What should be done to avoid urinary tract infection: ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ যারা ভুগেছেন তারাই জানেন কতটা যন্ত্রণাদায়ক এই রোগ হতে পারে। মূত্রত্যাগের চাপ বাড়ে, জননাঙ্গে ব্যথা, অস্বস্তি, রক্তপাত হয় এই রোগের কারণে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে বৃক্কেরও ক্ষতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ’য়ের জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৫০ শতাংশ নারী ‘ইউটিআই’তে ভুগছেন এবং ভালো হয়ে গেলেও তা ফিরে আসার আশঙ্কা থেকেই যায়। যদিও এই রোগ চার থেকে পাঁচবার ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ নিলেই সেরে যায়, তবে প্রতিরোধই হলো ভালো উপায়। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের আলোকে জানানো হলো ‘ইউটিআই’ থেকে বাঁচার কয়েকটি সতর্কতামূলক পরামর্শ।
মূত্রত্যাগের চাপ অনুভব করলে তা চেপে না রেখে সবসময় চেষ্টা করতে হবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। মূত্রথলি সময় মতো খালি করে ফেললে তাতে থাকা জীবাণু মূত্রনালী ও মূত্রথলিতে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারবে না। যারা শরীরের সংবেদনশীল স্থানগুলো সঠিক পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করেন না তারাই এই রোগের শিকার হন বেশি, যা খুবই স্বাভাবিক। জননাঙ্গ ও আশপাশ যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে এবং যা কিছুই শরীরের এই অংশের কাছাকাছি আসবে তাও যেন পরিষ্কার থাকে। প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে অতিরিক্ত রাসায়নিক উপাদানযুক্ত এবং অস্বস্তি তৈরি করে এমন পণ্য যাতে জননাঙ্গে না পৌঁছায়।
মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি বেশি পান করলে মূত্রত্যাগের চাপ আসবে বেশি। যা পক্ষান্তরে মূত্রথলিকে রাখবে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত। আর শরীরের সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকলে সার্বিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়ার আগে জননাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে এবং পরে অবশ্যই মূত্রত্যাগ করতে হবে। এতে মূত্রনালী থাকবে ব্যাকটেরিয়া মুক্ত। সঙ্গমের সময় জননাঙ্গে যে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করেছে, মূত্রত্যাগের মাধ্যমে তা বেরিয়ে যাবে। সঙ্গম কিংবা মূত্রত্যাগ- দুই কাজের পর জননাঙ্গ পরিষ্কারের সময় সামনে থেকে পেছনে পুরো অংশই পরিষ্কার করে মুছে নিতে হবে। জননাঙ্গ থেকে শুরু করে পায়ুপথ পর্যন্ত পুরো অংশ পরিষ্কার করতে হবে। সচরাচর ব্যাকটেরিয়া জননাঙ্গে জমে থাকে। তাই পুরো অংশ পরিষ্কার করলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালীতে পৌছে সংক্রমণ সৃষ্টি করার আশঙ্কা কমবে।
ইউটিআইয়ের লক্ষণগুলির মধ্যে আছে তীব্র ব্যথা, বারবার মূত্রত্যাগের প্রবণতা, প্রস্রাবে রক্তপাত এবং জ্বালাপোড়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি প্রাথমিক অবস্থাতেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তবে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে সহজেই এই সংক্রমণ দূর করা যায়।
আমাদের ‘খবর বাংলা’ নিউজ চ্যানেলের স্বাস্থ্য বিশ্লেষক ডা. সুমিতা রায় বলেন, “মূত্রনালীর সংক্রমণ এড়াতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পানি পান করতে হবে এবং প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না। এছাড়া সঠিকভাবে যৌন স্বাস্থ্য রক্ষা করাও জরুরি।”
বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রস্রাবের সময় মূত্রত্যাগের চাপ থাকলে তা উপেক্ষা না করে তৎক্ষণাৎ প্রস্রাব করা, শারীরিক সম্পর্কের আগে এবং পরে জননাঙ্গ পরিষ্কার রাখা, এবং জননাঙ্গ পরিষ্কারের সময় সঠিকভাবে পরিষ্কার করা এসব কাজ করতে হবে।
এছাড়া প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে খাদ্যাভ্যাসের দিকেও নজর দেওয়া দরকার। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। প্রস্রাবের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত।
মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ নেওয়া যায়, যেমন পর্যাপ্ত পানি পান করা, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, প্রস্রাব আটকে না রাখা এবং যৌন সঙ্গমের আগে ও পরে সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা। এসব নিয়ম মেনে চললে মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়।
এই বিষয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদেরও সচেতন করতে হবে। স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। এই সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়গুলি নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া দরকার।
এই বিষয়ে সমাজকর্মী সুরজিত বাগচী বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূত্রনালীর সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব নিয়ে তাদের বোঝানো হচ্ছে।”
মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য সকলের উচিত নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া উচিত তা মেনে চললে অনেকটাই নিরাপদ থাকা যায়।