকমুক্ত শহরে পরিণত করা।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
ইন্দোর প্রশাসনের মতে, ভিক্ষাবৃত্তি একটি সামাজিক সমস্যা। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বিশেষ পাইলট প্রকল্প চালু রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ১০টি শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এই শহরগুলি হল দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, লখনউ, মুম্বাই, নাগপুর, পাটনা, আহমেদাবাদ এবং ইন্দোর। ইন্দোর এই তালিকায় থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেটি ইতিমধ্যেই পরিচ্ছন্নতার জন্য সারা দেশে খ্যাতি অর্জন করেছে। এবার এই উদ্যোগের মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগোতে চাইছে ইন্দোর।
প্রশাসনের যুক্তি
ইন্দোরের জেলা প্রশাসক আশিস সিং স্পষ্ট জানিয়েছেন, “এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মানুষকে বের করে এনে সমাজে পুনর্বাসন দেওয়া। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিযানে দেখেছি, বহু ভিক্ষুকের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও তারা অভ্যাসবশত ভিক্ষা করছে। এমনকি, অনেক সময় ভিক্ষার আড়ালে অপরাধমূলক কার্যকলাপও চলছে। তাই কড়া পদক্ষেপ জরুরি।”
এক সরকারি অভিযানে দেখা গিয়েছে, এক বৃদ্ধা ভিক্ষুকের কাছে থেকে পাওয়া গিয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। আবার, কারও পাকা বাড়ি রয়েছে বা সন্তান ভালো চাকরিতে নিযুক্ত। রাজস্থান থেকে একটি পরিবার ইন্দোরে এসে হোটেলে থেকে ভিক্ষা করছিল—এমন চিত্রও উঠে এসেছে।
জনমতের প্রতিক্রিয়া
ইন্দোরের মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কিছু নাগরিক এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মুকেশ জৈন বলেন, “ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হলে শহরের মানসিক ও সামাজিক পরিবেশ আরও উন্নত হবে। তবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।” অন্যদিকে, অনেকেই সমালোচনা করেছেন এই সিদ্ধান্তের। এক সমাজকর্মী অরুন্ধতী মিশ্র বলেন, “ভিক্ষুকদের সাহায্য না করলে তারা কীভাবে বাঁচবে? প্রশাসন পুনর্বাসনের কাজ ঠিকভাবে করছে কি না, সেটি আগে দেখা উচিত।”
পুনর্বাসনের ব্যবস্থা
ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য ইতিমধ্যেই বিশেষ শিবির চালু করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য খাবার, আশ্রয় এবং কাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নারায়ণ সিং কুশওয়াহা জানান, “আমরা চাই, কোনও নাগরিক ভিক্ষাবৃত্তি না করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া, কিন্তু আমরা আশাবাদী।”
ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই পদক্ষেপ ইন্দোর শহরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। ইতিবাচক দিক হলো, এটি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন এবং সুস্থ সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। তবে, যদি পুনর্বাসন প্রকল্পগুলি সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে এটি ভিক্ষুকদের জীবনে আরও বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

একটি বৃহত্তর বার্তা
এই সিদ্ধান্ত শুধু ইন্দোর নয়, গোটা দেশকে একটি বার্তা দিচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তি সমস্যার সমাধান করতে হলে সমাজ এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার এবং এনজিওদের আরও উদ্যোগ নিতে হবে।