Awareness meeting to prevent the use of fake medicines:-আপনি কি জানেন, ওষুধের মোড়কে যত আকর্ষণীয় নাম আর মোটা ছাড়ের কথা লেখা থাকে, সব ওষুধ কিন্তু আসল নয়? কখনো কখনো ওই মোড়কের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে জাল ওষুধের ফাঁদ। আর এই জাল ওষুধ শুধুই আপনার পকেটের ক্ষতি নয়, আপনার শরীরের বড়সড় বিপদও ডেকে আনতে পারে। ঠিক এমনটাই জানিয়ে দিল আসানসোলের জেলা হাসপাতাল মোড়ে আয়োজিত এক সচেতনতা সভা। বেঙ্গল ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (bdca) উদ্যোগে আয়োজিত এই পথসভায় মূল বার্তাই ছিল একটাই— জাল ওষুধ চেনার উপায় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকে।bdca-র সদস্যদের মতে, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার লড়াইয়ে বহু অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী মোটা ছাড়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাজারে জাল ওষুধ বিক্রি করছেন। বিশেষত ভিন রাজ্য থেকে এই জাল ওষুধ আনা হচ্ছে, আর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তা সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ হয়ত জানতেই পারছেন না যে তারা যে ওষুধ কিনছেন, সেটা আসল নয়। কিন্তু এতে তাদের জীবন যে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন এই অসাধু ব্যবসায়ীরা, সেটা বুঝতে পারার আগেই হয়ত দেরি হয়ে যাচ্ছে।
জাল ওষুধের সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে সচেতনতার অভাব। পথসভায় উপস্থিত একাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী জানালেন, অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ দোকানদারেরা নিজেরাও বুঝতে পারেন না কোন ওষুধ জাল আর কোনটা আসল। bdca-এর অন্যতম সদস্য রঞ্জিত দাস বলেন, “একটা সাধারণ মোড়কের মতো দেখতে হলেও জাল ওষুধ চেনা বেশ কঠিন। কিন্তু কিছু লক্ষণ দেখে জাল ওষুধ চিনে নেওয়া সম্ভব। সেই বিষয়েই আমরা আজকের সভায় মানুষকে সচেতন করেছি।”এই সচেতন সভায় বিশেষজ্ঞরা জানালেন কীভাবে সাধারণ মানুষ কিছু সহজ কৌশলে জাল ওষুধ চেনার চেষ্টা করতে পারেন।
১. qr কোড স্ক্যান করুন: আজকাল বেশিরভাগ ব্র্যান্ডেড ওষুধের প্যাকেটে qr কোড থাকে। স্ক্যান করলে সরাসরি কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে ওষুধের আসল-জাল পরীক্ষা করা যায়।
২. বৈধ দোকান থেকে কেনাকাটা করুন: মোটা ছাড়ের লোভে প্ররোচিত না হয়ে, নামকরা এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে ওষুধ কিনুন।
৩. প্যাকেট ভালো করে পরীক্ষা করুন: প্যাকেটের গায়ে বানান ভুল, অদ্ভুত প্রিন্টিং বা অস্পষ্ট লোগো থাকলে সেই ওষুধ না কেনাই ভালো।পথসভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মীনাক্ষী সেন। তিনি বলেন, “আমি কখনও ভাবতেও পারিনি যে বাজারে এত জাল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। আমরা তো সাধারণত ডিসকাউন্ট পাওয়ার জন্য কম দামের দোকান থেকে ওষুধ কিনি। কিন্তু আজ জানলাম, আসল ওষুধ কেনার গুরুত্ব কতটা বেশি।”
আরও একজন স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিৎ দাস জানালেন, “আমার বাবার ডায়াবেটিস আছে। তার জন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়। আজকের সভা থেকে অনেক কিছু শিখলাম। এখন থেকে qr কোড স্ক্যান করে তবেই ওষুধ কিনব।”পথসভায় বক্তারা জানান, শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হবে না। প্রশাসনের তরফ থেকেও প্রয়োজন কড়া পদক্ষেপ। বেঙ্গল ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ওষুধের দোকানে আরও কঠোর নজরদারি চালানো হোক। পুলিশের তরফ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ ঘোষ।
তিনি আরও জানান, “যে সমস্ত অসাধু ব্যবসায়ী ভিন রাজ্য থেকে জাল ওষুধ এনে বিক্রি করছেন, তাদের ধরতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কারণ, এই জাল ওষুধ শুধু সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে না, বরং ওষুধ ব্যবসার ওপরেও একটা খারাপ প্রভাব ফেলছে।”bdca-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাল ওষুধ নিয়ে সচেতনতা আরও বাড়াতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এমন সচেতনতা সভার আয়োজন করা হবে। এর পাশাপাশি, ওষুধ ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ কর্মশালা চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যেখানে তাদের জাল ওষুধ চেনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।জাল ওষুধের সমস্যা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেটা হয়ত আমরা অনেকেই বুঝি না। কিন্তু একটা ভুল ওষুধ আমাদের জীবন-মরণ সমস্যার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তাই আজ থেকেই সচেতন হন। মোটা ডিসকাউন্টের লোভে ভুল জায়গা থেকে ওষুধ কিনবেন না। লাইসেন্সপ্রাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে ওষুধ কিনুন। qr কোড স্ক্যান করুন, প্যাকেট পরীক্ষা করুন, আর নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখুন।