...
Tuesday, June 3, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশপ্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে এশিয়া

প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে এশিয়া

Asia is increasing defense spending: এশিয়ার আকাশে যুদ্ধের মেঘ ঘনাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরের উত্তাল জলরাশি, তাইওয়ান প্রণালীর টানাপোড়েন, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ইউক্রেন-মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতির আবহে এশিয়ার দেশগুলো যেন এক অদৃশ্য আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আর এই আতঙ্ক থেকেই উঠে আসছে নতুন এক বাস্তবতা—প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছয়টি দেশ—ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম—গত দুই বছরে ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় করেছে প্রতিরক্ষা খাতে। এর ফলে এই ছয় দেশের সম্মিলিত প্রতিরক্ষা বাজেট দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৫০ কোটি ডলারে। ভাবতে অবাক লাগলেও, এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আসলে এক গভীর সংকেত বহন করছে—যেখানে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা আর শক্তির ভারসাম্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সবাইকে।

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, তাইওয়ানকে ঘিরে ক্রমাগত হুমকির বাতাবরণ, আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জটিল কূটনৈতিক সম্পর্কের আবহে, প্রতিটি দেশই নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে মরিয়া। যেমন, সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি জিন উয়েই জানিয়েছেন, “আমরা এখন এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে স্থিতিশীলতার জন্য শক্তি প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজন। প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ মানেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা।” একই সুরে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ হাসন বলেন, “আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, কিন্তু প্রতিটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো সময়ের দাবি।”

asia 8700792ed190a151541f2b72dc1cc0a0

এই ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে শুধু রাজনৈতিক অস্থিরতাই নয়, রয়েছে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার এক অদৃশ্য যুদ্ধ। যুদ্ধবিমান, ড্রোন, সাবমেরিন, ক্ষেপণাস্ত্র, নজরদারি প্রযুক্তি—সবকিছুতেই আমদানি নির্ভরতা থাকায়, এই দেশগুলো ক্রমশ নিজেদের প্রযুক্তি ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিচ্ছে। যেমন, ভিয়েতনাম সম্প্রতি একটি নতুন ড্রোন উৎপাদন প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে, যেখানে স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমান্ত নজরদারি শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফিলিপাইন তাদের সমুদ্রসীমা সুরক্ষায় নতুন যুদ্ধজাহাজের অর্ডার দিয়েছে, যা আগামী দুই বছরের মধ্যে নৌবাহিনীর বহরে যোগ হবে।

অবশ্য, এই ব্যয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশগুলোর প্রতিরক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) হার এখনো গড়ে ১.৫ শতাংশ—এক দশক ধরেই এই হার প্রায় অপরিবর্তিত। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট, সামরিক খাতে ব্যয় বাড়লেও, অর্থনীতির অনুপাতে সেই বিনিয়োগ এখনো নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার সামরিক বাজেটের এই ধারা ভবিষ্যতে আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে, যদি ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকে।

এই পরিস্থিতির প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনেও কম নয়। যেমন, ফিলিপাইনের এক স্থানীয় বাসিন্দা আলফ্রেডো সান্তোস বলেন, “প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানো মানে বাজেটের অন্য খাত থেকে টাকা কেটে নেওয়া। আমাদের শিক্ষার জন্য, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্যও তো টাকা দরকার।” একই কথা বলেন ইন্দোনেশিয়ার এক সমাজকর্মী নূর ফাতিমা, “অবশ্যই দেশের সুরক্ষা দরকার, কিন্তু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা উপেক্ষা করা ঠিক নয়।”

অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ব্যয়বৃদ্ধি হয়তো অস্থায়ী নয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, “চীনের আগ্রাসন, তাইওয়ানের ইস্যু, দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্ক, এগুলো কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবের হুমকি। এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের রক্ষার জন্য যে কোনো ব্যয় করতে রাজি।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, “প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় আর আঞ্চলিক উত্তেজনা একসঙ্গে গেলে, যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তাই সব দেশের উচিত কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া।”

দীর্ঘমেয়াদে, এই প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো যদি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, তাহলে তাদের উপর পাশ্চাত্য বা রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশগুলোর প্রভাব কমতে পারে। আবার আমদানি নির্ভরতা কমলে যুদ্ধের সময় লজিস্টিক চেইন ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও কমবে। তবে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে অর্থনৈতিক চাপ, যা হয়তো গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাঁধেই এসে পড়বে।

সবশেষে, বলা যায়, এশিয়ার প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির গল্প একদিকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনীয়তা, অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনের বাস্তব চিত্র। এই পরিস্থিতি আমাদের শেখাচ্ছে, শান্তির আশায় শক্তি প্রদর্শন এখন আর বিকল্প নয়, বরং এক অমোঘ প্রয়োজন। কিন্তু সেই শক্তির ভারসাম্য না রাখতে পারলে, এই প্রতিরক্ষা বাজেটের বোঝা একদিন সাধারণ মানুষেরই কাঁধে এসে পড়তে পারে। তাই প্রয়োজন, সতর্কতা, সংলাপ, আর শান্তির জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা—না হলে, যুদ্ধের আগুনে পুড়ে ছাই হতে পারে এই উন্নয়নের স্বপ্ন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.