Bangladeshi miscreants kidnap two Indian youths:গঙ্গারামপুর থানার অন্তর্গত অনন্তপুর গ্রামে এই মুহূর্তে এক অজানা আতঙ্ক, ক্ষোভ আর উদ্বেগের পরিবেশ। ভারতের দুই তরুণ – ফিলিপ সোরেন ও অবিনাশ টুডু – প্রতিদিনের মতো নিজেদের জমিতে জল দিতে গিয়েছিলেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টের একেবারে কাছাকাছি এলাকায়। কাটাতারের ওপারে হলেও জমিগুলি ভারতের অংশ, যেখানে অনন্তপুর গ্রামের বহু কৃষক চাষবাস করেন। কিন্তু সেদিন সকালটা ছিল ভিন্ন—সাধারণ কৃষিকাজে গিয়ে তাঁরা আর বাড়ি ফিরলেন না। কিছুক্ষণ পরেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এক ভয়াবহ খবর—দুজন ভারতীয় যুবককে মুখ বেঁধে বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গেছে! ঘটনার পরপরই গ্রামে হইচই শুরু হয়, আতঙ্ক ছড়ায় সীমান্তবর্তী এলাকায়, আর পরিবারগুলোর ওপর যেন নেমে আসে বজ্রাঘাত। দুই পরিবারের কান্না আর প্রতিবেশীদের জটলায় তখন একটাই দাবি—“আমাদের ছেলেদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে দাও।” স্থানীয় বাসিন্দা রঘুনাথ হেমব্রম বললেন, “ওরা কৃষক ছেলে, ওদের কোনো দোষ নেই। জমিতে জল দিচ্ছিল, আর সেখান থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেল! এটা মানবিকতার সীমা লঙ্ঘন।” অনন্তপুরের মতো ছোট গ্রামে এমন অপহরণের ঘটনা এই প্রথম নয়, তবে এতটা স্পষ্টভাবে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বিরল বলেই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে এর কিছুক্ষণ আগের একটি ঘটনায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই বাংলাদেশী নাগরিক এনামুল হক ও মাসুদ রানা জিরো পয়েন্ট অতিক্রম করে ভারতের জমিতে ঢুকে পড়লে তাদের আটক করে বিএসএফ। অভিযোগ উঠেছে, এরই পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা ফিলিপ ও অবিনাশকে অপহরণ করেছে। বিএসএফ সূত্র বলছে, “এই ধরনের প্রতিশোধমূলক আচরণ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা নিয়ম মেনেই বাংলাদেশীদের আটক করেছি।” এর পরপরই শুরু হয়েছে টানটান উত্তেজনা। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (BSF) ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (BGB)-এর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এমন ঘটনায় কূটনৈতিক স্তরেও আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এই ঘটনার পরে অনন্তপুর সীমান্তে নজরদারি অনেকটাই বেড়ে গেছে। সীমান্তের গ্রামবাসীরা এখন আর সাহস পাচ্ছেন না প্রতিদিনের মতো কাঁটাতার পেরিয়ে নিজের জমিতে চাষ করতে যেতে। তাঁদের দাবি, “জমি আমাদের, কিন্তু সেখানে গেলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারব কি না জানি না!” এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সীমান্তে এই ধরনের নিরাপত্তাহীনতা এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফিলিপ ও অবিনাশের পরিবার জানিয়েছে, “ওরা দুজনেই বাড়ির একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য। ওদের হারিয়ে গেলে আমরা শেষ হয়ে যাব। সরকার যেন তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেয়।”
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বলছে, “আমরা বিএসএফ এবং উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এই ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলা পরিষদের এক সদস্য জানিয়েছেন, “এই ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে আনা দরকার। সীমান্তের নিরাপত্তা আর এমন ঝুঁকিপূর্ণ থাকতে পারে না।”

এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব হতে পারে গভীর। যদি দুই যুবককে দ্রুত ফিরিয়ে আনা না যায়, তাহলে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির মানুষ আর জমিতে যেতে সাহস পাবেন না। এটা কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি এনে দিতে পারে। আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এমন মানব অপহরণ নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে দুই দেশের মধ্যে। এর প্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, “এই ধরনের ঘটনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে সীমান্তের শান্তি বিঘ্নিত হবে এবং সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সবচেয়ে বেশি।”
মানবিক দিক থেকেও এটি গভীরভাবে দুঃখজনক। দুটি তরুণের পরিবারের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। তাঁরা এখনও আশায় বুক বেঁধে আছেন—“হয়তো আজ ফিরবে, নয়তো কাল।” এই আশাটুকু যেন শেষ না হয়ে যায়। সরকারের প্রতি এই মুহূর্তে অনুরোধ—বিষয়টি যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, দুই যুবককে যেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনা হয়, আর যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে। একান্তভাবে চাই, সীমান্ত হোক শান্তির, সাহসের নয়।