Beaches discovered on Mars : মঙ্গলগ্রহ নিয়ে মানুষের কৌতূহল চিরকালীন। একসময় কি লাল গ্রহের বুকে ছিল জল? প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরা দিনের পর দিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর এবার, সেই গবেষণায় এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল! চিনের মহাকাশযান Zhurong Rover জানিয়েছে, মঙ্গলের উত্তরের সমতলে, মাটির ২৬০ ফুট গভীরে এক প্রাচীন সমুদ্রসৈকতের চিহ্ন পাওয়া গেছে! ঠিক যেন পৃথিবীর সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের মতো পাথুরে স্তর, যা দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, কোটি কোটি বছর আগে মঙ্গলগ্রহে সত্যিই ছিল এক বিশাল মহাসাগর!২০২১ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সক্রিয় থাকা Zhurong Rover মঙ্গলের মাটির গভীরে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে গবেষণা চালায়। এই মহাকাশযানটি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে মাটির বিভিন্ন স্তরের গঠন বিশ্লেষণ করে। এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের সমতলে এমন কিছু পাথরের স্তর রয়েছে, যা পৃথিবীর সমুদ্রসৈকতের পাথরের মতোই! বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই স্তরগুলি একসময় তরল জলের সংস্পর্শে ছিল, অর্থাৎ সেখানে হয়তো বিশাল জলাশয় বা সমুদ্র ছিল!
মহাকাশ গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের বিস্তীর্ণ সমতল এলাকা একসময় জলে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু তার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ এতদিন পাওয়া যায়নি। এবার, চিনা মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য সেই অনুমানকে অনেকটাই বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।NASA-র বিজ্ঞানী ডক্টর রবার্ট কেলসো জানিয়েছেন,
“এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। মঙ্গলের অতীতে জল ছিল, এমন প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি। কিন্তু এবার যে ধরনের ভূতাত্ত্বিক গঠন পাওয়া গেছে, তা সমুদ্রসৈকতের মতোই। এর মানে, মঙ্গলের উপরিভাগে একসময় হয়তো বিশাল মহাসাগর ছিল!”এই নতুন গবেষণা মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, যেখানে জল ছিল, সেখানে কখনও না কখনও প্রাণের সম্ভাবনাও ছিল। এর ফলে, আগামী দিনে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার অভিযান আরও জোরদার হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই সমুদ্রসৈকত সত্যিই প্রমাণিত হয়, তবে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনায় বিশাল পরিবর্তন আসতে পারে। কারণ, জল থাকলে তার থেকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা সম্ভব, যা মহাকাশচারীদের জন্য বিশাল সুবিধার বিষয়।NASA, ESA (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) এবং CNSA (চিনা মহাকাশ সংস্থা) এখন আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবে। আগামী মিশনগুলিতে এই অঞ্চলগুলিকে আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-ও মঙ্গল গবেষণা প্রকল্পের জন্য নতুন পরিকল্পনা করছে। মঙ্গলযান-২ মিশনে মঙ্গলের মাটির গভীরতর বিশ্লেষণ করা হবে, যাতে বোঝা যায়, এই অঞ্চল আসলে কতটা জলসমৃদ্ধ ছিল এবং সেটি কত বছর আগে শুকিয়ে গেছে।
CNSA-র মুখপাত্র লি ইয়াং বলেন,
“আমরা এই গবেষণার জন্য অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত। মঙ্গলের উত্তর সমতল এলাকায় পাওয়া এই পাথরগুলোর গঠন বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে, সেখানে জল কতদিন আগে ছিল এবং কীভাবে তা হারিয়ে গেছে।”NASA-র বিজ্ঞানী ডক্টর রিচার্ড স্টোর্ক বলেন,
“এই তথ্য আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এতে বোঝা যায়, মঙ্গল একসময় পৃথিবীর মতোই জলসমৃদ্ধ গ্রহ ছিল। যদি জল ছিল, তবে হয়তো একসময় প্রাণও ছিল!”