Monday, July 28, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসআয়ুষ্মান ভারতে বিপুল বকেয়া, মুখ ফিরাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল

আয়ুষ্মান ভারতে বিপুল বকেয়া, মুখ ফিরাচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল

Ayushman Bharat has huge arrears, private hospitals are turning away: ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করে ‘স্বাস্থ্যসাথী’র আদলে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের এই প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল দেশের আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষের জন্য মানসম্মত চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করা। বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় সরকারের তরফ থেকে বহন করার প্রতিশ্রুতি ছিল এই প্রকল্পে। আর এই কর্মসূচির আওতায়, দেশের কোটি কোটি মানুষ পেয়েছেন ‘আয়ুষ্মান ভারত কার্ড’।বর্তমানে এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪১ কোটিরও বেশি কার্ডধারী। তবু বাস্তবে দরিদ্র মানুষরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না—বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত পরিষেবা থেকে। সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে বিশাল অঙ্কের বকেয়া টাকা ও প্রশাসনিক জটিলতা।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) সম্প্রতি প্রকাশ্যে এনেছে এক গুরুতর তথ্য—বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কাছে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারের বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.২১ লক্ষ কোটি টাকা। এই তথ্য প্রকাশের পরই প্রশ্নের মুখে পড়েছে গোটা প্রকল্পটি।নিয়ম অনুযায়ী, কোনও রোগীর চিকিৎসা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সেই হাসপাতালকে বিল পরিশোধ করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই এই সময়সীমা মানা হচ্ছে। দেশের প্রায় ৬৭ লক্ষ রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের পাওনা অর্থ পায়নি।এই দীর্ঘসূত্রিতার ফলেই বহু বেসরকারি হাসপাতাল আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। হাসপাতালে খরচ বাড়ছে, অথচ সরকার তার সময়মতো মূল্য দিচ্ছে না।IMA-র অভিযোগ আরও স্পষ্ট—কেন্দ্র সরকার একদিকে হাসপাতালে কম দামে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দিচ্ছে, অথচ সেই খরচ মেটাতেও অস্বাভাবিক দেরি করছে। ফলতঃ বহু হাসপাতাল প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে বা নতুন করে নাম নথিভুক্ত করতে চাইছে না।এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরও কেন্দ্রের তরফে এখনও কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে কিছুটা দায় রাজ্য সরকারের উপর চাপানোর চেষ্টা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “প্রত্যেক রাজ্যে স্বাস্থ্য সাথী বা রাজ্য-ভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রকল্পের সঙ্গে আয়ুষ্মান ভারত মিশে আছে, আর রাজ্যগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।”তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রক বা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের নোডাল অফিসারদের কাছ থেকে এই বিপুল বকেয়ার বিষয়ে কোনও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা মেলেনি।

eisamay%2Fimport%2Fthumb%2F93770708%2F93770708

বহু বেসরকারি হাসপাতাল এখন আয়ুষ্মান প্রকল্পে রোগী নিতে চাইছে না। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশসহ একাধিক রাজ্যের ছোট ও মাঝারি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক সময় ১ থেকে ১.৫ বছর ধরে বিল জমা পড়ে থাকছে।প্রকল্পটি আর্থিকভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এক যুগান্তকারী উদ্যোগ ছিল, কিন্তু কার্যকারিতার দিক থেকে এখন তাতে বড় ফাঁক দেখা দিচ্ছে।একদিকে সরকারি হিসাব বলছে ৪১ কোটির বেশি মানুষ এই প্রকল্পে উপকৃত হওয়ার কথা, অন্যদিকে বাস্তবচিত্রে দেখা যাচ্ছে, পরিষেবা না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন রোগী ও তাঁদের পরিবার। অর্থ প্রদান ব্যবস্থা সুষ্ঠু না হলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্পের মূল সমস্যা তিনটি:

  1. অর্থমঞ্জুরির দীর্ঘসূত্রিতা
  2. পরিষেবা প্রদানের বিপরীতে বেসরকারি হাসপাতালের বঞ্চনা
  3. রোগীদের প্রকৃত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া
Ayushman Bharat yojana

এই চিত্রটি শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে, যেখানে সরকারি হাসপাতালের অভাবে মানুষ নির্ভর করে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার উপর।বর্তমান পরিস্থিতিতে আয়ুষ্মান ভারতের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। যদি কেন্দ্রীয় সরকার জরুরি ভিত্তিতে এই বকেয়া নিষ্পত্তি না করে, তাহলে আরও বহু হাসপাতাল প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে।এর ফলে, প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য—সবাইকে সুলভ ও মানসম্মত চিকিৎসা প্রদান—ভেস্তে যেতে পারে। আবার, যদি নিয়মিত বিল পরিশোধ এবং ন্যায্য হারে প্যাকেজ রিভিউ করা হয়, তাহলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো আবার প্রকল্পে ফিরে আসতে পারে।দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আয়ুষ্মান ভারত যে একটি যুগান্তকারী সুযোগ হয়ে উঠতে পারত, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কিন্তু সেই সুযোগ যদি প্রশাসনিক অদক্ষতা ও আর্থিক বকেয়ার কারণে ভেস্তে যায়, তবে তা হতাশাজনক।আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ভাবনাটা নিঃসন্দেহে মানবিক এবং প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সরকারের সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে।দরিদ্র মানুষ যাতে প্রকৃত চিকিৎসা পান, এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে সরকারকে ভরসা করে এই প্রকল্পে থাকে, তার জন্য জরুরি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।স্বপ্নের প্রকল্পকে বাস্তবের জমিতে দাঁড় করাতে হলে শুধু ঘোষণা নয়, প্রয়োজন দায়বদ্ধতা ও সঠিক বাস্তবায়ন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments