Friday, April 11, 2025
Google search engine
HomeUncategorisedবিছানা গাড়ি!

বিছানা গাড়ি!

Bed car! : জামুরিয়া বাজার যেন ধীরে ধীরে আগুনের ভয়াবহ ছায়ায় ঢেকে যাচ্ছে—শনিবার সকালটা সেই কথারই জ্বলন্ত প্রমাণ। সকাল প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ জামুরিয়া বাজারে একটি পুরনো কাপড়ের দোকান থেকে হঠাৎ ধোঁয়া ও আগুনের লেলিহান শিখা উঠতে দেখে আতঙ্কে ছুটে যান আশপাশের দোকানদার, ক্রেতা এবং পথচারীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগুন প্রথমে দোকানের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন এতটাই দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়ে যে বাজারের একাংশে হাহাকার পড়ে যায়। কাপড়ের দোকানে সিল্ক, সুতি, শাড়ি, থ্রী-পিস, চাদরসহ প্রচুর দাহ্য বস্তু থাকায় আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আশেপাশের মানুষ প্রথমেই পানীয় জলের কল, ড্রেনের জলাশয় বা ছোট ছোট পুকুর থেকে জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, কেউ কেউ ধুলোবালি ছিটিয়ে আগুন ঠেকাতে উদ্যত হন, কিন্তু আগুন তাদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে মুহূর্তের মধ্যেই দোকানটিকে গ্রাস করে ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দা লতিফা বিবি বললেন, “আমরা এমন আগুন জীবনে দেখিনি, কয়েক সেকেন্ডেই দোকানটা যেন আগুনের হাঁড়িতে ঢুকে গেল। ছোট ছোট ছেলেরা তো কান্না করতে করতে পালাচ্ছিল।” খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসে জামুরিয়া দমকল

কেন্দ্র থেকে দুটি ইঞ্জিন, পরে আসানসোল থেকে আরও একটি দমকল ইঞ্জিন আনা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকল কর্মীরা জানান, দোকানে প্রচুর কাপড় থাকায় আগুন ছড়াতে খুব বেশি সময় লাগেনি। দুঃখের বিষয়, দোকানে কোনো ধরনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। দোকানের মালিক পরিতোষ দে, যিনি বহু বছর ধরে এই দোকান চালাচ্ছেন, ঘটনার পর স্তব্ধ হয়ে যান। চোখে জল নিয়ে বললেন, “বাবা-মা মারা যাওয়ার পর একহাতে এই দোকানটাকে বড় করেছিলাম। ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিল এই দোকান। এখন আমি একেবারে শূন্য।” স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মৃণাল ঘোষ বলেন, “এটি এই বছর জামুরিয়া বাজারে দ্বিতীয়বার এমন বড় অগ্নিকাণ্ড। জানুয়ারিতেও একটি ভাঙারি দোকানে আগুন লেগে তিনটি দোকান ছাই হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসন বা বিদ্যুৎ দফতর থেকে কোনো তদন্ত হয়নি তখন, যার ফল আজকের এই বিপর্যয়।” ঘটনাটির পর থেকেই অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই তাদের দোকান বন্ধ করে দেন, কেউ কেউ নতুন করে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম কিনছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দমকল ও বিদ্যুৎ দফতরের যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজারের বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং দোকানগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা পরিদর্শন চলবে। পুলিশ জানিয়েছে, আগুনের উৎস এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, তবে প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনাই বেশি। স্থানীয় থানা ইনচার্জ বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ, দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ এবং আশেপাশের লোকজনের বয়ান নেওয়া হচ্ছে। অপরাধমূলক কোনো কারণ থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ঘটনাটির সময় ওই দোকানের পাশের মোবাইল দোকানদার রহিম শেখ জানান, “আমি দোকানে বসে মোবাইল ঠিক করছিলাম, হঠাৎ ধোঁয়া দেখে বাইরে আসতেই দেখি আগুন। একটুর জন্য আমার দোকানটাও চলে যাচ্ছিল, আমি

thumb 42888

তো প্রাণপণে মাল সরাতে শুরু করলাম।” এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর প্রশ্ন, “জামুরিয়ার মত এত বড় বাজারে কেন আজও কোনো আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই?” স্থানীয় সমাজকর্মী চন্দন রায় বলেন, “এটা কেবল দুর্ঘটনা নয়, এটা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। একের পর এক আগুন লাগছে আর আমরা বসে বসে তা দেখছি। এবার সময় এসেছে সব দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বাধ্যতামূলক করা, বৈদ্যুতিক তার সার্ভে করা এবং সচেতনতা কর্মসূচি শুরু করার।” এদিকে, যারা সকালবেলা বাজারে এসেছিলেন, তারা বলছেন, “সকালবেলায় হালকা কেনাকাটা করতে এসেছিলাম, আর ফিরছি আতঙ্ক নিয়ে।” যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের জন্য স্থানীয় প্রশাসন কিছু আর্থিক সাহায্য এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে। তবে দোকান মালিকদের দাবি, সরকারি সাহায্য সময়ে না এলে ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠা কঠিন হবে। জামুরিয়ার MLA বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে এসেছি। প্রশাসনকে বলেছি তদন্ত দ্রুত শেষ করতে এবং প্রয়োজনে দোকানদারদের জন্য বিশেষ পুনর্গঠন প্যাকেজ তৈরি করতে।” এই ঘটনার পর গোটা জামুরিয়া বাজারে আতঙ্ক, ক্ষোভ এবং হতাশা একসঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ, ক্রেতা, দোকানদার সবাই চাইছেন, এবার যেন প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। শুধু তদন্ত নয়, এইবার প্রয়োগযোগ্য সমাধান দরকার। আগুন নেভানোর জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন, ফায়ার ট্রেনিং, দোকানে ফায়ার অ্যালার্ম এবং নিয়মিত ফায়ার ড্রিল—এসব বাস্তবায়িত না হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতেও হতে থাকবে। জামুরিয়া বাজার শুধু একটি বাজার নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি প্রয়াস, যার ক্ষতি মানে শুধু অর্থের নয়, মানুষের আশা, ভবিষ্যত এবং জীবনযাত্রার উপর সরাসরি আঘাত। প্রশাসনের কাছে সাধারণ মানুষের একটাই আবেদন—আর যেন আগুন না জ্বলে, আগেই জেগে উঠুক আমাদের ব্যবস্থা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments