Bankura Asansol CNG bus inaugurated:শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার (SBSTC) উদ্যোগে বাঁকুড়া-আসানসোল রুটে সিএনজি (CNG) চালিত বাস পরিষেবা চালু হলো, যা এই অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে সাধারণ বাস পরিষেবা থাকলেও এবার সিএনজি বাস চালু হওয়ায় যাত্রীরা যেমন আরামদায়ক যাত্রার অভিজ্ঞতা পাবেন, তেমনই পরিবেশের দিক থেকেও এটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবান্ধব এই বাসগুলি চালু হওয়ায় দূষণ অনেকটাই কমবে এবং জ্বালানির খরচও সাশ্রয় হবে। বাঁকুড়া থেকে আসানসোলের দূরত্ব ৫৯ কিলোমিটার, আর এই রুটে প্রতিদিন দুটি সময়ে বাস ছাড়বে—সকাল ৮:২৫ ও বিকেল ৪:৫০। নতুন এই বাস পরিষেবায় যাত্রীদের ভাড়া লাগবে মাত্র ৪৮ টাকা, যা সাধ্যের মধ্যে ও সুবিধাজনক।নতুন এই বাস পরিষেবার সূচনা করেন বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্ত্তী, তালডাংরার বিধায়ক ফাল্গুনী সিংহ, বাঁকুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান অলকা সেন মজুমদার, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার ডিভিশনাল ম্যানেজার দীপ্তিমান সিনহা এবং বাঁকুড়া-১ ব্লকের বিডিও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁরা সকলেই এই উদ্যোগের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন এবং দক্ষিণবঙ্গের পরিবহন ব্যবস্থায় এই পরিবর্তনকে যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন।সাংসদ অরূপ চক্রবর্ত্তী বলেন, “সিএনজি চালিত বাস পরিবেশের জন্য যেমন ভালো, তেমনই সাধারণ মানুষের জন্যও সুবিধাজনক। জ্বালানি খরচ কম হওয়ায় ভাড়াও কমানো সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও সিএনজি বাস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।” তালডাংরার বিধায়ক ফাল্গুনী সিংহ জানান, “বাঁকুড়া ও আসানসোলের মধ্যে বহু মানুষ যাতায়াত করেন, বিশেষ করে চাকরিজীবী ও ছাত্র-ছাত্রীরা। এই বাস পরিষেবা তাঁদের জন্য খুবই উপকারী হবে।”এই বাস পরিষেবা চালুর ফলে যাত্রীরা একদিকে যেমন তুলনামূলক কম খরচে যাতায়াত করতে পারবেন, অন্যদিকে পেট্রোল বা ডিজেলচালিত বাসের তুলনায় সিএনজি বাস থেকে কার্বন নিঃসরণও অনেক কম হবে।
পরিবেশবিদদের মতে, ডিজেলচালিত বাসের তুলনায় সিএনজি বাস ২৫-৩০% কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে, যা বায়ু দূষণ কমাতে সাহায্য করবে। বাঁকুড়া ও আসানসোল—দুই শহরেই ধীরে ধীরে বায়ুদূষণের পরিমাণ বাড়ছে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল এবং যানবাহনের কারণে। এই পরিস্থিতিতে সিএনজি বাস চালু হওয়া নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।একজন নিয়মিত যাত্রী অমিতাভ মুখার্জি বলেন, “আমি চাকরির কাজে প্রায়ই বাঁকুড়া থেকে আসানসোল যাই। আগে বাসের পরিবেশ ভালো ছিল না, দূষণের মাত্রাও বেশি ছিল। এখন যদি সিএনজি বাস চলে, তাহলে যাতায়াত আরও আরামদায়ক হবে এবং খরচও কমবে।”এদিকে, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সিএনজি বাস পরিষেবাকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রচার চালানো হবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য রুটেও এই পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম ধাপে বাঁকুড়া-আসানসোল রুটে এই পরিষেবা চালু করা হলো, যাত্রীরা যদি ভালো সাড়া দেন, তাহলে অন্য রুটেও সিএনজি বাস চালানো হবে।”তবে, সিএনজি বাস পরিষেবা চালুর পরেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাঁকুড়া ও আসানসোল অঞ্চলে এখনো পর্যাপ্ত সংখ্যক সিএনজি রিফিলিং স্টেশন নেই। ফলে দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে মাঝপথে কোথাও গ্যাস রিফিল করার প্রয়োজন হতে পারে, যা এখনো পর্যন্ত একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবহন দফতরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই বাঁকুড়া ও আসানসোলে আরও কয়েকটি নতুন সিএনজি স্টেশন চালু করা হবে, যাতে এই পরিষেবা আরও সহজলভ্য হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলও এই পরিষেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। বাঁকুড়া ও আসানসোলের মধ্যে প্রতিদিন বহু ব্যবসায়ী যাতায়াত করেন, এবং কম খরচে ভালো মানের পরিবহন সুবিধা পেলে ব্যবসার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে বলে তাঁদের আশা। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, “সিএনজি বাস চালু হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ব্যবসার কাজে আমাদের প্রতিদিনই বাঁকুড়া-আসানসোল যাতায়াত করতে হয়, এখন খরচ অনেকটাই কমবে।”এই বাস পরিষেবা চালুর ফলে একদিকে যেমন যাত্রীদের সুবিধা হবে, তেমনই এটি রাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির দিকেও একটি বড় পদক্ষেপ। দক্ষিণবঙ্গে পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দূষণ কমানোর যে প্রয়াস, এটি তারই একটি বড় উদাহরণ। পরিবহন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে অন্যান্য রুটেও এই ধরনের বাস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের প্রধান শহরগুলিতে সিএনজি পরিষেবা পুরোপুরি চালু করা হবে।সবমিলিয়ে, বাঁকুড়া-আসানসোল সিএনজি বাস পরিষেবা চালু হওয়ায় এলাকার মানুষ যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই পরিবেশবান্ধব এই পরিষেবা আগামী দিনে পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে। যাত্রীরা কম খরচে আরামদায়ক যাত্রার অভিজ্ঞতা পাবেন এবং বায়ু দূষণও কমবে। এখন দেখার বিষয়, এই উদ্যোগ কতটা সফল হয় এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য রুটে এই পরিষেবা চালু করতে সরকার কতটা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়।