Bamboo handles instead of iron for tubewells at Anganwadi centers:পানীয় জলের সংকট এক বড় সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামবাংলায়। সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে টিউবওয়েল বসিয়ে এই সংকট মেটানোর চেষ্টা করে চলেছে বহু বছর ধরে। তবে সেই প্রকল্পের বাস্তবায়নে কখনও কখনও দেখা যায় দুর্নীতি, অব্যবস্থা আর অবজ্ঞা—আর তারই এক প্রকট উদাহরণ উঠে এল পূর্বস্থলী ১ নম্বর ব্লকের সমুদ্রগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের জালাহাটি পাঠানপাড়ার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে। যেখানে একটি সরকারি টিউবওয়েল বসানো হলেও তার লোহার হ্যান্ডেলের বদলে বসানো হয়েছে বাঁশের হ্যান্ডেল! এই ঘটনা শুধু অবাক করা নয়, বরং প্রশাসনিক উদাসীনতার এক দৃষ্টান্তও বটে।সম্প্রতি বসানো হয়েছে একটি টিউবওয়েল, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮০,৬৭৮ টাকা। টিউবওয়েলের কাজে খরচ হয়েছে ৬৭,১৩১ টাকা। অর্থাৎ একদিকে যেখানে বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ ফেরত গেছে, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, সেই টিউবওয়েলেই লোহার পরিবর্তে ব্যবহার হয়েছে বাঁশের হ্যান্ডেল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এটি একটি নতুন টিউবওয়েল হওয়া সত্ত্বেও কেন লোহার হ্যান্ডেল বাদ দিয়ে বাঁশের হ্যান্ডেল বসানো হলো, তার কোনো জবাব নেই।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই টিউবওয়েলের জলেই চলে পাশের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নাবান্না ও শিশুদের ব্যবহারের কাজ। কেন্দ্রের কর্মী জানান, বহুবার পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে আবেদন জানিয়েছেন টিউবওয়েলটি মেরামতের জন্য, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয় স্তরের এক কর্মী অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান, হয়তো এটি কোনও “প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যা”, এবং খুব শীঘ্রই হ্যান্ডেলটি বদলে ফেলা হবে। তবে প্রকল্পের ফলকে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে বরাদ্দ ও ব্যয়ের অঙ্ক, যার সঙ্গে বাস্তবের এই হাল মিলছে না কিছুতেই। বিষয়টি নিয়ে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দপ্তরে ফোন করা হলেও, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দেন, তবে নির্দিষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি।গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, “এটা তো নিতান্তই মস্করা। আমরা এত টাকা খরচ করে যদি বাঁশের হ্যান্ডেলের টিউবওয়েল পাই, তাহলে বরাদ্দটা গেল কোথায়?” অন্য একজন প্রবীণ বাসিন্দা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “প্রকল্পের নাম করে টাকা আসছে, কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিশুদের জল দেওয়া হচ্ছে এমন টিউবওয়েল থেকে, যার হ্যান্ডেল যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। এটা একটা চরম অবহেলা।”

একজন অভিভাবক বলেন, “আমার মেয়ে প্রতিদিন ওই অঙ্গনওয়াড়িতে যায়। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।”এই ঘটনা শুধু একটি টিউবওয়েলের সীমাবদ্ধ উদাহরণ নয়। এটি গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তোলে। বরাদ্দ ৮০ হাজার টাকা, খরচ হয়েছে ৬৭ হাজার—এই অবস্থায় মানহীন ও অসম্পূর্ণ কাজ হওয়া মানে সরাসরি জনগণের অধিকার হরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের অব্যবস্থার ফলে সাধারণ মানুষের আস্থা সরকারের প্রকল্পগুলির উপর থেকে হারিয়ে যায়। টিউবওয়েলের মতো একটি মৌলিক পরিষেবায় এই ধরনের ত্রুটি শিশুদের স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বিপদের কারণ হতে পারে।স্থানীয়দের দাবি, এই ধরনের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে জেলাশাসক থেকে শুরু করে লোকাল প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। পঞ্চায়েত স্তরে আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং এই টিউবওয়েলের ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নিরাপদ জল পরিষেবা নিশ্চিত করা প্রাথমিক দায়িত্ব, এবং এই কাজে শৈথিল্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যদি তদন্তে সত্যিই অনিয়মের প্রমাণ মেলে, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠছে।