Another bomb blast in Birbhum, Kajal Sheikh at the scene : সোমবার রাতে বীরভূম জেলার কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের লায়েকবাজার এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ মনোয়ার হোসেনের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। রাত প্রায় ১০টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখার্জির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, “রাত দশটা নাগাদ আমার বাড়িতে দুষ্কৃতীরা বোমা মারে। পুলিশকে খবর দিয়েছি। শান্তিনিকেতন থানার ওসি এসেছেন। আমি চাই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক।” এই ঘটনার পর বীরভূম জেলা সভাধিপতি ফয়জুল হক ওরফে কাজল শেখ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং বলেন, “কারোর বাড়িতে বোমা পড়া বাঞ্ছনীয় নয়। বিগত দু’বছর ধরে নানুর বিধানসভায় বোমা-গুলি ছাড়াই রাজনীতি হয়েছে। হঠাৎ এখন কেন আবার বোমাবাজি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বালির টাকার বখরা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। একদিকে অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ উজ্জ্বল হক কাদেরি, অন্যদিকে কাজল শেখ ঘনিষ্ঠ স্বপন সেনের সমর্থকদের মধ্যে এই বিরোধের জেরে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষে শেখ সাত্তার আলি নামে এক তৃণমূল কর্মীর পা উড়ে যায় এবং আরও কয়েকজন আহত হন। স্থানীয়রা জানান, সোমবার ভোররাত থেকেই কাঁকরতলা থানার জামালপুর গ্রামে বোমাবাজি শুরু হয়, যা এলাকায় রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
তৃণমূল নেতা উজ্জ্বল হক কাদেরির অভিযোগ, তাঁকে খুনের উদ্দেশ্যে সোমবার রাতে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মহিবুল শেখসহ বেশ কয়েকজন কালো শেখের বাড়িতে জড়ো হন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত কয়েকদিন ধরে ওই বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র ও বোমা মজুত করা হচ্ছিল। অন্যদিকে, কালো শেখের অভিযোগ, সোমবার রাতে তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে উজ্জ্বলের অনুগামীরা পরপর বোমা ছোড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কালো শেখসহ আটজনকে উদ্ধার করে এবং পরে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায়।
বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি কাজল শেখ বলেন, “বীরভূম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের একটাই গোষ্ঠী, সেটা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী। আমরা সকলেই তৃণমূল করি।” তিনি আরও জানান, “লোকসভার সময় বীরভূম জেলাকে একাধিক ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেখানকার দায়িত্ব রয়েছে কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষের ওপর। উনিই একমাত্র বলতে পারবেন ঠিক কী ঘটেছে।”
এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে এবং এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমন্বয় ও শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বীরভূমের এই বোমাবাজির ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ মণ্ডল বলেন, “এলাকায় এই ধরনের ঘটনা আমাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।” স্কুলশিক্ষিকা মীনা দাস জানান, “শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।”
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপর রয়েছে। তবে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমন্বয় ও শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বালির টাকার বখরা নিয়ে বিরোধ এই ধরনের সহিংস ঘটনার মূল কারণ। তারা মনে করেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই বিষয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সমাধান খুঁজে বের করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
সামগ্রিকভাবে, বীরভূমের এই বোমাবাজির ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক দল, প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণ একসঙ্গে কাজ করে এই ধরনের সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার।