Arjun singh: বুধবার গভীর রাতে জগদ্দল এলাকায় ঘটে যাওয়া গুলিকাণ্ড ঘিরে ফের তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্যের রাজনীতি। বিজেপি নেতা অর্জুন সিংয়ের বাড়ির সামনে গুলি চলার অভিযোগে তাঁকে জগদ্দল থানায় তলব করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল দশটার মধ্যে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু অর্জুন সিং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি থানায় যাবেন না। বরং পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন। পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পালা। অর্জুন সিংয়ের দাবি, তিনি ওই রাতে মজদুর ভবনে ছিলেন। আচমকা গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে আসতেই দেখতে পান, তাঁদের লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাচ্ছে। তখনই পাল্টা ধাওয়া করা হয় এবং ধাওয়ার সময় এক যুবক জখম হয়। এই ঘটনার পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস একেবারে উলটো অভিযোগ করেছে। তাঁদের দাবি, বিজেপি নেতা অর্জুন সিং নিজেই গুলি চালিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ যুবক সাদ্দাম, যিনি নমিত সিং-এর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূলের অভিযোগ, অর্জুন সিং নিজের হাতে গুলি চালিয়ে ঘটনাটিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। এই নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যামও। তিনি বলেন, “অর্জুন সিং নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলি চালিয়েছেন এবং এখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।” ভাটপাড়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান দেবজ্যোতি ঘোষ এই ঘটনার জন্য অর্জুন সিংকে দায়ী করে বলেন, “ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে স্মার্ট ওপিডি ভবনের শিলান্যাস হয়েছে সাংসদের তহবিলের অর্থে। সেই গাত্রদাহ থেকেই বোমা-গুলির রাজনীতি করছেন অর্জুন।” এই ধরনের রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের আদালতে তোলা হয়েছে। ঘটনাটি ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে ভয় ঢুকে পড়েছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “আগে এই এলাকায় এমন ঘটনা খুব একটা ঘটত না। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে রাতে বাইরে বের হতে গেলে আতঙ্ক কাজ করে।” অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাটি বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরও তীব্র হবে।
অর্জুন সিং সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনার দাবিতে অনড়। তিনি বলেন, “এলাকায় অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। পুলিশ যদি সেগুলো পরীক্ষা করে, তাহলে বুঝতে পারবে, আসল দোষী কে। আমার এত খারাপ অবস্থা হয়নি যে আমাকে নিজের হাতে গুলি চালাতে হবে।” অর্জুন সিং একসময় তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন এবং পরে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যেমন প্রশংসা পেয়েছে, তেমনই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন তিনি। এই ঘটনার পর রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতি যদি দ্রুত সামাল না দেওয়া হয়, তাহলে রাজ্যের রাজনীতিতে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়বে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন এবং তাঁরা চান, দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক এবং এলাকায় শান্তি ফেরানো হোক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা একে অপরের দিকে দোষারোপের আঙুল তুললেও সাধারণ মানুষ চাইছেন, তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে। এখন দেখার, পুলিশ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে পারে কি না। যদি তা না হয়, তাহলে এই ঘটনা আরও বড় আকার নিতে পারে এবং রাজনৈতিক সংঘাতের আগুনে সাধারণ মানুষের জীবন আরও বিপন্ন হয়ে উঠবে।