Asansol B.B.B.A. closed union office : আসানসোলের বি বি কলেজের ছাত্র ইউনিয়ান অফিস হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে এখন কলেজ চত্বরে গরম পরিস্থিতি। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে রাজ্যের সব সরকারি কলেজের মতো এই কলেজেও ছাত্র ইউনিয়ান অফিস আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কলেজের প্রিন্সিপালের যৌথ অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনও ইউনিয়ান অফিসই খোলা যাবে না। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এই নির্দেশের পর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন এটা প্রশাসনের ভালো সিদ্ধান্ত, আবার কেউ বলছেন ছাত্রদের কণ্ঠ রোধ করার চক্রান্ত চলছে। আসলে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দেয় ছাত্র রাজনীতিকে ঘিরে দীর্ঘদিনের অরাজকতা, ঝামেলা ও অশান্তির প্রতিবাদে। গত কয়েক বছরে একাধিক সরকারি কলেজে ছাত্র ইউনিয়ান দখল নিয়ে সংঘর্ষ, মারধর এমনকি শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে। হাইকোর্ট মনে করে, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে জরুরি, তাই ছাত্র ইউনিয়ান অফিস আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আসানসোল বি বি কলেজে ছাত্রসংগঠনগুলির মধ্যে মূলত এবিভিপি ও এসএফআই-র আধিপত্য।
দু’পক্ষের মধ্যে অতীতে বারবার উত্তেজনা ও বচসার ঘটনা ঘটেছে, সেই প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানাচ্ছেন। কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক অরূপ মণ্ডল জানান, “এই সিদ্ধান্ত একদিক থেকে ভালো, কারণ এতে ছাত্ররাজনীতির চাপে পড়ে পড়াশোনার ক্ষতি হয় না। তবে, দীর্ঘমেয়াদে ছাত্রদের মতামতের জায়গা বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যা দেখা দিতে পারে।” অন্যদিকে, কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রিমঝিম সরকার বলেন, “ইউনিয়ন অফিস থাকলে আমরা অনেক দরকারি বিষয়ে কথা বলতে পারতাম, যেমন ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ, ক্লাসের সময়সূচি, টিউশন ফি-র সমস্যা ইত্যাদি। এখন কে শোনে আমাদের কথা?” আবার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র সেনের মত, “বেশিরভাগ সময় ইউনিয়ান অফিসে বসে থাকত নেতারা, আর সাধারণ ছাত্রদের সমস্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। বন্ধ হলে কিছুটা হলেও শান্তি থাকবে।” কলেজের প্রিন্সিপাল ডঃ অমিতাভ গাঙ্গুলি বলেন, “আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ মানছি।
কোনো রাজনৈতিক দলের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নয়। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই ব্যবস্থা।” তবে রাজনীতির একটা আড়াল থেকেই যায়। কলেজে ছাত্রসংগঠনগুলির মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় ইউনিয়ান অফিস নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে। এমনও শোনা গেছে, নতুন ছাত্র ভর্তি, হোস্টেলে সিট বরাদ্দ, বা শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ইউনিয়ান চাপ তৈরি করত। সেই জায়গায় এই নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনিকভাবে একটি বড় পদক্ষেপ। প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রদের জন্য কি বিকল্প কোনো ফোরাম থাকবে যেখানে তারা তাদের সমস্যা জানাতে পারবে? অনেক কলেজেই এর সমাধানে ‘স্টুডেন্ট গ্রিভান্স সেল’ চালু করা হচ্ছে, যেখানে সরাসরি প্রিন্সিপাল ও শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ জানানো যাবে। যদিও অনেক ছাত্রই এই ব্যবস্থায় ভরসা পাচ্ছে না।
রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ছাত্রদের মত প্রকাশের অধিকার থাকলেও কলেজ চত্বরে বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে তাদের সমস্যা শোনা যেতে পারে।” পশ্চিম বর্ধমান জেলাজুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে বি বি কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়বে অন্যান্য কলেজেও। রাজনৈতিক মহলও বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, “ছাত্র ইউনিয়ান মানেই অরাজকতা নয়, বহু ছাত্র নেতাই পরবর্তীতে সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের কণ্ঠরোধ করা গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর।” আবার বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি’র এক সদস্য বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ছাত্র রাজনীতির নামে হওয়া গুণ্ডামিকে বন্ধ করবে। আমরা চাই পড়াশোনা হোক, মারামারি নয়।” তবে এই সিদ্ধান্ত সাময়িক না স্থায়ী, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
হাইকোর্টের পরবর্তী নির্দেশ এবং শিক্ষা দপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী ভবিষ্যতে হয়তো নতুন নিয়মে খোলা হতে পারে ইউনিয়ান অফিস। তবে এখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এই পদক্ষেপ বলেই জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ চত্বরে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শিক্ষক, ছাত্র এবং অভিভাবকদের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকে বলছেন, ছাত্র ইউনিয়ান অফিসের দরজা বন্ধ হলে শিক্ষার পরিবেশ আরও শান্তিপূর্ণ হবে। কেউ আবার বলছেন, ছাত্রস্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট—রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ও ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যত এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। তাই সময়ই বলবে, এই নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এর প্রভাব কতটা ইতিবাচক।