Anubrata Mandal at the inauguration of Siuri festival : সিউড়ি উৎসব, বীরভূম জেলার অন্যতম বড় সাংস্কৃতিক উৎসব, শুধু আনন্দের নয়, বরং রাজনৈতিক মঞ্চেও পরিণত হয়েছে। এই বছর উৎসবের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের শক্তি পুনর্গঠনে তৎপর হয়েছে তৃণমূল। তিনি সিউড়িবাসীর উদ্দেশ্যে সরাসরি আবেদন করেছেন, তাঁরা যেন দলের পাশে থাকেন। তাঁর কথায় ফুটে উঠেছে লোকসভা নির্বাচনে সিউড়ি তথা বীরভূমের কিছু অংশে বিজেপির লিড পাওয়া নিয়ে দলের উদ্বেগ। উৎসবের মঞ্চ থেকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আগামী দিনে উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে আমাদের পাশে থাকতে হবে। দলের প্রত্যেক নেতাকে বলছি, আপনার ওয়ার্ডের মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাঁদের সমস্যা শুনুন।” এই বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন সাড়া ফেলেছে, তেমনি রাজনৈতিক মহলে নতুন করে জল্পনার জন্ম দিয়েছে।বিজেপি এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে। বিজেপি নেতা অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “তৃণমূল লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর এখন উৎসবের মঞ্চকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। মানুষ তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই তারা এখন নতুনভাবে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে।” অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যে স্পষ্ট, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁরা আর কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নন।
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই মনে করছেন, উৎসবের মঞ্চ রাজনীতির জায়গা নয়। তবে অনেকে আবার বলছেন, “তৃণমূল যা উন্নয়ন করেছে, তা অন্য কেউ পারেনি। অনুব্রত মণ্ডল যদি আমাদের পাশে থাকার কথা বলেন, তাহলে সেটা শুধু আমাদের ভালোর জন্যই।” সিউড়ি উৎসব শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়; এটি স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং হস্তশিল্পীদের জন্য বড় আয়ের সুযোগও বটে। প্রতিবারের মতো এই বছরও হস্তশিল্পের দোকান থেকে শুরু করে খাবারের স্টল পর্যন্ত সবখানে ভিড় দেখা গিয়েছে।উৎসবের মঞ্চে অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূলের জেলা নেতাদের ওয়ার্ডভিত্তিক মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। বীরভূম জেলা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপির উত্থান তৃণমূলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির লিড পাওয়া তৃণমূলের কাছে একটি বড় ধাক্কা ছিল। অনুব্রত মণ্ডল তাঁর বক্তব্যে এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সিউড়িবাসীর সমর্থন চেয়েছেন, যা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সাধারণ মানুষও উৎসবের আনন্দের মধ্যে এই রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, “উৎসব আমাদের ঐতিহ্যের অংশ, এখানে রাজনীতি আনার দরকার ছিল না।” আবার অনেকে বলছেন, “উন্নয়ন যে তৃণমূল করেছে, সেটা অস্বীকার করা যায় না। অনুব্রত মণ্ডল যা বলেছেন, সেটা এলাকার ভালোর জন্যই বলেছেন।” এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায়, সিউড়ি উৎসব শুধু বিনোদনের নয়, বরং এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশেও বড় ভূমিকা পালন করছে।সিউড়ি উৎসবের মতো অনুষ্ঠানগুলিকে রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা কতটা সঠিক, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাস্তবতা হলো, এমন মঞ্চে নেতাদের বার্তা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছায়। অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি এলাকার উন্নয়নের বার্তা দিতে এবং মানুষের আস্থা অর্জন করতে এই উৎসবকে ব্যবহার করেছেন। তবে এই বক্তব্য বিজেপি শিবিরে নতুন করে চর্চার জন্ম দিয়েছে।বীরভূম জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব মিলিয়ে এই সিউড়ি উৎসব একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের উদ্যোগ তৃণমূলের জন্য কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে এটা নিশ্চিত, সিউড়ি উৎসব শুধু সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের জায়গা নয়, বরং রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।