Another shootout in Malda, youth injured:-রাত তখন দশটা পেরিয়েছে, কালিয়াচকের মজমপুর গ্রামের লিচু বাগান ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসছিল। গ্রামের অন্যদের মতো করিম খান-ও দিনভর লিচু বাগানে কাজ সেরে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছিলেন। হঠাৎই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয় একের পর এক গুলির শব্দ। আতঙ্কে চারপাশ থমকে যায়। করিমের পরিবারের সদস্যরা তখন বাড়িতে, আচমকা খবর পান—“করিমকে গুলি করেছে কেউ!”। বুক ধড়ফড়িয়ে সবাই ছুটে যান লিচু বাগানে। সেখানে গিয়ে যা দেখলেন, তাতে শিউরে উঠেছে গায়ের লোম। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন করিম, চারপাশে লিচু গাছের পাতার মাঝে রক্তের দাগ। কোনো শব্দ নেই, শুধু বাতাসে ভাসছে আতঙ্কের ঘ্রাণ। করিমকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।প্রথমে পরিবার ও স্থানীয়রা ভাবতে পারেননি, কে বা কারা, কেন এমন নৃশংস হামলা চালাল করিমের উপর। করিমের বাবা আজিজুল খান বললেন, “আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। করিমের কোনো শত্রু ছিল না। কে ওকে গুলি করল? কেন করল? আমরা তো কেবল শান্তিতে থাকতে চাই।” এলাকাবাসীও হতবাক। অনেকের মতে, কয়েক মাস ধরে মজমপুর গ্রাম বেশ শান্ত ছিল। তবে হঠাৎ করে শুট আউটের ঘটনা সেই শান্ত পরিবেশকে ভেঙে দিয়ে ভয় আর আতঙ্কের সঙ্গী করে তুলেছে সকলের জীবন। প্রতিবেশী রফিকুল মিয়া বললেন, “আমরা তো ভাবছিলাম, মজমপুরের সেই আগের গুলি-চালনার দিন শেষ। এখন আবার নতুন করে এ কী শুরু হল?”

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে কয়েকটি গুলির খোসা উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, করিমকে লিচুবাগানে ডাক করে এনে পরিকল্পনা করে গুলি করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার পেছনে ঠিক কী কারণ, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কালিয়াচক থানার পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছে কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতী গোষ্ঠী, যাদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে মাদক পাচার ও জমি দখলের অভিযোগ ছিল। পুলিশ করিমের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা বা আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিবাদ ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখছে।মজমপুর এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে করিমের মতো সাধারণ যুবক, যিনি নিজের সংসারের জন্য দিনভর পরিশ্রম করে লিচু বাগানে কাজ করতেন, তাঁর উপর এমন হামলা মানুষের মনে প্রশ্ন তুলছে—এখনও কি মজমপুর নিরাপদ? এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা হাজি সেকান্দার আলি বললেন, “আমরা তো ভেবেছিলাম, পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়িতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু আবার যদি এইভাবে রাতের অন্ধকারে গুলি চলে, তাহলে আমরা কোথায় যাব? কে আমাদের নিরাপত্তা দেবে?”
মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) প্রিয়ঙ্কা মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনার সঙ্গে কোনো পুরনো গ্যাং যুদ্ধ যুক্ত কিনা, তাও দেখা হচ্ছে।প্রসঙ্গত, কালিয়াচক থানা এলাকা আগে থেকেই নানা অবৈধ কার্যকলাপের জন্য পরিচিত। মাদক পাচার, গরু পাচার, অস্ত্র ব্যবসা—এসব নিয়ে বহুবার খবরের শিরোনামে এসেছে এই এলাকা। বিশেষ করে মজমপুর গ্রাম, যা এক সময় “অস্ত্রের বাজার” নামেও পরিচিত ছিল। প্রশাসনের কড়াকড়ি আর তৎপরতায় কিছুদিন শান্তি থাকলেও, এই শুট আউটের ঘটনা ফের এলাকায় আতঙ্ক ফিরিয়ে এনেছে।

স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল মালেক বললেন, “আমরা চাই, এই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। সাধারণ মানুষ যাতে ভয় ছাড়া রাতে ঘুমোতে পারে, তার ব্যবস্থা করুক প্রশাসন। না হলে মজমপুর আবার অন্ধকারে তলিয়ে যাবে।” একই সুর শোনা গেল করিমের এক সহকর্মী মুকুল শেখ-এর গলায়, “ও খুব শান্ত ছেলে। কিছুদিন আগে একটা ছোট্ট লোন নিয়ে বাইক কিনেছিল। কখনও ভাবিনি, এরকমভাবে ওর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে।”এই ঘটনার পর কালিয়াচক থানার পুলিশ মজমপুরে রাতভর টহলদারি শুরু করেছে। এছাড়াও সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারির খবর মেলেনি। ফলে মানুষের মনে আতঙ্ক কাটছে না।এই ঘটনার ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে স্থানীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি শুট আউটের ঘটনার পেছনের দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া হয়, তাহলে কালিয়াচক-সহ পুরো মালদহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া, সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনেরও আরও তৎপর হতে হবে। না হলে, এই একের পর এক হামলার ঘটনায় মানুষের প্রশাসনের উপর আস্থা হারিয়ে যেতে পারে, যা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক অশনি সংকেত।সব মিলিয়ে, মজমপুরের করিম খানের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় আবারও আতঙ্কের ছায়া নেমেছে মালদায়। এই ঘটনার পিছনের আসল কারণ, দোষীদের পরিচয়, এবং ভবিষ্যতে প্রশাসনের ভূমিকা—সবটাই এখন সময়ের অপেক্ষা। মানুষ চায়, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, হোক সত্যিকারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, যাতে মজমপুরের মাটি আর গুলির শব্দে কেঁপে না ওঠে।