Sunday, June 1, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যজামাইষষ্ঠীর বাজারে সংকোষ নদীর বাঘা আড়, দাম ৩৫ হাজার টাকা

জামাইষষ্ঠীর বাজারে সংকোষ নদীর বাঘা আড়, দাম ৩৫ হাজার টাকা

Bagha Aard of Sankosh River in Jamaisathi Market, Price 35,000 : জামাইষষ্ঠীর আগের দিন সকালে আলিপুরদুয়ারের সংকোষ নদীর পাড় যেন একেবারে মৎস্যজালে ধরা পড়া স্বপ্নের মতো গল্পের মঞ্চ হয়ে উঠেছিল। ভোরের কুয়াশা কাটতেই নদীর ঘোলা জলে হঠাৎ ধরা পড়ল এক বিশালাকার বাঘা আড় – প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা, ওজন প্রায় ৫০ কেজি! আর সেই খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল চারপাশের গ্রামে-গঞ্জে, সবাই দলে দলে ছুটে এল মাছ দেখতে। এমন বড় মাছ নদী থেকে ধরা পড়া খুব একটা দেখা যায় না, তাই স্থানীয় মানুষজনের মুখে ছিল চওড়া হাসি, চোখে বিস্ময়। বৃষ্টি আর নদীর স্রোত মিলিয়ে এমন সময়ে নদীতে মাছ ধরার উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। মৎস্যজীবী শ্যামল দাস বললেন, “এই সময় নদীর জল ঘোলা হলে বড় মাছ পাড়ে আসে। গতরাতে নৌকা নামিয়ে জাল ফেলেছিলাম, আর ভোরে জাল টানতেই দেখি এই বিশাল মাছটাকে!” সংকোষ নদী, যা অসমের কোকরাঝার আর আলিপুরদুয়ারের সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে চলে, তা বহুদিন ধরেই বড় বড় মাছের জন্য বিখ্যাত। তবে এমন বড় বাঘা আড় ধরা পড়া বিরল।

স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, এই বৃষ্টির মরশুমে নদীর জল ফুলে-ফেঁপে ওঠায় বড় মাছ ঘরছাড়া হয়ে যায়, আর সেই সুযোগেই এই বিশাল মাছ ধরা পড়ে। বাঘা আড় মাছ সাধারণত নদীর গভীরে থাকে, কিন্তু স্রোতের টানে তা ওপরে উঠে আসে, আর তখনই ধরা পড়ে জালে। এদিন শুধু ওই বাঘা আড় নয়, ৪-৫ কেজির আরও কয়েকটি মাছও ধরা পড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি চমক দিয়েছে এই ৫০ কেজির মাছ। খবর পেয়ে ছুটে এলেন অসমের কোকরাঝারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল হাই। তিনি বললেন, “এই রকম মাছ সচরাচর পাওয়া যায় না। আমি ৩৫ হাজার টাকায় কিনেছি, আর এই মাছ বড় হোটেল বা স্পেশাল অর্ডারের জন্য রাখা হবে।” এলাকায় তখন উল্লাসের আবহ, মানুষ হাসছে, ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে, আর কেউ দাম শুনে চোখ বড় করছে! স্থানীয় বাসিন্দা মনোরঞ্জন মণ্ডল বললেন, “জামাইষষ্ঠীর বাজারে এরকম মাছ পেলে জামাইরা তো খুশিই হবে! দাম শুনে একটু আক্ষেপ হচ্ছে, তবে এই দৃশ্য দেখতে পাওয়াটাই এক অভিজ্ঞতা।” জামাইষষ্ঠী তো বাঙালির ঘরে-ঘরে এক আনন্দ-উৎসবের দিন।

FotoJet 2025 05 31T214356.006

জামাইরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মিষ্টি-মণ্ডা খায়, পাতে থাকে ইলিশ, চিংড়ি আর বড় মাছের ভাজা-ঝোল। আর সেই দিনেই যদি এমন এক বাঘা আড় পাতে ওঠে, তাহলে তো কথাই নেই! তবে, এই ধরনের বড় মাছ ধরার ক্ষেত্রে স্থানীয় মৎস্যজীবীদেরও দুশ্চিন্তা আছে। নদীর বড় মাছ কমে যাওয়ায় তাঁরা ভাবছেন, বৃষ্টি-স্রোতের উপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এক মৎস্যজীবী বললেন, “প্রতিবছর এমন বড় মাছ ধরা পড়ে না। নদীতে জল ভালো থাকলে মাছও ভালো পাওয়া যায়, কিন্তু নদীর স্বাস্থ্য খারাপ হলে এভাবে বড় মাছ পাওয়া দুষ্কর।” এদিকে, এই মাছের শিকারে স্থানীয় বাজারেও নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে। স্থানীয় মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সমীরণ পাল জানালেন, “জামাইষষ্ঠীর আগে এমন মাছ পেলে বাজারে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। দামও আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। তবে যাঁরা কিনতে পারেন, তাঁরা নির্দ্বিধায় কিনে নেন।” আগামী দিনে সংকোষ নদী থেকে আরও বড় মাছ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ রয়েছে। কারণ নদীর স্বাস্থ্য ও পরিবেশের পরিবর্তনের কারণে বড় মাছের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। নদীর পাড়ের মানুষ যেমন খুশি, তেমনি আশঙ্কিতও। এদিকে আলিপুরদুয়ারের জেলা মৎস্য আধিকারিক শঙ্কর ঘোষ বললেন, “নদীর বড় মাছ ধরা পড়া যেমন ভালো খবর, তেমনই আমাদের নজর রাখতে হবে, যাতে মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত না হয়। বড় মাছের জন্য একটি ন্যূনতম সুরক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।” এই ধরনের ঘটনা নদী ও মাছের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। নদীপাড়ের মানুষদের জন্য মাছ শুধু জীবিকার উৎস নয়, জীবনেরও প্রতিচ্ছবি। বৃষ্টির জল, নদীর ঢেউ আর মানুষের শিকারের স্বপ্ন – এই তিনের মেলবন্ধনেই তৈরি হয় নদীর গল্প। আর সেই গল্পের এক নতুন অধ্যায় লিখল সংকোষ নদীর বাঘা আড়, যার দাম দাঁড়াল ৩৫ হাজার টাকা!

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments