Barnpur ISCO factory was revived during the reign of Manmohan Singh : বার্নপুর ইস্কো কারখানা, একসময় দেশের অন্যতম পুরোনো এবং বিখ্যাত ইস্পাত কারখানা, দীর্ঘ রুগ্নদশা কাটিয়ে আজ তার সাফল্যের নতুন অধ্যায় লিখছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে একজন দূরদর্শী নেতার অবদান। তিনি হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডক্টর মনমোহন সিং। তাঁর প্রয়াণ দিবসে, বার্নপুর ইস্কো কারখানার শ্রমিক সংগঠন এবং প্রাক্তন কর্মীরা তাঁকে স্মরণ করে আবেগে ভাসছেন। তাঁরা বার বার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন এই মহান নেতার প্রতি, যিনি না থাকলে হয়তো আজ বার্নপুরের ইস্পাত শহরটি শুধুমাত্র ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেত।
৯০-এর দশকে ধুকতে থাকা বার্নপুর ইস্কো কারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়েছিল। কারখানার কর্মচারীদের বেতন অনিয়মিত ছিল, শ্রমিক সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র দশ হাজারে। ২০০৪ সালে কারখানার পাঁচটি শ্রমিক সংগঠন মিলে গড়ে তুলেছিল “ইস্কো বাঁচাও কমিটি।” তারা সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর কাছে আবেদন জানায় কারখানাটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। এর ফলস্বরূপ, ২০০৬ সালে, কারখানাটি সেইল আইএসপির সঙ্গে যুক্ত হয় এবং শুরু হয় এক বিশাল আধুনিকীকরণের যাত্রা।
২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর দিনটি বার্নপুরবাসীর কাছে স্মরণীয়। সেদিন মনমোহন সিং বার্নপুর এয়ারস্ট্রিপে অবতরণ করেন এবং ইস্কো আধুনিকীকরণের শিলান্যাস করেন। এই ঐতিহাসিক মঞ্চে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান, তথ্যমন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী এবং সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মনমোহন সিং বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই কারখানা ভবিষ্যতে দেশের অন্যতম লাভজনক সংস্থা হয়ে উঠবে।” তাঁর সেই দূরদর্শী কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে।
১৮ হাজার কোটি টাকার লগ্নি এবং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কারখানাটি সম্পূর্ণ নতুন চেহারা পায়। ধ্বংসস্তুপের মতো দেখতে কারখানা থেকে উঠে আসে এক ফিনিক্স পাখি। ১ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতার কারখানাটি হয়ে ওঠে ২.৫ মিলিয়ন টনের, এবং বর্তমানে এটি ৭ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। এবার কারখানার উন্নয়নের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার নতুন লগ্নি হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি আজও মনমোহন সিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলছে, “তাঁর জন্যই আজ বার্নপুর ইস্কো কারখানা শ্মশানের চেহারা থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ইস্পাত উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।”
বার্নপুর ইস্কো কারখানার এই সাফল্য শুধু শ্রমিকদের জীবনে নয়, বার্নপুরের স্থানীয় অর্থনীতিতেও এক বিপুল পরিবর্তন এনেছে। কারখানার আধুনিকীকরণের ফলে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান, স্থানীয় বাজারে বেড়েছে আর্থিক কর্মকাণ্ড, এবং এলাকাটি পেয়েছে উন্নত পরিকাঠামো। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, “মনমোহন সিং-এর দূরদর্শিতা আমাদের বার্নপুরকে নতুন জীবন দিয়েছে। আজ এই ইস্পাত কারখানা আমাদের এলাকার উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র।”
তবে এই উন্নয়ন যাত্রার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। পরিবেশগত দিক থেকে, এত বড় ইস্পাত কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করার ফলে বায়ু এবং জলদূষণ বাড়তে পারে। তবে সেইল কর্তৃপক্ষ পরিবেশ সংরক্ষণে ইতিমধ্যেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এ ছাড়া, শ্রমিক সংগঠনগুলি নতুন প্রযুক্তি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের দাবি তুলেছে।
মনমোহন সিং-এর প্রয়াণে আজ বার্নপুরবাসী শোকাহত। তাঁর স্মৃতিচারণে শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, “মনমোহন সিং শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দায়িত্বশীল নেতা, যিনি শ্রমিকদের কষ্ট বুঝতেন এবং তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।” বার্নপুরের ইস্কো কারখানার গল্প শুধু একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের পুনর্জন্মের কাহিনি নয়, এটি এক নেতৃত্বের গল্প, যাঁর কারণে একটি গোটা শহর নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছে।
আজকের এই গল্প প্রমাণ করে, সঠিক নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতার মাধ্যমে কীভাবে একটি রুগ্ন সংস্থা শুধু বেঁচে ওঠে তাই নয়, একটি গোটা এলাকার উন্নয়নের চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়। বার্নপুরবাসী তাদের নতুন সাফল্যের গল্প লিখতে চলেছে, কিন্তু তারা কখনও ভুলবে না সেই দিনগুলো, যখন মনমোহন সিং তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন