Army helicopter suffers mechanical failure, takes flight after repairs : সোমবার সকালটা যেন ছিল একেবারেই অন্যরকম শিলিগুড়ির ঠাকুরনগরে। সকাল ১০টা নাগাদ আচমকাই কাঁপতে কাঁপতে আকাশে দেখা যায় একটি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার, কিছুটা নিচে নেমে হেলিকপ্টারটি হঠাৎ ঠাকুরনগরের খোলা মাঠে জরুরি অবতরণ করে। সেনা সূত্রে জানা যায়, হেলিকপ্টারটিতে হঠাৎই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় পাইলট প্রমাদ গোনেন এবং কোনও ঝুঁকি না নিয়ে হেলিপ্যাডে না ফিরে ঠাকুরনগরের খোলা মাঠকেই বেছে নেন জরুরি ল্যান্ডিংয়ের জন্য, কারণ আশপাশে ছিল না কোনও বড় খোলা জায়গা, এমনকি সিলভরস বা এনজেপি এলাকাও তখন হেলিকপ্টারের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ ছিল না। ঠাকুরনগরের সাধারণ মানুষ তখন নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না – যুদ্ধকালীন সিনেমার দৃশ্য যেন হঠাৎই সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে ভিড় জমে যায় – স্থানীয় বাসিন্দারা, কৌতূহলী মানুষ, মোবাইল হাতে কিছু ছবি তুলছেন তো কেউ আবার সেনা জওয়ানদের ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। তবে সেনাবাহিনীর কর্তব্যরত সদস্যরা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন, সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে তাঁরা।
প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে খবর পৌঁছে যায় বাগডোগরা এয়ারবেসে। তৎপর হয়ে ওঠে বিমান বাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রযুক্তিগত শাখা। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার ও যান্ত্রিক দল দ্রুত ঠাকুরনগরে পৌঁছে যান। ততক্ষণে শিলিগুড়ি পুলিশের এনজেপি থানার আধিকারিকরাও এলাকায় পৌঁছান। ঠাকুরনগরের এক স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ ঘোষ বলেন, “এইরকম দৃশ্য কোনওদিন দেখিনি। এত কাছ থেকে সেনার হেলিকপ্টার নামছে! প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝলাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। সেনা ভাইরা খুব ঠান্ডা মাথায় কাজ করলেন।”
ইঞ্জিনিয়ারদের তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সমস্যার উৎস চিহ্নিত করা হয় – একটি সেন্সর ত্রুটির কারণে মূল রোটর সিস্টেম ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছিল না। তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বসানো হয় এবং পাইলটদের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পরামর্শ নিয়ে সেটিকে ফের উড়ানের জন্য তৈরি করা হয়। দুপুর প্রায় ১টা নাগাদ স্থানীয় মানুষের করতালির মধ্য দিয়ে হেলিকপ্টারটি ঠাকুরনগর থেকে নিরাপদে উড়ে যায় বাগডোগরার দিকে। এই ঘটনায় কারও কোনো আঘাত লাগেনি বলেই সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাইলট সহ সকল আরোহী নিরাপদেই ছিলেন এবং হেলিকপ্টারের বাইরে নামারও প্রয়োজন হয়নি।
এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাইনর যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ায় ঠাকুরনগরে জরুরি অবতরণ করা হয়। দ্রুত তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে এবং হেলিকপ্টারটি সফলভাবে বেসে ফিরে গিয়েছে। পাইলট ও যাত্রীরা সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। শিলিগুড়ি, এনজেপি, ঠাকুরনগরের মানুষ এই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে থাকেন। কেউ কেউ আবার সেনা সদস্যদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। একজন নেটিজেন লেখেন, “আমাদের সেনা ভাইরা আবার প্রমাণ করলেন, কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁরা কিভাবে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেন। গর্ব হয় এদের জন্য।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও এটি একটি “মাইনর টেকনিক্যাল ফল্ট”, তবে ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য সেনা ও বায়ুসেনা যৌথভাবে প্রতিটি ফ্লাইটের আগে আরও কঠোরভাবে “চেক অ্যান্ড বেলেন্স” ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি নিঃসন্দেহে এক বড় সতর্কবার্তা এবং একটি সফল “ক্রাইসিস হ্যান্ডলিং”-এর উদাহরণও বটে।
এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে সেনা বাহিনী কীভাবে প্রতিটি ছোট বড় বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সদা প্রস্তুত এবং তাদের উপস্থিত বুদ্ধি ও দক্ষতা কতটা প্রশংসনীয়। একইসঙ্গে এটাও উঠে আসে যে, শিলিগুড়ি, বাগডোগরা, এনজেপি – এই অঞ্চলটি কৌশলগত দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেনার উপস্থিতি এখানে কতটা সক্রিয়। ঠাকুরনগরের বাসিন্দাদের জন্যও এটি এক আজীবন স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকল, যেখানে তাঁরা নিজের চোখে দেখলেন কিভাবে একটি সেনা হেলিকপ্টার মাটিতে নেমে আবার আকাশে উঠে গেল – সেটাও সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে।