Tuesday, July 15, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যভারত থেকে কি কর্মী নিয়োগ হচ্ছে রাশিয়ায়?

ভারত থেকে কি কর্মী নিয়োগ হচ্ছে রাশিয়ায়?

Are workers being recruited from India in Russia?:ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একদিকে যেমন দুনিয়াজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে রাশিয়া, তেমনই যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভেঙে পড়ছে দেশের নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। মাস্কো থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শহরে এখন তৈরি হয়েছে এক চরম শ্রমিক সংকট। আর ঠিক সেই প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য—ভারত থেকে রাশিয়ায় ১০ লক্ষ কর্মী পাঠানো হতে পারে! যদিও রাশিয়ার শ্রম মন্ত্রক সরকারিভাবে এই দাবি অস্বীকার করেছে, তবুও দেশের এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই খবরে রীতিমতো আলোড়ন পড়েছে।সূত্রের খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার ইউরাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রধান আন্দ্রে বেসেদিন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি যতদূর জানি, চলতি বছরের মধ্যেই ভারত থেকে প্রায় ১০ লক্ষ দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী রাশিয়ায় নিয়োগ করা হবে। বিশেষ করে নির্মাণ শিল্প, হেভি মেশিনারি উৎপাদন ও ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে তীব্র কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। ভারতের মতো দেশ থেকে কর্মী আনাই এখন একমাত্র বাস্তবসম্মত পথ।”রাশিয়ার বর্তমান বাস্তবতা হলো—যুদ্ধ চলার কারণে দেশের যুব সমাজের একটা বড় অংশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। যার প্রভাবে কলকারখানা, রাস্তা নির্মাণ, ঘরবাড়ি তৈরির মতো বিভিন্ন প্রকল্প এখন থমকে গেছে বা চলেছে ধীরগতিতে। সেই ঘাটতি পূরণেই নাকি এমন চিন্তা। শুধু ভারত নয়, শ্রীলঙ্কা ও উত্তর কোরিয়া থেকেও কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথা উঠেছে

তবে এই বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে রাশিয়ার শ্রম মন্ত্রক। তাদের মতে, “এমন কোনও সরকারি পরিকল্পনা আমাদের নেই। এধরনের তথ্য ভিত্তিহীন।” কিন্তু রাশিয়ার অভ্যন্তরে যে শ্রমিক সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, তা তারা স্বীকার করেছে।ভারতের পক্ষ থেকেও এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার বাজারে কর্মী পাঠানোর মত কিছু খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন দিল্লির এক আন্তর্জাতিক কর্মী নিয়োগ সংস্থার আধিকারিক। তিনি বলেন, “রাশিয়া থেকে চাহিদা এসেছে বটে, কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এখনই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার থেকেও এমন কোনও অনুমোদন আসেনি।”তবে এই আলোচনা একদিকে যেমন সুযোগের নতুন দরজা খুলতে পারে ভারতের বহু বেকার যুবকদের জন্য, অন্যদিকে রয়ে যাচ্ছে একাধিক উদ্বেগের জায়গাও। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে কাজ করতে যাওয়া মানে যে একটা নিরবচ্ছিন্ন অনিশ্চয়তার মুখে পড়া—তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি ভাষাগত সমস্যা, নিরাপত্তা, কাজের পরিবেশ এবং চুক্তির স্বচ্ছতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল বলছে, রাশিয়া এখন আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় চাপে পড়ে বিকল্প দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। ভারত, যেহেতু রাশিয়ার অন্যতম প্রধান মিত্র এবং তেল, অস্ত্র সহ একাধিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক অংশীদার, সেই সম্পর্ককে আরও মজবুত করতেই শ্রমিক বিনিময়ের মতো প্রকল্প সামনে আনা হতে পারে।এই ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতিতেও প্রতিক্রিয়া মিলেছে। বাংলার প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী বলেন, “ভারত থেকে যদি সত্যিই রাশিয়ায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষ পাঠানো হয়, তাহলে সরকারকে আগে জানতে হবে –

images?q=tbn:ANd9GcTiy6EWUmAEFSQZ4cAmZFChn20dz44mkOiEVRzau3I6rweN5dLXjyX0gr9Zvoo8icQdGaM&usqp=CAU

সেখানে তাদের নিরাপত্তা, মজুরি, চিকিৎসা এবং ফিরে আসার ব্যবস্থাপত্র কীভাবে নিশ্চিত হবে।” অন্যদিকে, সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার এক অধ্যাপক মত প্রকাশ করেন, “এটা এক প্রকার নতুন যুগের ‘শ্রমিক রপ্তানি’ প্রক্রিয়া। রাষ্ট্র যদি এর মাধ্যমে নিজের বেকার সমস্যার সমাধান খুঁজতে চায়, তবে শ্রমিকদের অধিকার এবং সম্মান যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি।”জনসাধারণের মধ্যেও এই খবর নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, “দেশে যদি কাজ না থাকে, তাহলে রাশিয়াই হোক, অন্তত পেট তো চলবে!” আবার কেউ বলছেন, “যুদ্ধে জর্জরিত দেশে কে যাবে? জীবনটা আগে!” বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মধ্যেই বিভাজন স্পষ্ট।এই মুহূর্তে যদিও এটা কেবলমাত্র আলোচনার পর্যায়েই রয়েছে, তবে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এটা এক বড় সম্ভাবনার দিক। যদি রাশিয়ার সংকট প্রকট হয় এবং ভারত সরকার কূটনৈতিক স্তরে এই সুযোগকে নিরাপদ ও কাঠামোগত করে তোলে, তবে আগামী দিনে “ভারতীয় কর্মী রপ্তানির” নতুন ধারা শুরু হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments