BCCI changes rules before IPL, captains relieved! : আইপিএল মানেই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এক আলাদাই উন্মাদনা। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই শুরু হয়ে যাবে ১৮তম আইপিএল মরশুম। ২২ শে মার্চ, শনিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (RCB)। তবে এবারের আইপিএল শুধুমাত্র মাঠের উত্তেজনাতেই নয়, বরং বিসিসিআই-এর (BCCI) করা নতুন নিয়মের কারণেও ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। আইপিএলকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে বিসিসিআই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মে বদল এনেছে, যা অধিনায়কদের জন্য খানিকটা স্বস্তি বয়ে এনেছে।
বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে নতুন নিয়ম চালুর উদ্দেশ্য একটাই—মাঠের প্রতিটি ম্যাচ আরও ব্যালান্সড এবং আকর্ষণীয় করে তোলা। বিশেষত, আইপিএলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুটি প্রধান সমস্যার সমাধানেই মূলত এই নতুন নিয়মগুলি কার্যকর করা হয়েছে। প্রথমটি হলো শিশির সমস্যা, এবং দ্বিতীয়টি হলো স্লো ওভার রেট (slow over rate)। এবার আমরা দেখব কীভাবে এই নিয়ম বদল খেলোয়াড়, অধিনায়ক এবং ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশির সমস্যার সমাধানে নতুন বলের নিয়ম
এপ্রিল-মে মাসে আইপিএল মরশুম চলাকালীন রাতের দিকে ভারতের বেশিরভাগ স্টেডিয়ামে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় শিশির। বিশেষত, রাতের ম্যাচে শিশিরের কারণে বোলারদের বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হয়, বল ভিজে যায় এবং এর ফলে স্পিনাররা সঠিক লাইন-লেন্থে বল করতে ব্যর্থ হন। শিশির পড়ার কারণে দ্বিতীয় ইনিংসের বোলারদের সবথেকে বেশি ভুগতে হয়। এবার বিসিসিআই সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে একটি অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২৫ আইপিএল মরশুমে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যবহার করা হবে দুটি নতুন বল। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ১১ ওভার পর্যন্ত একটি বল ব্যবহার হবে, এবং পরবর্তী ৯ ওভার পর্যন্ত ব্যবহার করা হবে আরেকটি নতুন বল। এর ফলে শিশিরের কারণে বল ভিজে যাওয়ার সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। বোলাররা আরামসে বল গ্রিপ করতে পারবেন এবং সঠিকভাবে বোলিং করতে পারবেন। এতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন স্পিনার এবং ডেথ ওভারের পেসাররা।
এই নতুন নিয়ম নিয়ে KKR-এর প্রাক্তন অধিনায়ক এবং বর্তমানে মেন্টর সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, “শিশির সমস্যার কারণে রাতের ম্যাচগুলোতে বোলাররা সবসময়ই অসুবিধায় পড়তো। এবার দুটি নতুন বল ব্যবহারের ফলে বোলারদের সমস্যা অনেকটাই কমবে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে প্রতিযোগিতা আরও জমজমাট হবে।”
স্লো ওভার রেট নিয়মে স্বস্তি পেলেন অধিনায়করা
আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে স্লো ওভার রেটের নিয়মে। এতদিন পর্যন্ত আইপিএলে নিয়ম ছিল, যদি কোনো অধিনায়ক পরপর তিনটি ম্যাচে স্লো ওভার রেট করেন অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে সাসপেন্ড করা হতো। ফলে অধিনায়করা বারবার চাপের মুখে পড়তেন। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে অধিনায়কদের জন্য খানিকটা শিথিলতা আনা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো অধিনায়ক স্লো ওভার রেট করলেও তাকে আর সাসপেন্ড করা হবে না। তবে তার বিরুদ্ধে ডি-মেরিট পয়েন্ট (Demerit Point) যোগ করা হবে।
- প্রতিবার স্লো ওভার রেট হলে অধিনায়কের বিরুদ্ধে একটি ডি-মেরিট পয়েন্ট দেওয়া হবে।
- এই ডি-মেরিট পয়েন্টের মেয়াদ থাকবে ৩৬ মাস পর্যন্ত।
যদি কোনো অধিনায়ক ৩৬ মাসের মধ্যে পর্যাপ্ত ডি-মেরিট পয়েন্ট জমা করেন, তাহলে তাকে ভবিষ্যতে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে। তবে আপাতত সাসপেনশনের ঝুঁকি থেকে তারা মুক্ত থাকবেন।
দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে বলেন, “স্লো ওভার রেটের জন্য অধিনায়কদের উপর যে অতিরিক্ত চাপ ছিল, তা এবার অনেকটাই কমে যাবে। তবে ডি-মেরিট পয়েন্ট জমতে থাকলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।”
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
নতুন নিয়মগুলো নিয়ে ইতিমধ্যেই ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কলকাতার এক ক্রিকেটপ্রেমী সমর্থক বলেন, “ইডেন গার্ডেন্সে রাতের ম্যাচে শিশিরের জন্য বোলাররা সবসময় সমস্যায় পড়তো। এবার যদি দুটি নতুন বলের নিয়ম কাজ করে, তাহলে KKR-এর পারফরম্যান্স আরও ভালো হতে পারে।”
একইভাবে অনেক ভক্ত মনে করছেন, স্লো ওভার রেট নিয়ম শিথিল করায় অধিনায়করা এখন আরও শান্ত মাথায় ম্যাচ খেলতে পারবেন। তবে ডি-মেরিট পয়েন্ট ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হয়, সেটাও সময়ই বলবে।
ভবিষ্যতের প্রভাব
বিসিসিআই-এর এই নতুন নিয়মগুলো যদি কার্যকর হয়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
১. শিশির সমস্যার সমাধান হওয়ায় রাতের ম্যাচগুলোতে প্রতিযোগিতা আরও জমজমাট হবে।
২. স্লো ওভার রেটের নিয়মে শিথিলতা আসায় অধিনায়করা নিজেদের স্বাভাবিক খেলায় মনোনিবেশ করতে পারবেন। তবে ডি-মেরিট পয়েন্টের কারণে ভবিষ্যতে সাসপেনশনের ভয় থেকেই যাবে।
৩. দ্বিতীয় ইনিংসে দুটি নতুন বল ব্যবহারের ফলে ব্যাটসম্যান এবং বোলারদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
উপসংহার
আইপিএল মানেই শুধু ক্রিকেট নয়, এটি এক রকমের আবেগ। নতুন নিয়মে এবারের আইপিএল আরও উত্তেজক এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। বোলার এবং অধিনায়কদের জন্য এই পরিবর্তন স্বস্তিদায়ক হলেও, এর চূড়ান্ত প্রভাব মাঠের খেলায় কতটা পড়ে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।